দালালের খপ্পরে পড়ে অনেকের জীবন নষ্ট হয়ে যায়। তেমনি একটি ঘটনার শিকার হয়েছে রবিন শিকদার সহ আরও ছয়জন। তিন দফায় সাড়ে ৯ লাখ করে মোট ২৮,৫০,০০০ টাকা দিয়েও রেহাই পায়নি কেউ। ঘটনাটি ঘটেছে মাদারীপুরে। ঘটনা সুত্রে জানা যায় লিবিয়ায় নেওয়ার জন্য প্রায় সাত জনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয় দালাল চক্র। একপর্যায়ে তাদেরকে লিবিয়ায় পাঠিয়ে দেয়। তবে সেখানে যাওয়ার পরেই ঘটে যায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।
ওই ৭ যুবককে লিবিয়ায় আটক করে মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ উঠেছে পরিবারের বিরুদ্ধে। ৫ মাস আগে মাদারীপুরের সাত যুবক লিবিয়া পাড়ি দিয়ে ইতালি যান। পরিবারের অভিযোগ, লিবিয়ায় আসার পর থেকে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
নিখোঁজদের স্বজনরা জানান, লিবিয়ায় ওই যুবকদের জিম্মি করে তাদের স্বজনদের ভিডিও কল করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। টাকা না দিলে নির্যাতনের হুমকি দেয় জিম্মিকারীরা।
নিখোঁজ হওয়া সাত যুবক হলেন- মাদারীপুর সদর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের আবুল হোসেন হাওলাদারের ছেলে রাকিব হাওলাদার, আব্দুল হাকিম খলিফার ছেলে এলেম খলিফা, শিরখাড়া ইউনিয়নের রব সিকদারের ছেলে রবিন সিকদার, বাহাদুরপুরের মিঠাপুর গ্রামের ফুকু বেপারীর ছেলে জসিম বেপারী। ইউনিয়ন, মিঠাপুর ইউনিয়নের আসমত আলী মোল্লার ছেলে ইব্রাহিম মোল্লা মো. , রাজাইর রুবেল ও ইশিবপুর গ্রামের হায়দার হোসেন। তাদের বয়স 19 থেকে 21 বছরের মধ্যে।
এই পরিবারের দাবি, তাদের কেউ মুক্তিপণ দিতে পারে না। এ অবস্থায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। তারা তাদের সন্তানদের দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, কয়েক মাস আগে রবিন সিকদার ইতালিতে চলে যান। তাকে লিবিয়ার দালালরা জিম্মি করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
তার মা নুরজাহার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “দালাল হারুন আমার ছেলেকে জিম্মি করে ১০ লাখ টাকা দাবি করছে। এখন এত টাকা কোথায় পাব? হারুন দালালের মাধ্যমে ৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ইতালি পাঠানোর কথা ছিল। ওই টাকা একবার দিয়েছিলাম। নানাভাবে শারীরিক নির্যাতন। ওই দৃশ্য মোবাইল ফোনে পাঠায়। এরপর জমি-বাড়ি বিক্রি করে ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিলে আমরা কয়েকদিন যোগাযোগ করতে পারি। যোগাযোগ বন্ধ ছিল। কিছুক্ষণ।হঠাৎ আবার ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।আবারও আমার ছেলেকে মারধর করে মোবাইল ফোনে ভিডিও রেকর্ড করে ইমোতে কল করে আমাদের দেখায়।আমরা এখন অসহায়।অর্থ পরিশোধ না করায় ছেলের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এখন আমার ছেলেকে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছে জোরালো দাবি করছি।আমি আমার ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে চাই।
লিবিয়ায় বন্দী রবিন সিকদারের চাচা ইব্রাহিম মোল্লা জানান, হারুন দালালের মাধ্যমে লিবিয়ায় পৌঁছানোর কয়েকদিন পর ২৬ মে রবিন সিকদার ফোন করে জানান, দালাল হারুন তাকে ও অন্য কয়েকজনকে অন্য মাফিয়ার কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। এখন আরও ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা না দিলে মাফিয়ারা তাকে জীবন্ত মেরে ফেলবে। এখন আমরা মরিয়া এবং আমরা সরকারের সাহায্য চাইছি।
নিখোঁজদের পরিবারের দাবি, ইতালি যাওয়ার জন্য সদর উপজেলার চন্ডিবর্দী এলাকার হারুন দালালের সঙ্গে কথা হয়। তাদের লিবিয়া হয়ে ইতালিতে নিয়ে যাওয়া হবে বলে সম্মত হয়েছে। জনপ্রতি ৯.৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী ৭ যুবকের পরিবার হারুনকে সাড়ে ৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকা দেয়। এরপর তারা দেশ ছেড়ে লিবিয়া চলে যান। এরই মধ্যে তারা লিবিয়ায় পৌঁছে যায়। সেখান থেকে ২৬ মে ইতালি যেতে সাগর পাড়ি দেওয়ার কথা বলে জিম্মি করা হয়।
মাদারীপুর সদর থানার ওসি মো. মানব পাচারের ঘটনায় ভুক্তভোগির পরিবার মামলা করলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান মনোয়ার হোসেন চৌধুরী।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার জাগা জমি বিক্রি করে নিজের ছেলেকে উদ্ধার করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছেন। তবে এবার তারা নিরুপায় কারণ সর্বস্ব খুইয়েছেন তারা। সরকারের কাছে আকুল আবেদন করে সংবাদমাধ্যমকে ছেলেকে উদ্ধার করা আকুল জানিয়েছেন।