আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় হয়রানির শিকার। অনেকেই নোংরা মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছেন। এটা তাদের ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স। হারুন স্যারের সাথে আমার বিয়ের ছবি ছড়ানো। যে কেউ ভালো করে খেয়াল করলেই বুঝবেন আমি সেই ছবির নারী নই। এর আগেও অনেক ইস্যুতে অনেক লোককে হয়রানি করা হয়েছে। এবার আমি ভুক্তভোগী। মঙ্গলবার আলাপকালে এমনটাই জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হকের স্ত্রী অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) সানজিদা আফরিন।
এদিকে ছাত্রলীগের দুই নেতাকে নির্যাতনের ঘটনায় এডিসি হারুন-অর-রশীর সঙ্গে আর কারা জড়িত তা জানতে তদন্ত দীর্ঘ হয়েছে। গতকাল এ ঘটনায় জড়িত কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। সাক্ষীদের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটি সবার বক্তব্য যাচাই-বাছাই করছে। নির্যাতনের ঘটনায় বরখাস্ত হয়ে গতকাল রংপুর রেঞ্জে এডিসি হারুনকে সংযুক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মাহাবুর রহমান শেখ স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এদিকে এডিসি সানজিদাকেও বদলি করা হতে পারে বলে পুলিশের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। তবে গতকাল দুপুর ১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি ডিএমপিতে নিজ অবস্থানে ছিলেন।
গত শনিবার রাতে রাজধানীর শাহবাগ থানায় পুলিশের হাতে নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত হয়েছেন ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতা। তারা হলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল শাখার সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় বৈজ্ঞানিক বিষয়ক সম্পাদক শরীফ আহমেদ ও শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক। ভুক্তভোগী ও তাদের সহপাঠীদের অভিযোগ, পুলিশের রমনা বিভাগের এডিসি হারুন ও শাহবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) গোলাম মোস্তফা তাদের থানায় নিয়ে গিয়ে মারধর করেন। ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দেওয়ার পরও হারুনসহ ১০-১৫ জন পুলিশ তাদের মারধর করে।
গতকাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, কোনো অপকর্ম করলে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপকর্মের দায় সেনাবাহিনী নেবে না। এদিকে গতকাল আহত ছাত্রলীগ নেতাকে দেখতে হাসপাতালে যান ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের নেতৃত্বে পুলিশের একটি প্রতিনিধি দল। এ সময় তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্যাতনের খবর পাওয়া গেছে। গণমাধ্যমের সঙ্গে এডিসি সানজিদার কথা প্রসঙ্গে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমাদের অনুমতি ছাড়া কথা বলা ঠিক হয়নি।
যা বললেন সানজিদা
সানজিদা বলেন, হাসপাতালে কী ঘটেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তে পুরো বিষয়টি জানা যাবে। ঘটনার দিন আমার স্বামী হাসপাতালে পৌঁছানোর পর তিনি কোনো প্রশ্ন করেননি। শুনেছি আমার স্বামী প্রথমে এডিসি হারুন স্যারের ওপর হামলা করেছে। তখন আমি ইটিটি রুমে ছিলাম।
এডিসি হারুনের সঙ্গে তার কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হারুন স্যারের সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক নেই। সে শুধু আমার সহকর্মী। আমি শুধু চিকিৎসার জন্য সাহায্য নিয়েছি। হারুন স্যার সেখানে এসে আমার জন্য ডাক্তার সিরিয়ালের ব্যবস্থা করলেন। এ ছাড়া আর কিছু জানি না। সানজিদা আরও বলেন, “উদ্দেশ্য দেখে মনে হচ্ছে ওরা দুজনকে একসঙ্গে দাঁড় করিয়ে ভিডিও করতে চায়। পরে ব্যবহার করবে; কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে হতে পারে।” আপনার স্বামী এ ঘটনা পরিকল্পিত কি না জানতে চাইলে তিনি সমকালকে বলেন, ‘ঘটনাটি পরিকল্পিত কিনা তা বলতে পারব না, তবে সে খুবই জেদি ছিল।
সানজিদা আরো বলেন, “আমার স্বামী হয়তো নিরাপত্তাহীনতা বা অন্য কোনো সমস্যা থেকে আমাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন।” এডিসি হারুন স্যারকে দেখে বললেন- ‘এখানে কেন?’ সানজিদা আরও বলেন, ‘কিছুদিন ধরেই হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলাম। ২০১৯ সাল থেকে আমি উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খাচ্ছি। চার-পাঁচ মাস সমস্যা বাড়ল। শনিবার ব্যথা বেড়ে যায়। আমি একজন ডাক্তার দেখাতে চাই কারণ সেদিন আমার অবসর সময় আছে। আমি যে ডাক্তারকে দেখি সে দেশের বাইরে, আমি ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের এডিসি হারুন স্যারকে সিরিয়াল করতে বলি। তিনি ওসির মাধ্যমে সিরিয়ালটি পরিচালনা করেন।
ডিএমপির ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি সন্ধ্যা ৬টায় সেখানে যাওয়ার পর দেখি, যে চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া হয়েছে, তিনি কনফারেন্সে আছেন। হারুন স্যারকে বিষয়টি জানালে তিনি কাছাকাছি থাকায় হাসপাতালে আসেন। তিনি এসে একজন ডাক্তারকে ম্যানেজ করলেন। তাকে দেখানোর পর বেশ কিছু পরীক্ষা দেন। সানজিদা বলেন, “ঘটনার সময় যে ঘরে ইটি করা হয়েছিল আমি সেখানেই ছিলাম। টিটি করার ১৫-২০ মিনিট পর বাইরে হট্টগোল শুনতে পেলাম। প্রথম শব্দটা কানে আসে; স্যার (এডিসি হারুন) চিৎকার করে বলছেন, ‘ভাই। আমার গায়ে হাত তুললেন কেন? আমার গায়ে হাত তুলতে পারছেন না।” কিছুক্ষণ পর দেখি আমার স্বামী (আজিজুল হক মামুন); তিনি আসলে সেখানে কী করছেন, কেন গেলেন, আমি জানি না। জানো। ওকে মনে হচ্ছিল একেবারেই মন খারাপ এবং খুব উত্তেজিত। ওর সাথে আরও কিছু ছেলে ছিল, আমি তাদের চিনি না। ওরা স্যারকে (এডিসি হারুন) ইটিটি রুমে নিয়ে গেল ওকে মারতে।
তারা মূলত স্যারকে (এডিসি হারুন) মারধর করে টেনে হিঁচড়ে এই কক্ষে নিয়ে আসে। স্যার তাদের হাত থেকে বাঁচতে ইটিটি রুমের এক কোণে চলে গেলেন। সানজিদা বলেন, “এরপর আমার স্বামী তার সঙ্গে থাকা লোকজনকে বললেন, ‘আরে, একটা ভিডিও বানান।’ এরপর সবাই ফোন বের করে ভিডিও করতে শুরু করে।ভিডিও শুরু করলে আমি আমার স্বামী ও তার সাথে থাকা লোকজনের সাথে চ্যাট শুরু করি।এরপর যারা ভিডিও করছে তাদের মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে। , তাদের হাতের স্পর্শে আমার হাতেও একটু ব্যথা হয়। কারণ আমি চাইনি কেউ আমাকে ওই অবস্থায় ভিডিও করুক।”
সানজিদা আরও বলেন, ওই অবস্থায় আমার স্বামী আমার গায়ে হাত তুলে স্যারকে বের করার চেষ্টা করেন। তখন বিষয়টি স্যারের কাছে নিরাপদ মনে হয়নি। এরপর স্যার কিছুক্ষণ অপেক্ষায় ছিলেন। এরপর হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীরাও আসেন। ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর পুলিশ ফোর্স এলে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়।” মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। ড্রাইভার আমার গায়ে হাত তুলল। একপর্যায়ে যে ব্যক্তি ভিডিও করছিল, এক ছেলে আমার হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তার সঙ্গে সংঘর্ষ, এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।