শেষ পর্যন্ত ঘটনার মোর ঘুরেছে বুয়েটের মেধাবী ফারদিনের হ’ত্যা’র’।জানা গেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পার্শ্ব (২৩) ৩০ মিনিটের একটি হ’ত্যা’কা’ণ্ডের মিশন ছিল। এই তথ্য প্রকাশ হবার পর থেকেই সব খানে এ নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন আলোচনা সমালোচনা।
ঘটনার দিন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চাঁনপাড়া বস্তিতে ৪ নভেম্বর দিবাগত রাত ২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ফারদিনকে পি’টি’য়ে হ’ত্যা’ করা হয়। পরে তার নিথর দেহ বস্তির পাশে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। তবে ফারদিন কীভাবে চনপাড়া বস্তিতে গেলেন, কারা তাকে সেখানে নিয়ে গেল, তাকে মা’র’ধ’র করা হয়েছে কি না, এসব বিষয় এখনো পরিষ্কার নয়। সন্দেহভাজন চনপাড়া বস্তির পাঁচ শীর্ষ সন্ত্রাসীকে খুঁজছে তদন্তকারী সংস্থা। তাদের গ্রেফতার করা গেলে ফারদিন হ’ত্যা’র’ সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
ফারদিন হ’ত্যা’কা’ণ্ডে’র’ তদন্তকারী পুলিশের একটি সংস্থার শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রূপগঞ্জ এলাকায় বুয়েটের একটি প্রকল্প রয়েছে। ফারদিন এর আগে তিনবার রূপগঞ্জের চাঁনপাড়া বস্তিতে গিয়েছিলেন। সেখানে যাওয়ার কারণ ছিল তার একাডেমিক জরিপ। কিন্তু রাতে সেখানে যাওয়া হয়নি।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, চনপাড়া বস্তির অপরাধ জগৎ আবর্তিত হচ্ছে ‘মা’দ’ক ব্যবসাকে ঘিরে। অপরাধীরা নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে অপহরণ করে এই বস্তিতে নিয়ে যায় এবং মুক্তিপণ আদায় করে। মাঝে মাঝে সেখানে খু’নে’র’ ঘটনাও ঘটে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট আরেকটি সূত্র জানায়, অপরাধীদের স্বর্গ হিসেবে পরিচিত চনপাড়া বস্তিতে ডাকাত, চক্রের সদস্য, অপহরণকারী ও মাদক ব্যবসায়ীদের উপদ্রব রয়েছে। ৬ টি গ্রুপ বস্তির অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের ধরতে চানপাড়া বস্তিতে অভিযান চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা। ৬টি গ্রুপের একটির নেতৃত্বে ছিলেন শাহিনুর রহমান ওরফে সিপি শাহীন। গত বৃহস্পতিবার র্যাবের সঙ্গে ব’ন্দু’ক’যু’দ্ধে’ তিনি নি’হ’ত’ হন। এর পর সন্ত্রাসীদের অন্যান্য দল আত্মগোপনে চলে যায়।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বরিশালের বানারীপাড়া থেকে র্যাব-৬ এর একটি দল চানপাড়া বস্তির আরেক গ্রুপের প্রধান রায়হানকে গ্রেপ্তার করে। এ বিষয়ে জানতে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাড়া দেননি।
এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিবি) শীর্ষ সন্ত্রাসী রায়হানকেও খুঁজছে বলে জানিয়েছেন ডিবির একজন তদন্ত কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, আমরা রায়হানের অবস্থান নিশ্চিত করেছি এবং আটকের জন্য রওনা হয়েছি। তবে অন্য একটি বাহিনী তাকে আটক করেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত চনপাড়া বস্তিতে অভিযান চালিয়েছি। সেখানে হ’ত্যা’কা’ণ্ড ঘটতে পারে বলে আমাদের ধারণা। কিন্তু কিছুই নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। কারণ ফারদিন রামপুরা থেকে কোথায় গেছে তার কোনো সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা যায়নি। এ ছাড়া চানপাড়া বস্তির আশপাশে কোথাও সিসিটিভি নেই। ফলস্বরূপ, আমরা সমস্ত দিক বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করছি।
ডিবির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেছেন, বুয়েট ছাত্র ফারদিনকে ঢাকার কোনো স্থানে ‘হ’ত্যা’ ‘করা হয়ে থাকতে পারে।
ফারদিন ‘হ’ত্যা’ মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা ডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, ৪ নভেম্বর রামপুরা থেকে চানপাড়া বস্তিতে যাওয়ার আগে ফারদিন ছয়জনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। শেষ কথা হয় তার সিনিয়র ছাত্র শীর্ষ সালিশের সঙ্গে। রাত ১০টা ৫২ মিনিটে, রাত ১০টা ৫৩ মিনিটে। এবং রাত ১১:৩০, ফারদিন টপকে ডাকল। ফারদিন প্রতিবার ১০ থেকে ২০ সেকেন্ড ধরে শীর্ষের সাথে কথা বলে। সেই ভয়েস রেকর্ডগুলো সংগ্রহ করার পর দেখা গেছে তারা বিতর্কের কথা বলেছেন। তবে ফোনের হোয়াটস অ্যাপে অন্যদের সঙ্গে কথোপকথনের তথ্য পেয়েও কী বলা হয়েছে তা জানতে পারেনি ডিবি।
ডিবির মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) রাজীব আল মাসুদ গতকাল বলেন, ‘ফারদিন হত্যার বিষয়ে আমরা এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করতে পারিনি। নিখোঁজের তিন দিন পর নিথর দেহ উদ্ধার করায় তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে ফারদিনের অবস্থান সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। আমাদের সব টিম চব্বিশ ঘন্টা কাজ করছে। আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রহস্য উদঘাটনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।’
ডিএমপির রামপুরা থানায় ফারদিনের বাবা কাজী নুরুদ্দিন রানার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ফারদিনের বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরা রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনেও হ’ত্যা’র’ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি বলে জানিয়েছেন ডিসি রাজীব আল মাসুদ।
তিনি বলেন, “আমরা বুশরার সাথে ফারদিনের দুই বছরের চ্যাটের ইতিহাস খুঁজে পেয়েছি। সেখানে অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া যায়নি। তাদের বেশিরভাগ আলোচনাই পড়াশোনা এবং বিতর্ক নিয়ে। এমনকি তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।”
শনিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, ‘বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিনের মোবাইল ফোনের তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এবং বিভিন্ন স্থানে তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। আমার মনে হয় তাকে হয়তো ঢাকার কোথাও হত্যা করা হয়েছে। মোবাইল লোকেশনেও আমরা নারায়ণগঞ্জ খুঁজে পেয়েছি। সব মিলিয়ে তদন্তের স্বার্থে সুনির্দিষ্ট কিছু বলতে পারছি না।
তিনি বলেন, ফারদিন ঢাকা শহরে যেখানেই গেছেন, আমরা বিভিন্ন প্রযুক্তিগত মাধ্যমে সেসব জায়গা খুঁজে পেয়েছি।
বুয়েটের ছাত্র ফারদিন ৪ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ। পরদিন তার বাবা কাজী নুরউদ্দিন রাজধানীর রামপুরা থানায় নিখোঁজ সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। গত ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের নিথর দেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। ৯ নভেম্বর রাতে ফারদিনের বাবা বাদী হয়ে ফারদিনের বান্ধবী বুশরাসহ অজ্ঞাতদের আসামি করে রামপুরা থানায় ‘হ’ত্যা’ ও নিথর দেহ গুম’ করার অভিযোগে মামলা করেন।
প্রসঙ্গত, এ দিকে নতুন করে বুয়েটের এমন একজন মেধাবী ছাত্রের প্রয়াণ মেনে নিতে পারছে না কেউ । আর এই কারনে সারা দেশে তার এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন সকলেই। বিশেষ করে ফারদিনের পরিবার এই ঘটনায় দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন।