Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / ১৭ ব্যাংককে বিশেষ সুবিধা দিয়ে টিকিয়ে রাখছে বাংলাদেশ ব্যাংক, গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক

১৭ ব্যাংককে বিশেষ সুবিধা দিয়ে টিকিয়ে রাখছে বাংলাদেশ ব্যাংক, গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক

ঋণখেলাপির জন্য নিরাপত্তায় ঘাড়তি থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংক ৫০,০০০ কোটি টাকার বিশেষ সুবিধা দিয়ে ১৭টি ব্যাংককে টিকিয়ে রাখছে। জরুরি ব্যবস্থার ঘাটতি মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ব্যাংকগুলোকে ডিফারেল (বকেয়া) সুবিধা দিয়েছে। প্রভিশন বাঁচাতে এক থেকে নয় বছর পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকে এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এই বকেয়া প্রভিশন সংরক্ষণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ব্যাংকগুলো কিস্তিতে পরিশোধ করবে।

জাতীয়, জনতা, এবি ও রূপালী ব্যাংক এই বিশেষ সুবিধা পাওয়ার শীর্ষে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ব্যাংকগুলো ঋণের জামানত দিয়ে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করলেও তা গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতে পারে।

ব্যাংকিং নীতিমালা অনুযায়ী, বিতরণকৃত ঋণের মানের উপর নির্ভর করে ব্যাংককে ০.২৫ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত প্রভিশন রাখতে হয়। যেসব ব্যাংক প্রভিশন রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারে না, তাদের ঘাটতি ব্যাংকের মূলধন থেকে সমন্বয় করা হয়। ফলে ব্যাংকের মূলধন কমে যায়। এছাড়াও, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সেই ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারে না। এই দুটি সমস্যা সমাধানের জন্য, ব্যাংকটি deferral নামে একটি জরুরি সুবিধা পায়। কাগজে কলমে সমাধান হলেও দীর্ঘ মেয়াদে ব্যাংকের সমস্যা রয়ে গেছে।

বিলম্বিত সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংক নিয়েছে ১০ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংক ৮ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা। দুই ব্যাংককে আগামী ৯ বছরের মধ্যে প্রভিশন সমন্বয় করার সুযোগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এবি ব্যাংক ৬,২৪৬ কোটি টাকার ডিফারাল সুবিধা নিয়েছে, যা ২০২৯ সাল পর্যন্ত কিস্তিতে সমন্বয় করা যেতে পারে। রূপালী ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতির বিপরীতে ৬০৪৭ কোটি টাকার ডিফারাল সুবিধা পায়।

ব্যাংকগুলোকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টা আমানতকারীদের জন্য বড় ঝুঁকি। সাধারণ আমানতকারীরা যদি না জানে তাঁরা যে ব্যাংকে টাকা রাখছেন
তার ভিত্তি দুর্বল, তাহলে তাঁদের প্রতারিত হওয়ার সুযোগ থাকে। এ জন্য লাগাতার ডেফারেল সুবিধা দেওয়া মোটেও ব্যাংকের জন্য ভালো নয়। এতে ব্যাংকগুলো আগ্রাসী ঋণে আগ্রহ পায়।’

অগ্রণী ব্যাংক ৫ হাজার ৯১১ কোটি টাকার ডেফারেল সুবিধা নিয়েছে চার বছরের জন্য। বেসিক ব্যাংক ৪ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার সুবিধা পেয়েছে, যা ৯ বছরের জন্য সমন্বয়ের সুযোগ থাকছে। সোনালী ব্যাংক চার বছরে ৩ হাজার ৭২১ কোটি টাকার ডেফারেল সুবিধা পায়। ওয়ান ব্যাংক পাঁচ বছরের জন্য ১ হাজার ২৪ কোটি টাকার সুবিধা পায়।

এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম বলেন, ‘নিয়ম মেনেই ডিফারেল সুবিধা দেয়। এতে কোনো ব্যাংক সমস্যাগ্রস্ত হলে তা কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পায়। তবে প্রভিশন সমন্বয়ে ব্যাংকগুলোর চেষ্টা থাকা দরকার।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক এনসিসি ব্যাংককে ৬৮৫ কোটি এবং ঢাকা ব্যাংককে ৪৯৮ কোটি টাকা দিয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ৪২৮ কোটি, আইএফআইসি ৪২০ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ২৯৯ কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১৭০০ কোটি, সাউথইস্ট ব্যাংক ১২১ কোটি এবং সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক ৩৭ কোটি টাকা স্থগিত সুবিধা দিয়েছে। এই ব্যাঙ্কগুলিকে তাদের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার জন্য ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পদ্মা ব্যাংকের ডিফারেল সুবিধা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান স্থগিত সুবিধার কথা স্বীকার করে বলেন, “ব্যাংকের প্রয়োজনে ব্যাংক ডিফারেল সুবিধা নেয়। তবে সাউথ বেঙ্গল এগ্রিকালচার ব্যাংক টাকার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম সুবিধা পায়।

About Babu

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *