আপনার মনোনয়ন সংক্রান্ত বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাবেন। এর জন্য পার্টি ফান্ডে দিতে হবে ২০ কোটি টাকা। এই টাকা প্রস্তুত রাখুন। যখন জমা দিতে বলা হবে তখন দেবেন। আর অল্প সময়ের মধ্যে আপনি দেখা করবেন।’ মনোনয়ন প্রত্যাশীদেরকে ফোন করে এমন লোভনীয় কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিতেন প্রতারক চক্রের সদস্যরা। মো. ইয়াসিন (৪৬) ও তার মেয়ে সুরাইয়া ইয়াসমিন (২২) নামে দুজনকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য উঠে আসে। বিষয়টি নিশ্চিত করে গতকাল দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, বাবা মো. ইয়াসিন ও মেয়ে সুরাইয়া ইয়াসমিন মিলে প্রতারক চক্র গড়ে তুলেছেন। একেক সময়ে প্রতারণার একেকটি মৌসুম থাকে। আগে চাকরি, পোস্টিং, বিদেশে লোক পাঠানোসহ বিভিন্নভাবে প্রতারণা করে অনেককে সর্বস্বান্ত করেছে এই চক্রটি।
এখন চলছে মনোনয়ন জালিয়াতি। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন ঘিরে সক্রিয় হয়ে ওঠে তারা। যত মানুষ নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়ন কিনেছেন। এটাকেই পুঁজি করে প্রতারকরা গণভবনের নাম ব্যবহার করে সম্ভাব্য প্রার্থীদেরকে ফোন করে নমিনেশন পাবেন জানিয়ে দলের ফান্ডে টাকা দেয়ার কথা বলেন। অনেকেই তাদের ফাঁদে পড়ে কিছু টাকা আগেই পরিশোধ করেছেন। অন্যরা টাকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সম্প্রতি এই বাবা-মেয়ে একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীকে ফোন করে বলেন- মনোনয়নের ব্যাপারে আপনার বিশেষ নির্দেশনা আছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাবেন। এর জন্য পার্টি ফান্ডে দিতে হবে ২০ কোটি টাকা। এই টাকা প্রস্তুত রাখুন।যখন জমা দিতে বলা হবে তখন দেবেন। এবং শীঘ্রই আপনার সাথে দেখা হবে। ২০ কোটি টাকা দাবি করায় ওই মনোনয়নপ্রত্যাশী বিষয়টি দলের এক কেন্দ্রীয় নেতাকে জানান। পরে বিষয়টি ডিবির কাছে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী। আমরা তদন্তে নেমে জানতে পারি- মো. ইয়াসিন ও তার মেয়ে সুরাইয়া ইয়াসমিন দুজনে মিলে ওই মনোনয়নপ্রত্যাশীকে ফোন করেন। সে সময় তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করেন। পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তাদেরকে নোয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরা বিভাগ। গ্রেপ্তারের পর তাদের মোবাইল ফোনে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগের রেকর্ড পাওয়া গেছে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে এ চক্রের সঙ্গে আর কারা জড়িত তা জানার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতারণা করার কৌশল বিষয়েও তথ্য পেয়েছি।
গোয়েন্দা প্রধান বলেন, প্রতারকরা ট্রু-কলারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার নামে নম্বর সেভ করে আস্থা অর্জনের চেষ্টা করে। তবে যারা অর্থ প্রদান করছেন তাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত। কারণ একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার আগে কয়েক ধাপে যাচাই-বাছাই করা হয়। ট্রু-কলারে সংরক্ষিত নাম দেখে টাকা দিয়ে মনোনয়ন পাওয়া এত সহজ নয়। তাদের সতর্ক থাকতে হবে।