গ্রাম নামটি বললেই আমদের চোখের সামনে ভেসে আসে কয়েকটি চিত্র আর তা হলো সবুজ গাছপালায় ঘেরা দরিদ্র জনগোষ্ঠির কথা। তবে না এখন আর সেই আগের মত নেই বর্তমান গ্রাম গুলো। এখন শহরের সাথে পাল্লা দিয়ে ধনি হয়ে উঠছে গ্রাম গুলোও।এবার জানা গেল বিশ্বের সবচেয়ে সম্পদশালী গ্রাম এখন ভারতের গুজরাটের মাধাপার গ্রাম। এই গ্রামের বাসিন্দাদের ১৭ টিরও বেশি ব্যাংকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা জমা আছে। এই ১৭টি ব্যাংকে ওই গ্রামের প্রায় সাত হাজার ৬০০ পরিবারের টাকা জমা থাকায় গুজরাটের মাধাপার গ্রামটি হয়ে উঠেছে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী গ্রাম।
যেখানে গ্রামের বাসিন্দাদের গড় আয় আনুমানিক প্রতি বছরে ১৫ লাখ টাকা। বলাই বাহুল্য, ভারতবর্ষের বেশিরভাগ বড় শহরের বাসিন্দাদেরই এমন আয় নেই। মূলত ব্যাংক আমানতের উপর ভিত্তি করেই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী গ্রামগুলোর ঠাই পেয়েছে গুজরাটের মাধাপার গ্রাম। ফলে এই গ্রাম এখন বিদেশি মিডিয়ার নজরে। ভারতের বাকি গ্রামগুলোর থেকে একেবারে ভিন্ন চরিত্রের এই গ্রামের অবস্থান গুজরাটের কুচ্ছ জেলায়।
এই কুচ্ছ হলো একটি রহস্যে মোড়া জেলা। এখানকার ১৮টি গ্রামের উৎপত্তি আজও রহস্যই রয়ে গেছে। তারই একটি গ্রাম হলো মাধাপার। আর সেই মাধাপারই বিশ্বের ধনীতম গ্রাম। শুধু ১৭টি ব্যাংকই নয়, গ্রামে রয়েছে স্কুল, কলেজ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হেল্প সেন্টার, মন্দির, বাঁধ, সবুজ প্রকৃতি ও রথসহ ৭৬০০টি কাঁচা পাকা বাড়ি।
এছাড়াও এই গ্রামে একটি অত্যাধুনিক গোয়াল ঘরও রয়েছে। গ্রামে নিজস্ব শপিংমল রয়েছে। যেখানে বিশ্বের বড় ব্র্যান্ডগুলোর শোরুম আছে। গোসল করার জন্য গ্রামে রয়েছে একটি পুকুর এবং একটি দুর্দান্ত সুইমিং পুল। গ্রামের নিজস্ব কমেউনিটি হলও আছে। খেলার স্কুল, পড়ালেখার জন্য হিন্দি ও ইংরেজি মাধ্যম ছাড়াও বিশ্বব্যাপী সুবিধার সঙ্গে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। গ্রামের পোস্ট অফিসে রয়েছে ২০০ কোটি টাকার একটি নির্দিষ্ট আমানত।
ভারতের প্রধান শহর ও শহরের অর্ধেক জনসংখ্যার চেয়ে এই গ্রামের মানুষ বেশি সমৃদ্ধ বলে বলা হয়। বিদেশি প্রচার মাধ্যমের আলোচনাতেও মাধাপার সমৃদ্ধ গ্রাম, যা সারা বিশ্বের মানুষ দেখতে আসে। প্রশ্ন হলো দেশের অন্যান্য গ্রামের চাইতে এই মাধাপার গ্রাম এতো সমৃদ্ধশালী কি করে?
জানা যায়, গ্রামের বাসিন্দাদের প্রতিটি বাড়ির কেউ না কেউ যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং অন্যান্য দেশে বাস করেন কাজের সূত্রে। আর এই সব প্রবাসীরাই গ্রামে তাদের পরিবারের জন্য বড় অংকের টাকা প্রতি মাসেই পাঠান। আর এই টাকা দিয়েই ফুলেফেপে উঠছে গ্রামটি। আবার এদের মধ্যে অনাবাসী ভারতীয়রা দেশে ফিরে নতুন ব্যবসা শুরু করার ফলেও এই গ্রামের আয় বৃদ্ধি হচ্ছে।
জানা গেছে, ১৯৬৮ সালে লন্ডনে মাধাপার ভিলেজ অ্যাসেসিয়েশন প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলত মাধাপার থেকে সেখানে যারা এসেছেন, তাদের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তুলতেই এই সংগঠনের জন্ম। লন্ডনে গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য মাধাপার গ্রামে এই সংগঠনের একটি অফিস রয়েছে। এই গ্রামের মানুষদের অদ্ভুত রকমের নিজেদের গ্রামের প্রতি টান রয়েছে।
এই গ্রামে প্রবাসীর সংখ্যা অনেক। কিন্তু তারাও ভুলে যাননি নিজেদের শেকড়ের কথা।তাই কর্মস্থলে কোনো ব্যাংকে টাকা না জমিয়ে অর্জিত অর্থ রাখান জন্য সেই গ্রামের ব্যাংককেই বেছে নিয়েছেন তারা। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো যে গ্রামবাসীরা এই গ্রাম থেকে দূর দেশে চলে গেলেও গ্রামটি ধরে রেখেছে অর্থনীতি দিয়ে। উন্নয়নে জোয়ার এলেও এখানকার মানুষের প্রধান জীবিকা চাষবাস। কৃষি এই জনগণের সমৃদ্ধির বড় কারণ। মাধাপারে উৎপন্ন ফসল নিয়মিত রপ্তানি হয় মুম্বাইয়ে।