বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে একের পর এক বিতর্কে জড়াচ্ছেন। তাদের দায়িত্বে নির্বাচন ব্যবস্থাকে সুসংগঠিত করে সব দলের অংশগ্রহনের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এখনো পর্যন্ত কোনো বিশ্বাসের জায়গা তৈরী করতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো থেকে শুরু করে সুশীল সমাজের কাছে। তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচন করেছেন নির্বাচন পদ্ধতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে। এতে ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো বেশির ভাগই বিপক্ষে কথা বললেও নির্বাচন কমিশন ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোটের সিদ্ধান্ত নেন। এতে নতুন করে আবারও বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
একেক সময় একেক কথা বলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিজেরাই নিজেদের বিতর্কিত করছে। যেখানে রোডম্যাপে বলা আছে, রাজনৈতিক দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) সিদ্ধান্ত; সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই উল্টো কথা বলে বিতর্ককে আরও উসকে দেয়া হলো। এনটাই মত নির্বাচন বিশ্লেষকদের। আবার বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা অবস্থায় ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট করতে চাওয়া অদূরদর্শিতা হবে বলেও তাদের মত।
ইভিএম নিয়ে অনেককেই আমরা আস্থা আনতে পারছি না। ইভিএম নিয়ে সংকট থাকবেই। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা সেই সিদ্ধান্ত নেব। সংলাপের শেষ দিন গত ৩১ জুলাই ইভিএম নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের বক্তব্য ছিল এমন।
এর ক’দিন বাদে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। সংলাপে রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্ত হবে বলে সে সময় বলা হয়েছিল। গত ২৪ আগস্ট সিইসি বলেন, সব দলের মতামত বিবেচনা করে কমিশন শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, ১৫০ ও ১৫০ এভাবে ভাগ করে ইভিএম ব্যবহার করা হবে।
তবে দুই সপ্তাহের মাথায় আবার ভিন্ন সুরে কমিশন। রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘কারো ইচ্ছায় নয়; বরং কমিশনের ইচ্ছাতেই ভোট হবে ইভিএমে। ইভিএমের প্রতি আমাদের আস্থা এসেছে। তাই কোনো দল রাজি না হলেও ইভিএমে নির্বাচন হবে।
নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে কমিশন চাইলে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে একই বিষয়ে একেক সময় একেক অজুহাত আস্থা-অনাস্থার দোলাচলে থাকা এ কমিশনকে আরও বিতর্কিত করছে। সে ক্ষেত্রে এর দায়ভার নির্বাচন কমিশনের ওপরই বর্তায় বলে মনে করেন তারা।
নির্বাচন বিশ্লেষক মুনিরা খানম বলেন, ‘তারা নিজেরাই বিতর্ক সৃষ্টি করছে। পরে কি হবে বা হবে না সেটা অন্য বিষয়। কিন্তু তাদের এমন বক্তব্যের কারণে আস্থাটা নষ্ট হলো।
আরেক নির্বাচন বিশ্লেষক ড. আবদুল আলীম বলেন, শুধু রাজনৈতিক দল নয়, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের (জনগণ থেকে শুরু করে সবার) এক ধরনের ঐকমত্য থাকতে হবে। রাজনৈতিক দলের আলোচনার ভিত্তিতে হোক বা না হোক, এখানে বিশাল আস্থার ঘাটতি রয়েছে। এসব বিষয়ে কাজ না করে ইভিএম ব্যবহার করলে বিতর্ক আরও বাড়বে।
এদিকে সম্ভব হলে ১৫০ নয় ৩০০ আসনেই ইভিএমে করার বিষয়টিও সহজভাবে নিচ্ছেন না তারা। বিশেষ করে বৈশ্বিক এ অর্থনৈতিক মন্দায় এমন চাওয়া অযৌক্তিত বলছেন তারা। তবে চলমান বাস্তবতায় সরকার এমন সিদ্ধান্তে মত দেবে না বলেও মনে করেন তারা।
এ বিষয়ে মুনিরা খানম বলেন, দেড়শটি আসনের জন্য তাদের কয়েক হাজার কোটি টাকা আনতে হবে। আর যদি ৩০০ আসনে ইভিএম করতে চায়, তাহলে এটা বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার সময় কতটুকু সম্ভব!
উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘোষিত রোডম্যাপে ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতাকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছে নির্বাচন কমিশন।
প্রসঙ্গত, বিতর্কিত বক্তব্যের মাধ্যমে তাদের প্রতি আস্থা হারিয়েছে রাজনৈতিক দলসহ বৃহত্তর একটি জনগোষ্ঠি বলে মন্তব্য করেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। এভাবে তাদের কর্মকান্ড চলতে থাকলে সামনে নির্বাচন নিয়ে সংকট তৈরী হবে।