নিয়তি মানুষের জীবনে সবচেয়ে অনিশ্চয়তার একটি বিষয়। সৃষ্টিকর্তা যদি কারো উপর দয়া বর্ষণ করে তাহলে তাকে কোনভাবেই স্তব্ধ করা যায় না। তার একটি জ্বলজ্বলে উদাহরণ বরিশালের মেয়র। তার জীবনে শৈশব জীবন ছিল একটি ভ”য়াবহ ঘটনাযুক্ত, যিনি তার গুলিবিদ্ধ মায়ের কোল থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন, যেটা কখনোই কেউ আশা করেনি। বরিশালের মেয়র সেই সময় অবুঝ শি”শু থাকলেও এখন তিনি বারবার স্মৃতিরোমন্থন করেন সেই ভ”য়াল সময়ের।
আজকের বরিশাল সিটি করপোরেশেনর মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ১৯৭৫ সালে ছিলেন মাত্র দেড় বছর বয়সী এক শি”শু, যিনি অলৌকিকভাবে মিন্টো রোডের বাসায় গু”লিবি’দ্ধ মায়ের কোলের মধ্যে থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন, তিনি এখন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র। একান্ত আলাপচারিতায় তিনি অশ্রুসিক্ত চোখে বলেন, গু”লিবিদ্ধ আমার মায়ের কোলে বেঁচে গেছি। আমি ভাবতে পারি না যে, মা আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন চিরতরে। তবে মা দেখছেন তার ছোট সন্তানকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত করেছেন নগরবাসী।
স্বল্প সময়ে নিজের মেধা, প্রজ্ঞা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা দিয়ে লাইমলাইটে আসা উদীয়মান সূর্য সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশকে শিকড় থেকে শিখরে নিয়ে এসেছেন, দেশকে আলোকিত করেছেন, বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল তিনি।
উন্নয়নের ছোঁয়ায় আজ আলোকিত বরিশাল। শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতির অঙ্গনে। সাদিক আবদুল্লাহ ২০১৮ সালের ৩০শে জুলাই অনুষ্ঠিতব্য বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হন। তিনি বঙ্গবন্ধুর বোন জামাতা শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের জ্যেষ্ঠপুত্র মন্ত্রী পদমর্যাদার পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের এক নম্বর সদস্য ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি’র জ্যেষ্ঠপুত্র।
তার পূর্বপুরুষদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ নিজেকে শুধু একজন যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবেই দেখেননি; দলের নেতা-কর্মীদের আশা ও আস্থার প্রতীক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। বিএনপির দখলে থাকা বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র পদটি পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বরিশাল নগরীকে তিলোত্তমা অপরূপ নগরীতে রূপান্তরের মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন সাদিক আবদুল্লাহ।
১৫ আগস্ট ভ”য়াল কালরাতে রক্তঝরা অচিন্তনীয় বিয়োগান্তক অধ্যায়ের শোকগাঁথায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সঙ্গে দাদা তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ও চার বছরের ভাই সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাতসহ পরিবারের অনেক স্বজনকে হারিয়েছেন সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। ওই রাতে অলৌকিকভাবে তার (সাদিক) বাবা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, মা শাহান আরা বেগম এবং তার দেড় বছরের ছেলে সাদিক আবদুল্লাহ গু”লিবিদ্ধ হয়ে বেঁচে যান। ঘা”তকের বু’/লেটে স্বজন হারানো ও অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করা মা শাহান আরা বেগম ও বাবা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর মতো সাদিক আবদুল্লাহও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করেছেন। হাসনাতের স্ত্রী শাহান আরা দুই বছর আগে প্রয়াত হন।
৭৫-পরবর্তী সেনাশাসক জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এবং ১/১১ সা”মরিক সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মিথ্যা মামলাসহ নানা ষড়য’ন্ত্রের শিকার হন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও তার পরিবার। তবে সব ষড়যন্ত্র ও ষড়যন্ত্রের পরও এই পরিবারই বরিশালের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একমাত্র ভরসা ও শেষ আশ্রয়স্থল।
আজও তারা অনুভব করেন স্বজন হারানোর বেদনা এবং ভয় ও আ’ত’/ঙ্কের অন্ধকার রাতের রক্তাক্ত অধ্যায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারসহ সেরনিয়াবাত পরিবারের ওপর ঘা”তকরা হাম”লা চালায়। ওই দিন ভোর সাড়ে ৫টার দিকে কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাতা ও তৎকালীন মন্ত্রী (বঙ্গবন্ধুর শ্যালক) আবদুর রব সেরনিয়াবাতের ২৭ মিন্টো রোডের বাসায় পরিকল্পিতভাবে হা”মলা চালানো হয়। তাদের পরিকল্পনা সফল করার জন্য, ঘা”তকরা ভারি মে”শিনগান, দ্রুতগতির জিপ এবং প্রচুর পরিমাণে গো”লাবা”রুদ ও বুলে”টে সজ্জিত ল্যা’ন্সারের একটি প্লাটুন নিয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্যতম গণহ’/’ত্যা শুরু করে। আবদুর রব সেরনিয়াবাতের মিন্টো রোডের বাসায় পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন ও বরিশালের একটি ব্যান্ড দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, হাম”লাকারীরা প্রথমে বাড়ির নিরাপত্তাকে নিষ্ক্রিয় করতে দ্রুত পুরো বাড়িটি ঘিরে ফেলে। শুরু হয় গো’লাগু”লির বৃষ্টি। গু”লির শব্দে বাড়ির সবাই আত’ঙ্কি/ত হয়ে জেগে ওঠে। ব্যাপক হাম”লার একপর্যায়ে হ’/ত্যাকারীরা ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। বাড়িতে হাম”লার শুরুতে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত তার বাসার লাল ফোনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ মনিকে বিষয়টি অবহিত করেন এবং বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ির আশপাশে একই অবস্থা বলে জানতে পারেন। এতে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত তাৎক্ষণিকভাবে হতবাক হয়ে যান। এ সময় আবদুর রব সেরনিয়াবাত মুখে একটি মাত্র কথা বলেন, ‘হে আল্লাহ, প্রদীপ জ্বালানোর মতো পরিবারকে তাওফিক দান করুন’। ঠিক সেই মুহূর্তে ঘা”তক সৈ”ন্যরা দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে সবাইকে নিচতলায় নিয়ে আসে।
বরিশালে আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার স্ত্রী আমিনা বেগম, মেয়ে বেবি ও বিউটি সেরনিয়াবাত, ছেলে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত, আরিফ সেরনিয়াবাত, শহীদ সেরনিয়াবাত, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর স্ত্রী শাহান আরা বেগম ও তার সন্তানরা উপস্থিত ছিলেন। খু”/নিরা বন্দুকের মুখে দ্বিতীয় তলা থেকে সবাইকে নিচতলায় নিয়ে এলে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ৪ বছর ১ মাস ২৩ দিনের শি”/শুপুত্র সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাত মায়ের কোলে যেতে চাইলে শহীদ সেরনিয়াবাত তাকে তুলে নেন। খু”নিরা পরিবারের সদস্য ও অন্যান্য স্বজনদের একটি কক্ষে আটকে রাখে। এ সময় আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের স্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর বোন আমিনা বেগম ঘা”তকের দাম্ভিকতায় ভী’ত হয়ে জিজ্ঞেস করেন- বাবা, তোমরা কি আমাদের মে”রে ফেলবে? তখনই শুরু হয় খু’/নিদের নৃ”শং/স ব্রাশফা”য়ার।
আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার স্ত্রী আমিনা বেগম, পুত্রবধূ শাহান আরা বেগম, শহীদ সেরনিয়াবাত ও তার কোলে থাকা সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাতসহ অন্যরা ঘা”/তকের ক্রমাগত ব্রাশফা’/য়ারে একে একে গু”/লিবি”দ্ধ হন। কোমরে গু’/লিবি”দ্ধ হয়ে কাঁদছিলেন শাহান আরা বেগমসহ অন্যরা। খু’/’নিরা এ অবস্থায় চলে যায়। এ সময় আহত বিউটি সেরনিয়াবাত রক্তা”/ক্ত রব সেরনিয়াবাতকে চেপে ধরে চিৎকার করলে ঘা’/তকরা ফিরে এসে দ্বিতীয় রাউন্ড গু”/লি চালায়। হ’/’ত্যাকারীর নি”র্ম/ম ১৬টি গু”/লি বেবি সেরনিয়াবাতের শরীরে বিদ্ধ করে। সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন হাসনাত আবদুল্লাহর মেয়ে কান্তা সেরনিয়াবাত ও দেড় বছরের ছেলে সাদিক। বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, আমার স্বপ্ন বরিশালের মানুষের জন্য একটি নিরাপদ শহর প্রতিষ্ঠা করা। লিখেছেন- সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক সোহেল সানি
উল্লেখ্য, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ এখন সেখানকার একজন জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি বরিশাল সিটির উন্নয়নের জন্য নানা ধরনের পরিকল্পনা করেছেন। বরিশালকে একটি আধুনিক সিটি হিসেবে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি আশা করেন, বরিশাল একদিন দেশের একটি অন্যতম নগরী হিসেবে গড়ে উঠবে। তিনি বাকি জীবনটা মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চান বলেও জানান।