বাংলাদেশে এখন চলছে চরম অর্থনৈতিক সংকট। আর এই সংকটের আচ পাওয়া যায় দেশের জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি থেকে। বিশেষ করে বাংলাদেশে এখন তেলের দাম এবং তেলের মজুদ নিয়ে বিপিসির বিরুদ্ধে উঠেছে নানা ধরনের অভিযোগ। এ দিকে এবার বিসিপির জমা ২৫ হাজার কোটি টাকা এবং সেই টাকার তছরুপ নিয়ে একটি লেখনি লিখেছেন জিয়া হোসেইন। আর স্যোশাল মিডিয়ায় সেই লেখাটি শেয়ার করে পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব আসিফ নজরুল।
নিম্মে লেখনিটি তুলে ধরা হলো হুবহু:
zia Hasssan এর নীচের পোস্টটি পড়ুন। আমার আপনার কাছ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা আদায় করে কিভাবে তা নয়ছয় করা হচ্ছে – এটা কিছুটা হলেও বুঝতে পারবেন।
——————————–
আপনার পকেট থেকে কেটে রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিপিসি তার ২৫ হাজার কোটি টাকা যে ব্যাংক গুলোতে রেখেছে, সেই লিস্টের দিকে তাকিয়ে আমার অনুভূতি হচ্ছে- বিপিসি যদি এই টাকা ফেরত চায়, এই লিস্টের অধিকাংশ ব্যাংক সেইটা ফেরত দিতে পারবেনা।
এই লিস্টের মধ্যে স্বল্প মেয়াদি এফডিআরের প্রথম দশটার মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাদে সব গুলোর অবস্থা খারাপ।
যে ব্যাংক গুলোতে বিপিসি টাকা রেখেছে তার মধ্যে প্রথম দেখতে পাচ্ছি, ইউনিয়ন ব্যাংকের নাম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি ইন্সপেকশনের পরে জানিয়েছে, ইউনিয়ন ব্যাংকের ৯৫% ঋণ শ্রেণীকরণ করতে হবে। অর্থাৎ তাদের ৯৫% অনাদায়ী। (প্রথম আলো , ৩০ জুন ২০২২)। আমার এসেস্মেন্টে বিপিসির এই ৩৫৯ কোটি টাকা নিঃসন্দেহে ফেরত আসবেনা।
লিস্টের দ্বিতীয়তে আছে ৬২৪ কোটি টাকা নিয়ে ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক। পত্রিকার রিপোর্ট অনুসারে, এই ব্যাংকটিও প্রভিশন সংরক্ষণ না করে কৃত্রিম মুনাফা দেখাচ্ছে।
বিপিসির এই ২৫ হাজার কোটি টাকা যে ব্যাংক গুলোতে রাখা হয়েছে তার প্রতিটার ফিনান্সিয়াল অবস্থা আমরা এনালাইজ করবো না। কিন্তু, দেখে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের আর্থিক ভাবে নাজুক ব্যাংক গুলোতে বেছে বেছে বিপিসি টাকা রেখেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্ট অনুসারে, ২০২১ এর জুনে ১৮টা ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল।
যার মধ্যে আছে, অগ্রণী, বেসিক, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংক, এবি, বাংলাদেশ কমার্স, আইসিবি ইসলামিক, সাবেক ফারমার্স বা পদ্মা ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি, গ্লোবাল ইসলামী, ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি, এনআরবি কমার্শিয়াল, পূবালী ও ইউনিয়ন ব্যাংক।
মূলধন ঘাটতেই থাকা, প্রায় প্রতিটা ব্যাংকেই বিপিসি টাকা রেখেছে। এজ এফ বিপিসি বেছে বেছে এই ব্যাংক গুলোকে খুজে নিয়েছে।
২৫ হাজার কোটি টাকা, অনেক বড় অংকের টাকা।
আগামীতে যদি রিপোর্ট আসে, বিপিসির বোর্ডের সাথে এই ব্যাংক গুলোর ডিরেক্টরদের যোগ সাজসে বা বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সরাসরি যোগসাজশে এই দুর্বল ব্যাংক গুলোতে, এই টাকা রাখা হয়েছে, অবাক হওয়ার কিছু নেই। বরং, উলটো হলেই আমরা অবাক হবো।
এইটার দুইটা ইমপ্লিকশান আছে।
প্রথমটি হচ্ছে, আগামীতে বিপিসি বা সরকার চাইলেই এই ফান্ড এক্সেস করতে পারবেনা।
আপনি বলতে পারেন, সরকারি ব্যাংকের টা পারবে এবং এই পরিমাণটিই বড় । নট রিয়ালি , কারন সরকারি ব্যাংক গুলোকে সরকার সব চেয়ে বড় মূলধন ঘাটতি জোগান দেয়। ফলে সরকার যদি এই ব্যাংক গুলো থেকে বড় অংকের টাকা তুলতে চায় ব্যাংক গুলো আবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে টাকা চেয়ে বসবে। ফলে,কথা একই।
অর্থাৎ, সরকার এই পঞ্জি স্কিমের টাকা আপনার পকেট থেকেই তুলবে এবং জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করার এইটা আরেকটা সম্ভাব্য কারন যে এই টাকার বড় একটা অংশ এক্সিসেবল না।
সেকেন্ড আরেকটা বিষয় আছে, যেইটা খুবি গুরুত্বপূর্ণ।
অর্থনীতিতে সেভিংস খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারন আপনার ব্যয় থেকে যদি আয় বেশি হয় তবে আপনার সঞ্চয় হবে। এবং এই সঞ্চয় থেকে অর্থনীতির সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটা হয় তা হচ্ছে, বিনিয়োগ হয়।
অন্য দিকে, আপনার আয় থেকে যদি ব্যয় বেশি হয় বা আয় ব্যয় যদি সমান হয় তবে আপনার সঞ্চয় হবেনা এবং আপনি বিনিয়োগ করতে পারবেনা না। এইটা যেমন আপনার জন্যে প্রযোজ্য ঠিক তেমনি, একটি রাষ্ট্রের জন্যেও প্রযোজ্য।
ফলে আমরা যারা অর্থনীতিকে খেয়াল করি, আমরা সব সময়েই খেয়াল করি ব্যাংকে সেভিংস বৃদ্ধি পাচ্ছে কিনা। যদি পায় তবে আমরা ধরে নেই, দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে , কর্মসংস্থান হবে, প্রকৃতই দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। অর্থনীতি আগাবে। ইত্যাদি ইত্যাদি।
নাউ, হেয়ার ইজ দা থিং।
বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরের বা অর্থনীতির সেভিংসের বড় একটি অংশ তৈরি হয়েছে একটি প্রক্রিয়ায় যাকে আমি নাম দিয়েছি,চোষণ। উন্নয়ন বিভ্রম দুই এ আমি চোষণের ৯টি ম্যাকানিজম চিহ্নিত করেছি, যার মাধ্যমে আমি দেখিয়েছি, ২০১৪ এর পরে কিভাবে দেশের মধ্যবিত্ত ও দরিদ্রদের চুষে এই রাষ্ট্রীয় সেভিংসটি তৈরি হয়েছে এবং সেভিংস টা কিভাবে খুব অল্প একটি অলিগারকদের হাতে ডিস্ট্রিবিউট করা হয়েছে, যাদের অধিকাংশেরই ঋণ ফেরত দেওয়ার কোন বাধ্যবাধকতা নেই।
বিপিসির ২৫ হাজার কোটি টাকা তার পারফেক্ট উদাহরন।
ইউ সি, জ্বালানি ক্রয় বিক্রয়ে বিপিসি কোন ভ্যালু এড করে না। বিপিসি শুধুমাত্র জ্বালানি কিনে বিক্রি করে । তেলের দাম যখন ৪০ ডলারে নেমে এসেছে তখন দাম না কমিয়ে, দেশের জনগণকে সেই কম মূল্যের তেলের সুবিধা ভোগ না করতে দিয়ে বিপিসি সুপার নরমাল প্রফিট করে, সেভিংস করেছে।
এর ফলে জনগণের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে, বিগত বছর গুলোর মূল্যস্ফীতির সাথে তার স্পষ্ট সংযোগ রয়েছে।
কিন্তু আপনাকে চুষে নিয়ে যে প্রফিট হয়েছে সেই প্রফিট বা সেভিংস বিপিসি কোথায় জমা রেখেছে? নিম্ন মানের ব্যাংকে, যে ব্যাংক গুলো থেকে ক্রনিজ এবং অলিগারকরা ঋণ আকারে টাকা বের করে নিয়ে যাচ্ছে, যা তাদের ফেরত দিতে হবেনা। সেই টাকা কিছুটা পাচার করতেছে, কিছু বিনিয়োগ করতেছে, কিছুটা ভোগ করতেছে।
কিন্তু, এই টাকাটা নিয়ে অলিগারকরা যে ভোগ করতেছে, বা ফেরত দেওয়ার বাধ্যবাধকতাহিন ঋণ পেয়ে আন কম্পিটিভ প্রজেক্টে বিনিয়োগ করতেছে তার ফলে কি হচ্ছে, তাদের কঞ্জাম্পশান বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাদের ভোগ ব্যয় ও খরচ গুলোর কারনে দেশের সামগ্রিক আমদানি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এমন কি ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এর ফলে কি হচ্ছে ?
এর ফলে দেশের ব্যালেন্স অফ পেমেন্টে টান পড়তেছে। রিজার্ভ সঙ্কুচিত হচ্ছে।
এই অতিরিক্ত ভোগের ফলে কি হচ্ছে, ডলারে ঘাটতি হচ্ছে, টাকার দাম কমে আসতেছে, এবং যার ফলে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়াতে আরেক দফা মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। টাকার মূল্য পরে যাওয়াতে সব কিছুর দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ভোগান্তি আপনাকে নিতে হচ্ছে ।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, আপনাকেই জোঁকের মত চুষে বিপিসি ২৫ হাজার কোটি টাকা সেভিংস করেছে, সেইটায় দায়েই আপনার কাধে মূল্যস্ফীতি চাপতেছে ।
এইটা হচ্ছে চোষণ। আপনাকে চোষণ করে, সেভিংস বৃদ্ধি হচ্ছে সেই সেভিংস টা চুষে নিচ্ছে সিলেক্টিভ একটা এলিট এবং অলিগারকরা। আবার তাদের কঞ্জাম্পশনের কারনে, ব্যালেন্স অফ পেমেন্টে টান পড়তেছে।
টাকা দাম পরে যাচ্ছে, আপনি আরেক দফা ইনফ্লেশানের খপ্পরে পরতেছেন।
সো ইউ সি, আপনাকে চুষে নিয়ে ভোগ করে সেইটার দায় আবার আপনার উপরে চাপায় দিচ্ছে।
সেইটার নাম দিয়েছে এরা উন্নয়ন।
ভালো তো ? ভালো না ?
প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশের অবস্থা একেবারেই সমিচীন। আর এই সমিচীন অবস্থায় কোন দিকে আগাচ্ছে দেশ তা এখনই যাচ্ছে না বলা। তবে বিদেশি অর্থ সহয়াতাই এখন একমাত্র ভরসা হয়ে দাড়িয়েছে।