শিক্ষা এমন একটি জিনিস যেটা মানুষের ভেতর থেকে সত্যিকারের মানুষটিকে বের করে নিয়ে আসে। প্রকৃত শিক্ষা ছাড়া একটি মানুষ কখনই আদর্শ মানুষে পরিণত হতে পারে না। তাই মানুষের নৈতিক ও বিচারবুদ্ধিজনিত উন্নতির জন্য শিক্ষা যে কতটা দরকারী সেটা আসলে ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। একজন শিক্ষিত মানুষ ও একজন অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে রয়েছে অনেক পার্থক্য। সম্প্রতি জানা গিয়েছে দুই আ.লীগ নেতার হয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিল ২ কিশোর।
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় দুই কিশোরকে পরীক্ষা দেওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাদের দুই কাউন্সিলরকে বহিষ্কার করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার চরজশোহরদী ইউনিয়নের চাঁদহাট গ্রামে অবস্থিত সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমাম রাজী এ রায় দেন।
ওই দুই কাউন্সিলর হলেন- পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজল শেখ (৪৫) ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শরিফুল ইসলাম ওরফে আমির (৪৪)। কাউন্সিলর কাজল শেখ এক নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মো. কাউন্সিলর শরিফুল ইসলাম দুই নম্বর ওয়ার্ডের সহসভাপতি।
আদালত সূত্র জানায়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরীক্ষা কেন্দ্রে নানা অনিয়মের খবর শুনে আদালত অভিযান চালায়। আদালতের উপস্থিতি টের পেয়ে শিক্ষকরা পরীক্ষা কেন্দ্রের একটি কক্ষ থেকে বই নিয়ে পালাতে শুরু করলে কয়েকজন পরীক্ষার্থী পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় আনুমানিক ১৬/১৭ বছর বয়সী দুই কিশোরকে পরীক্ষার হল থেকে বের হতে দেখা যায়।
ইউএনওর ভাষ্যমতে, দুই কিশোরকে চ্যালেঞ্জ করা হলে তারা বলে যে তারা পরীক্ষার্থী নয়। তারা একটি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। তারা মুকসুদপুর পৌরসভার ১ ও ২ নং ওয়ার্ডের দুই কাউন্সিলর পদে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।
(ইউএনও) ইমাম রাজি বলেন, এর ফলে প্রার্থী হওয়া দুই কাউন্সিলরকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া নাবালক হওয়ায় প্রক্সি দেওয়া দুই কিশোরকে জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ওই কেন্দ্রের তিন শিক্ষককে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্র সচিবের কাছে সুপারিশ করা হয়।
তবে মুকসুদপুর পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শরিফুল ইসলাম দাবি করেন, তিনি কাউকে প্রক্সি পরীক্ষা দেননি। নিজে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।
পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজল শেখ (৪৫) বহিষ্কারের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, লিখিত অভিযোগে তাদের দুই কাউন্সিলরকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের জন্য কেউ প্রক্সি পরীক্ষা দিচ্ছিল না। তিনি দাবি করেন, আমরা নিজেরাই পরীক্ষা দিচ্ছি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কেন্দ্র সচিব সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবতাব মন্ডল জানান, শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে ইউএনও তার প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে প্রক্সি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা দেওয়ায় দুই কাউন্সিলরকে বহিষ্কার করেন। এ ছাড়া পরীক্ষা কেন্দ্রের তিন শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করার সুপারিশ করা হয়।
প্রসঙ্গত, যখন কোনো পড়ালেখা না জানা মানুষ জনগনের প্রতিনিধি হয় তখন তার দ্বারা ভবিষ্যতে কি হতে পারে সেই সমাজের সেটা আসলে ধারণা করা বেশ কঠিন কিছু নয়। মূলত একজন পড়ালেখা না জানা মানুসের জ্ঞানের পরিধি অনেক কম হয়ে থাকে এবং আচার-ব্যবহার মাঝে ততটা শালীনতা বা নম্রতা থাকেনা। শিক্ষিত হওয়া প্রত্যেক মানুসের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য।