বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি বেশ কিছু সংখ্যাক ব্যাংক রয়েছে। তবে বেসরকারি ব্যাংক গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ইউনিয়ন ব্যাংক। সম্প্রতি এই ব্যাংকটির একটি শাখার ভল্টে ১৯ কোটি টাকার হিসাবের গড়মিল হয়েছে। ইতিমধ্যে এই ঘটনায় ব্যাংকটির গুলশান শাখার সংশ্লিষ্ট তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এবং এই ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছে ইউনিয়ন ব্যাংক।
ইউনিয়ন ব্যাংকের ভল্টের ১৯ কোটি টাকার হিসাব না মেলার ঘটনায় ব্যাংকটির গুলশান শাখার সংশ্লিষ্ট তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে সেই বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে ব্যাংকটি। বিবৃতিতে ইউনিয়ন ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইউনিয়ন ব্যাংকের একটি শাখার ভল্টে রক্ষিত টাকার বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। এ জন্য প্রকৃত ঘটনা ও প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে ইউনিয়ন ব্যাংকের অবস্থান ব্যাখ্যা করার প্রয়োজনবোধ করছি। এ প্রসঙ্গে প্রথমেই আমরা বলতে চাই, গণমাধ্যমে যে খবরটি প্রকাশিত হয়েছে তা সম্পূর্ণরূপে ভুল বুঝাবুঝির কারণে হয়েছে। প্রকৃত ঘটনাটি হচ্ছে, গত ১৯ সেপ্টেম্বর ব্যাংকিং লেনদেন শেষে সন্ধ্যার পরে শাখায় একজন গুরুত্বপূর্ণ গ্রাহক নগদ টাকা নেওয়ার জন্য উপস্থিত হন। গ্রাহকের গুরুত্ব এবং ব্যাংক গ্রাহক সর্ম্পক বিবেচনায় তার কাছ থেকে চেক জমা রেখে নগদ টাকা প্রদান করা হয়। পরের দিন বাংলাদেশ ব্যাংক অডিট টিমের উপস্থিতিতে গ্রাহকের চেক ডেবিট করে ওই টাকা সমন্বয় করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যাংকের অর্থ হারানোর মতো কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তারপরেও বিষয়টি যথাযথভাবে তদন্ত করার জন্য ইতিমধ্যে নিম্নোক্ত প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
১. ইতিমধ্যে শাখার সংশিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে।
২. বিষয়টির সঠিক তদন্তের জন্য উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিটি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। কমিটির প্রতিবেদন মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দুদেশের চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে আমানত, বিনিয়োগ ও সম্পদের দিক থেকে ইউনিয়ন ব্যাংকই সবচেয়ে বেশি সাফল্য পেয়েছে। এটি ইউনিয়ন ব্যাংক গ্রাহকদের সীমাহীন আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসার ফসল বলে আমরা মনে করছি। ২০১৩ সালে যাত্রার পর থেকে ইউনিয়ন ব্যাংক করপোরেট সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে অর্জিত সুনাম অক্ষুণ্ন রেখে ভবিষ্যতেও আমরা পথ চলতে চাই। এতদিনের পথ চলায় দেশের গণমাধ্যমের যে সহযোগিতা ইউনিয়ন ব্যাংক পেয়েছে, আগামীতেও তা অক্ষুণ্ন থাকবে বলে প্রত্যাশা করছি।
এদিকে বৃহস্পতিবার ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখার ভল্ট থেকে ‘উধাও’ হওয়া ১৯ কোটি টাকা এক ভিভিআইপি গ্রাহককে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করে ব্যাংকটির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হাসান ইকবাল। তিনি জানান, ব্যাংকিং সময়ের পর একজন ভিভিআইপি গ্রাহককে ওই টাকা দেওয়া হয়েছিল। ব্যাংকিং রুলস ভায়োলেট হলেও এমন ঘটনা নতুন নয়। গ্রাহক-ব্যাংক সম্পর্কের খাতিরে এমন লেনদেন হয়। এ ঘটনায় ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখার তিনজনকে প্রত্যাহার ও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দলের উপস্থিতিতেই ১৯ কোটি টাকার হিসাব সমন্বয় করা হয়। এর আগে ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখার ভল্ট থেকে ১৯ কোটি টাকা গরমিল পায় বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরিদর্শক দল। গত সোমবার ব্যাংকটির শাখায় গিয়ে এমন তথ্য উদঘাটন করা হয়। টাকার হিসাব না মেলার বিষয় নিয়ে ব্যাংকটির কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এখন ব্যাংকটির সব শাখার ভল্ট পরিদর্শন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানা গেছে, ওইদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরিদর্শক দল ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখা পরিদর্শনে যায়। সকাল ১০টার আগেই তারা শাখায় গিয়ে উপস্থিত হন। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী শুরুতেই ওই দল ভল্ট পরিদর্শন করে। কাগজে-কলমে শাখার ভল্টে ৩১ কোটি টাকা দেখানো হলেও সেখানে ১২ কোটি টাকা পায় পরিদর্শক দল। তাৎক্ষণিক বাকি টাকার বিষয়ে ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা কোনো জবাব দিতে পারেননি। উল্টো বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন তৎপরতা শুরু করে শাখা কর্তৃপক্ষ। একপর্যায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পক্ষও এ ঘটনায় কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেয়। প্রতিদিন লেনদেনের শেষ ও শুরুতে ভল্টের টাকা মিলিয়ে রাখার দায়িত্ব শাখার ব্যবস্থাপক, সেকেন্ড অফিসার এবং ক্যাশ ইনচার্জের। ভল্টে টাকার হিসাবে কোনো গরমিল হলে তা মিলিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব এসব কর্মকর্তার। অনেক সময় হিসাবের ভুলে সামান্য টাকার গরমিল হতে পারে। তবে বড় অঙ্কের টাকার গরমিল হলে তা ফৌজদারি অপরাধ। এক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
বর্তমান সময়ে দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংকে নানা ধরনের আওনিয়মের ঘটনা ঘটছে। এমনকি বিভিন্ন অনিয়মের জের ধরে পুরো ব্যাংক ব্যবস্থা হুঁ/ম/কি/র মুখে পড়েছে। অবশ্যে বাংলাদেশ সরকার ব্যাংকিং খাতের সকল অনিয়ম প্রতিরোধে নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। সেই মোতাবেক কাজ করছে দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।