Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / ২০ বছর বেতন পাননি, ঘুষের টাকা ফেরত পেতে শিক্ষিকার লাশ নিয়ে বিদ্যালয়ে স্বজনেরা

২০ বছর বেতন পাননি, ঘুষের টাকা ফেরত পেতে শিক্ষিকার লাশ নিয়ে বিদ্যালয়ে স্বজনেরা

ঘুষের টাকা ফেরত দাবিতে স্কুলে অবস্থান নিলেন এক শিক্ষকের স্বজনরা! এ সময় উত্তেজিত জনতার সামনে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক আগামী তিন দিনের মধ্যে ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। পরে স্বজনরা লাশ নিয়ে স্কুল ত্যাগ করে দাফনের ব্যবস্থা করেন।

সোমবার সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার গড়বেড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। স্বজনরা দাবি করেন, শিক্ষিকা গত ৩০ জানুয়ারি বাবার বাড়িতে স্ট্রোক করেন। পরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ ভোরে তার মৃত্যু হয়।

নিহত শিক্ষিকার নাম রোকেয়া খাতুন। তিনি উপজেলার জিসিজি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক শাখার ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। ২০ বছর স্কুলে শিক্ষকতা করেও বেতন পাননি। তা না করে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বেতন পাওয়ার আশ্বাস দিয়ে পর্যায়ক্রমে টাকা নেন।

স্কুল শিক্ষক ও স্থানীয়রা জানান, রোকেয়া খাতুন বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভূতবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার বাড়ি গড়বেদ গ্রামে। বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে নিয়মিত শিক্ষকতা করে আসছেন। কিন্তু বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ফরিদুল ইসলাম ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি কাজিপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দ্বীন মোহাম্মদ বাবলু বেতন পরিশোধের জন্য কয়েক দফা ঘুষ নিয়েছেন।

বিদ্যালয়ের অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে জিসিজি বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয়। পরে ২০০৪ সালের ৩ আগস্ট দৈনিক করতোয়া পত্রিকায় ইংরেজি শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একই বছরের অক্টোবরের ২৩ তারিখে নিয়োগ পরীক্ষার পর ৬ নভেম্বর বিদ্যালয়টিতে ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন রোকেয়া খাতুন। এর পর থেকে অদ্যাবধি শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত থেকে নিয়মিত পাঠদান করাতেন তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঘুষের টাকা ফেরতের দাবিতে আজ সকালে ওই শিক্ষকের স্বজনরা লাশ নিয়ে স্কুল চত্বরে যান। চার লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা লাশ নিয়ে স্কুল ত্যাগ করে। গত ৩০ জানুয়ারি গারাবেদে বাবার বাড়িতে স্ট্রোক করেন ওই শিক্ষিকা। পরে আজ রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান।

রোকেয়া খাতুনের স্বামী আব্দুল করিম বলেন, ‘আমি নিজে শিক্ষক হয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করি। এরপর প্রধান শিক্ষক ফরিদুল আমার স্ত্রী ও আমার কাছ থেকে স্কুল ঘর নির্মাণের জন্য ৮০ হাজার টাকা নেন। এরপর আমি সেখান থেকে চলে যাই কিন্তু আমার স্ত্রী থেকে যায়। বেতন দেওয়ার কথা বলে পর্যায়ক্রমে চার লাখ টাকা নেন। কিন্তু বেতন দেননি।

আবদুল করিম বলেন, “২০২২ সালে দুই লাখ টাকা চান, শেষ বেতন দেবেন বলে জানান। সহকারী শিক্ষক আবদুর রাজ্জাকের উপস্থিতিতে দেড় লাখ টাকায় মীমাংসা হয়। পরে আমি দেড় লাখ টাকা পরিশোধ করি। স্ত্রীর বেতন দিতে সভাপতি বাবলু চেয়ারম্যানের পায়ের কাছে লাখ টাকা।সে টাকাও ব্যর্থ হয়।সব মিলিয়ে তারা আমার কাছ থেকে প্রায় সাত থেকে আট লাখ টাকা নিয়েছে।আমার স্ত্রী টাকার দুঃখে স্ট্রোক করে মারা গেছে।আমি সেই টাকা চাই। তিনি দীর্ঘদিন ধরে যে পরিশ্রম করেছেন তার জন্য আমিও ক্ষতিপূরণ চাই।

রোকের বড় ভাই খলিলুর রহমান বলেন, প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম ও উপজেলা পরিষদের সভাপতি ভাইস চেয়ারম্যান দ্বীন মোহাম্মদ বাবলু পর্যায়ক্রমে সাত থেকে আট লাখ টাকা নিলেও আমার বোনের বেতন দেননি। টাকার জন্য আমার বোন স্ট্রোকে মারা গেছে। আমরা এর বিচার চাই।’

রোকার ভাতিজা হাসেম আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিদ্যালয়ের কেরানি লোকমান হোসেন এমপিওভুক্তির আবেদনের খরচ বাবদ আমার কাছ থেকে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা নেন। এ ছাড়া লোকমান হোসেন সম্মানী ভাতার টাকা চান।

কেরানি লোকমান হোসেন টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি ওই টাকা নিয়ে হেড স্যারকে দিয়েছি। আমি মাথার বাইরে কিছু করতে পারি না স্যার।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলামও টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে আজকার পত্রিকাকে বলেন, রোকেয়ার টাকায় আমরা বিদ্যালয়ের ঘর তৈরি করি। বেতন দেওয়ার কথা বলে কয়েকবার টাকাও নিয়েছি। আমরা ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রোকেয়ারকে চার লাখ টাকা ফেরত দেব।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কাজিপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দ্বীন মোহাম্মদ বাবলুও ঘুষের টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা বেতন পরিশোধ করে যে টাকা নিয়েছি তার চার লাখ টাকা রোকারের স্বজনদের ফিরিয়ে দেব। ” ইউএনও স্যার এসে আমাদের নির্দেশ দিলেন।

এ বিষয়ে কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহরাব হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষকের লাশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের সভাপতির সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। আগামী তিন দিনের মধ্যে চার লাখ টাকা ফেরত দেবেন বলে জানিয়েছেন তারা।

ইউএনও আরও বলেন, নিহত শিক্ষক নিয়োগের কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ। কাগজপত্র দেখার পর, আমরা একটি তৈরি করব

About Zahid Hasan

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *