বন্ধ হয়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক বিল এসে প্রায় ১৫ বছর পরে। যেই বিলের পরিমান আকাশ ছোঁয়া। এই বিল দেখে সংশ্লিষ্ট পরিবার রীতিমতো অবাক হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এমনকি ১৫ বছর আগে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক বিল নিয়ে তারা বিপাকেও পরেছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার।
বরগুনার তালতলীতে সিডারের আঘাতে বিধ্বস্ত পল্লী বিদ্যুতের মিটার অফিস থেকে খোলার ১৫ বছর পর কলাপাড়া জোনাল অফিস বিল করেছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৮৪১ টাকা। ঘটনাটি ঘটেছে তালতলীর ছোট ভাইজোড়া গ্রামে। মিটারের মূল মালিকের প্রয়ানের কারণে তার ছেলের বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে বকেয়া বিল যোগ করা হয়। জানা যায়, উপজেলার ছোট ভাইজোড়া গ্রামের বৃদ্ধ আদম আলী গ্রামের রাস্তার পশ্চিম পাশে মুদি দোকান চালাতেন। দোকান থেকে তার নামে একটি গ্রামের বিদ্যুৎ মিটার (অ্যাকাউন্ট নম্বর ৩৭৪-২২০৫) কিনেছেন। বার্ধক্যজনিত কারণে ২০০৬ সালের ১০ নভেম্বর তিনি প্রয়াত হন। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরে তার দোকান ধ্বংস হয়। পল্লীর বিদ্যুতের লোকজন ভাঙা মিটার খুলে নিয়ে যায়। কিন্তু মিটার অপসারণের ১৫ বছর পর প্রয়াত আদম আলীর ছেলে আনসার আলী চলতি জুলাইয়ের বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে তার বাবার বকেয়া বিদ্যুৎ বিল এক লাখ ৮৫ হাজার ৮৪১ টাকা যোগ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, ২০১০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত স্থানীয় এনায়েত করিমের ছেলে এনামুল করিম দোকানের পাশের রাস্তার পূর্ব পাশে অটোরিকশা ভাড়া দেওয়ার ২-৩ বছর পর একটি গ্যারেজ ব্যবসা শুরু করে। বৃদ্ধ আদম আলী প্রয়াত। বিদ্যুৎ অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তায় আদম আলীর নামে মিটারের স্থান পরিবর্তন করে রাস্তার পূর্ব পাশের পিলার থেকে অবৈধ সংযোগ দিয়ে অটোরিকশা ভাড়া আদায়ের ব্যবসা খুলেছেন। ২০১৮ সাল থেকে ঋণের ভারে চাপা পড়ে এনামুল করিম এখন অন্ধকারে হাঁটছেন। কিন্তু এখনও তার গ্যারেজে বিদ্যুতের মিটার লাইনচ্যুত অবস্থায় ইনস্টল করা আছে।
আনসার আলী বলেন, আমার বাবা ১৯৯৮ সাল থেকে ছোট মাকে নিয়ে দোকানের পেছনে আলাদা থাকতেন। আমরা তিন ভাই আলাদা বাড়িতে থাকতাম। ২০০৬ সালের ১০ নভেম্বর বাবা মারা যান। ২০০৭ সালে সিডারের বন্যায় বাবার দোকান ধ্বংস হয়ে যায়। কয়েকদিন পর বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন এসে মিটার খুলে দেন। এখন বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন জানে না কে মিটার দিয়েছে। আমরা তিন ভাই নিজেদের নামে মিটার এনেছি এবং ব্যবহার করছি। এনামুল করিমের বাসায় কাউকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। পল্লী বিদ্যুতের কলাপাড়া জোনাল অফিসের ডিজিএম সজিব পাল জানান, আদম আলীর প্রয়ানের কারণে তার নামে বিদ্যুৎ বিল দেওয়া হয়েছে তার ছেলে আনসার আলীর নামে। এনামুল করিম আদম আলীর মিটার অবৈধভাবে ব্যবহার করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য আদম আলীর ছেলে আনসার আলীকে বিদ্যুৎ অফিসে তলব করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাবা মারা যাওয়ার পরে সিডরে বাবার দোকান ভেঙ্গে তছনছ করে দিয়ে যায়। তৎকালীন সময়ে উক্ত দোকানে বাবার নামে একটি বৈদ্যুতিক মিটারও লাগানো ছিলো। সেই মিটারটি সিডরের কারনে ভেঙ্গে যাওয়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ খুলে নিয়ে যায়। ঘটনাটি প্রায় ১৫ বছর আগের। এখন ১৫ বছর পরে সেই বিচ্ছিন্ন মিটারে বিল এসেছে প্রায় ১ লাখ ৮৫ হাজার ৮৪১ টাকা এমনটাই বর্ননা করেন ভুক্তভোগীর ছেলে আনসার আলী।