আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির রাজনীতির কবরস্থানে যাওয়ার সময় এসেছে। গতকাল বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটের সামনে আয়োজিত কৃষক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
১৯৯৫ ও ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের হাতে নিহত শহীদ কৃষকদের স্মরণে বাংলাদেশ কৃষক লীগ এই গণসমাবেশের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ। সঞ্চালনা করেন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপি।
এই অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি বিএনপির কাছে জানতে চাই, ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম কোথায়? fake আলটিমেটাম। এক দফা ভুয়া, বিএনপি ভুয়া। ৩২ দল ভুয়া, আন্দোলন ভুয়া। তারা বলছেন, শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠানো হবে। আমি আজকের এই সমাবেশে ঘোষণা করতে চাই, সেই দিন বেশি দূরে নয় যেদিন বিএনপির রাজনীতি কবরস্থানে যাবে। তারা বলছেন, তারা অবৈধ সরকারের অনুমতি নেবেন না। যদি বলেন বেআইনি, তাহলে খালেদা জিয়া মুক্তির আবেদন করলেন কেন? সভা হলেও সরকারের অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি না নিলে খবর আছে। আপনি অনুমতি ছাড়া পালানোর একটি পথও পাবেন না। তিনি বলেন, যাদের হাতে ১৫ আগস্টের রক্তের দাগ, ৩ নভেম্বরের রক্ত, ২১ আগস্টের রক্ত, বাংলার কৃষক, শ্রমিক, অবলা নারী, অবুঝ শিশুর রক্ত।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি দুর্নীতি ও অর্থপাচারের চ্যাম্পিয়ন। তাদের হাতে বাংলাদেশ নিরাপদ নয়। দেশের গণতন্ত্র নিরাপদ নয়। জনগণের স্বচ্ছ ভোট নিরাপদ নয়। তাদের হাতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিরাপদ নয়। তারা হত্যা ও সন্ত্রাসের বাংলাদেশ চায়। তারা দুর্নীতি ও স্বৈরাচারের বাংলাদেশ চায়। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রস্তুতি নিন খেলা হবে। জোরদার খেলা। সামনে নভেম্বর। এরপরে ডিসেম্বর। তারপর জানুয়ারি। ফাইনাল খেলা।কৃষক ভাইয়েরা প্রস্তুত হয়ে যান। নেত্রী আসছেন। যখনই ডাক দিবে আপনাদেরকে রাস্তায় নেমে আসতে হবে।
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এই শহরের রাস্তা দখল করার অধিকার আপনাদের নেই। যারা দখল করবে তাদের খবর আছে। যারা আগুন নিয়ে আসবে তাদের হাত আমরা পুড়িয়ে দেব। যারা ভাঙচুর করতে আসবে তাদের হাত ভেঙ্গে দেব।
শেখ হাসিনাকে ছাড়া বাংলাদেশে গণতন্ত্র নিরাপদ নয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আপনাদের ভাত কাপড়ের ব্যবস্থা নিরাপদ নয়। শেখ হাসিনা আছেন বলেই বাংলাদেশ শান্তিতে আছে। তিনি বলেন, কী সুন্দর বাংলাদেশ। বাড়িতে বিদ্যুৎ। খালেদা জিয়ার আমলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। দেশের কোথাও এখন লোডশেডিং নেই। কয়েকদিন পর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল মেট্রোরেল। কি সুন্দর কম খরচে মতিঝিল থেকে উত্তরা। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফার্মগেট থেকে বিমানবন্দর মাত্র 8 থেকে ১০ মিনিটের দূরত্বে। সন্ধ্যায় এক্সপ্রেসওয়েতে দাঁড়ালে কী সুন্দর আলোয় ঝলমল করে বাংলাদেশের ছবি। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে এসেছেন। আমরা বাংলাদেশকে কালো হাতে ছাড়ব না।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে অন্যান্য শ্রেণি-পেশার মানুষের পাশাপাশি কৃষকরাও এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিএনপি জনজীবনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারের দাম কমিয়ে ১০ লাখ সার্টিফিকেট মামলা তুলেছেন। কৃষির উন্নয়নে এমন অনেক উদ্যোগ রয়েছে তার।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি বলেন, বিএনপি-জামায়াত অবৈধভাবে পাচারের জন্য কৃষকদের সার গুদামে রাখে। ১৯৯৫ সালে, কৃষকরা চাষের জন্য সার চাইতে গেলে বিএনপি-জামায়াত সার বিনিময়ে বুলেট উপহার দিয়েছে। নিহত হন ১৯ জন কৃষক। দেশের মানুষ এই খুনিদের ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, সারের ন্যায্যমূল্যের দাবিতে আন্দোলনরত কৃষকদের বুকে যারা পাখির মতো গুলি করেছে তাদের বাংলার কৃষকদের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। তারা ক্ষমাও করতে পারে।
সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, ‘বিএনপি আর মানুষ হইলো না! পায়ের নিচে মাটি নাই, কোমরে জোর নাই। তাদের সাধের পাকিস্তান আর আসবে না।’
আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি বলেছেন, কৃষিবান্ধব নেত্রী শেখ হাসিনা প্রতি বছরই কৃষি খাতে কৃষকদের ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছেন। অক্টোবরের মধ্যে এই সরকারকে পতনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে বিএনপি। শুধু অক্টোবরেই নয়, আগামী নির্বাচন পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব। যারা অগ্নিসংযোগের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যারা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের পরিকল্পনা করছে তাদের সব পরিকল্পনা আমরা নস্যাৎ করে দেব।
বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে যারা অপশক্তি চায় তাদের প্রতিহত করতে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।
আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন নাহার লাইলী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্মল চ্যাটার্জি, মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন রুহুল এমপি, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, কৃষক লীগের সহসভাপতি শরীফ আশরাফ ওয়ালী, মাহবুব-উল আলম শান্ত, আকবর আলী চৌধুরী, হোসনে আরা বেগম এমপি, আবদুল ওয়াদুদ, আবদুল লতিফ তারিম, নজরুল ইসলাম, জয়নাল আবেদীন, আবুল হোসেন, সাখাওয়াত হোসেন সুইট, অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম হিরণ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটু, অ্যাডভোকেট শামীমা আক্তার খানম, আজম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী জসিমউদদীন, আসাদুজ্জামান বিপ্লব, ড. মো হাবিবুর রহমান মোল্লা, শাকিল উজ জামান শাকিব, নূরে আলম সিদ্দিকী, অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম পানু, হিজবুল বাহার রানা, কোষাধ্যক্ষ নাজির মিয়া, ভারপ্রাপ্ত প্রচার সম্পাদক নুরুল ইসলাম বাদশা, দফতর সম্পাদক রেজাউল করিম, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক হালিমা খাতুন, বেসরকারি সংস্থা বিষয়ক সম্পাদক মিরুল ইসলাম, কৃষক লীগের আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট জহির উদ্দিন লিমন, ঢাকা জেলা উত্তর কৃষক লীগের আহ্বায়ক মহসীন মিয়া, ঢাকা মহানগর উত্তর কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক হালিম খান।
জামালপুরের মেলান্দহের শহীদ কবিরের ছেলে মুনকির জানান, ১৯৯৫ সালে এক বস্তা সারের দাম ছিল ১৮৬ টাকা। বিএনপি-জামায়াত সরকার সারের দাম ১২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫০০ টাকা করে। যা ছিল বাংলার কৃষকের সাধ্যের বাইরে। আমার বাবা মেলান্দে গিয়েছিলেন সারের দাবিতে। কিন্তু তারা আমার বাবাকে লাশ বানিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছিল। প্রিয় নেতা মির্জা আজম এমপি ছোটবেলা থেকেই পিতৃহীন আমাকে মানুষ করেছেন। তিনি নিয়মিত আমার পরিবারের যত্ন নিতেন। তাকে ছাড়া আমি আজ হয়তো আপনাদের সামনে কথা বলতে পারতাম না। আমার বাবার রক্ত নষ্ট হয়নি। এখন আর বাংলার কৃষককে সারের জন্য বুকের রক্ত দিতে হয় না। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।