বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নেতাদের যোগ্যতা এবং তাদের রাজনীতিতে ইতিবাচক যে অবদান, সেটা মুখ্য বিষয় হিসেবে সবসময় দেখা যায় না। এমনটি প্রায় অহরহ দেখা যায় টাকা দিয়ে রাজনৈতিক দল কিনে নিয়েছেন সম্পদশালী এবং বিত্তবান ব্যক্তিরা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটা প্রায় দেখা যায়। অনেক সময় সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীরা যারা কখনও রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না, তারা হঠাৎ করেই রাজনৈতিক নেতা বনে যান। এবার এই বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়েছেন লেখিকা মিলি সুলতানা। তার পোস্টটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
পামেলা চৌধুরী সিং বোর্দেসের কথা আপনাদের মনে আছে?যিনি ১৯৮২ সালে মিস ইন্ডিয়া নির্বাচিত হন। এরপর আন্তর্জাতিক মানের কলগার্ল হন। আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসায়ী আদনান খাশোগির প্রমোদবালা হন। তারপর ব্রিটিশ রাজনীতির দিকে হাত বাড়ান। পামেলার চোখে ক্ষমতাবান হওয়ার স্বপ্ন জাগে। এই কাজে তিনি তার শিক্ষা ও সৌন্দর্যকে ব্যবহার করেন। আগুনের কাছে এলে মোম তো গলবেই।
ব্রিটিশ জাঁদরেল ব্যক্তিত্বরা পামেলার আগুনে গা সেঁকে নিয়েছিলেন। যখন পামেলার কালি কর্তুত এক্সপোজড হল তখন ব্রিটিশ রাজনীতিতে ভূকম্পন হয়েছিল।সে এক বিরাট ইতিহাস। আরেকদিন সবিস্তারে লিখব। নতুন বছরের প্রথম সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথম যে সুখবরটা পেলাম – মাহিয়া মাহির মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।বোধকরি এমন শুভ খবর সমাজের জন্য তথা দেশের জন্য কল্যাণকর।
সংসদ সদস্য হওয়ার নুন্যতম যোগ্যতা মাহিয়া মাহির নেই। দলের জন্য মাহির অবদান বলতে ডাবল জিরো বুঝায়। চব্বিশঘণ্টা চোখে আইল্যাশ লাগিয়ে রাখা মাহি রাজনীতির কি বোঝেন?গত কিছুদিন যাবত মাহিয়া মাহির স্বামী রাকিব সরকার তার স্ত্রীকে ঠেলতে ঠেলতে “মমতা ব্যানার্জি” বানিয়ে দিচ্ছিলেন আর কি!! মাহিও ডাবল ট্যালেন্টেড চালু জিনিস। লোক দেখানো জনসেবা করে যাচ্ছিলেন মাহি।
স্বামীর অনুপ্রেরণায় মাথায় ওড়না চাপিয়ে বেনজির ভুট্টোর মত বেশভূষা নিতেও কসুর করেননি। পাঁচটাকা দামের কিছু ভবঘুরে সাংবাদিককেও দেখলাম বিস্কুটের নেশায় মাহিকে “নেত্রী” বলে উল্লেখ করেছে। মনোনয়ন পত্র কিনেই মাহি হাওয়াই মিঠা খেতে শুরু করেছিলেন। কেউ কেউ পারলে মাহিকে তখনই সংসদে বসিয়ে দেয়। এমনিতে সুবিধাভোগী বিতর্কিতদের কারণে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছিলো।
মাহিকে মনোনয়ন না দিয়ে দলকে বিরাট বিপদ থেকে বাঁচানো হয়েছে বলে আমরা মনে করি। মাহিয়া মাহির মত সুবিধাভোগীদের প্রাথমিক পদক্ষেপ বিফল হলেও ভবিষ্যতের আশায় তারা দিনাতিপাত করছে। নেত্রীর জানার বাইরে দলের অভ্যন্তরে বহু অপকর্মের কলকাঠি নড়ে। দলকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য, অযোগ্যদের সরানোর জন্য শেষ পর্যন্ত নেত্রীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হয়। মাহিয়া মাহির বিষয়টি অনেকটা সে রকম।
প্রসংগত, বাংলাদেশের নেতারা অনেকেই নানা ধরনের নীতিকথার বুলি আওড়িয়ে থাকেন। কিন্তু তারাই ভেতরে ভেতরে ভুরি ভুরি দুর্নীতি করে চলেন। এটাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক চিত্র। কারণ দলীয়করণ যেখানে রাজনীতি সেখানে দলের কর্মী-সমর্থকদের দুর্নীতি ঢাকাই তাদের অন্যতম কাজ। কারণ ক্ষমতা পেলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি হাসিল করতে শুরু করেন, এটাই হচ্ছে সার্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বাংলাদেশের।