২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট গঠন করা হয়েছিল। জোটের মুখপাত্রের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল মোহাম্মদ নাসিমকে ( Mohammad Nasim ), তার দায়িত্ব ছিল নির্বাচনী ঘোষণার তফসিল পর্যন্ত জোটের কর্মসূচি চালিয়ে নিয়ে যাওয়া। তখন এই বিষয়টি ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের ( Awami League government ) জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ১৪ দলীয় জোট সরকারের ভিতরে অনেক দলই শরীক হয়েছিলেন, দলের মুখপাত্র হিসাবে বাংলাদেশ জাসদ ( Bangladesh Jasad ) অবস্থান নেন, আওয়ামী লীগের পক্ষে ১৪দলীয় জোট গঠনের পরই শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ১৪দলীয় জোট নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।
জোট নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মূল কারণ ছিল, প্রতিটি দলই মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে কাজ করেছিল। স্বাভাবিকভাবেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রশ্নে তাদের ভূমিকা থাকবে অন্যতম পর্যায়ে। ১৪ দলীয় জোট সরকারকে প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয় বলে মনে করেছিলেন বিভিন্ন পর্যায়ের শীর্ষ রাজনীতিবিদরা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। দীর্ঘ তিন বছর পর, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ( Sheikh Hasina ) সঙ্গে, পুনরায় বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন ১৪ দলীয় জোট নেতারা।
সকাল সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে জোটকে আরও সুসংগঠিত ও সক্রিয় করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরবেন শরিক দলগুলোর নেতারা। এছাড়া জোটের সাংগঠনিক কৌশল নির্ধারণ এবং শরিকদের বিভিন্ন বিষয় নিয়েও আলোচনা হবে। একইসঙ্গে মূল্যবৃদ্ধি ও দুর্নীতিসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরবেন জোট নেতারা।
এদিকে ১৪ দলীয় জোট বাংলাদেশ জাসদ ( Bangladesh Jasad ) (আম্বিয়া) আজকের বৈঠকে যাচ্ছে না। তারা বলছে ১৪ টি দল এখন ডেডইস্যু। এই জোট নিয়ে চালিয়ে থাকার কোনো মানে নেই।এর আগে ৩০ ডিসেম্বর ( December ) ২০১৮ নির্বাচনের কয়েকদিন আগে জোট নেতাদের সঙ্গে শেষ বৈঠক করেন তিনি। ওই নির্বাচনের মাধ্যমে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এলেও ১৪ দলের শরিকদের কেউই আওয়ামী লীগ সরকারের ( Awami League government ) মন্ত্রিসভায় স্থান পায়নি। আগের দুই মেয়াদে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির কোনো সদস্যই মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি।
বৈঠক প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া গনমাধ্যমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ১৪ দলীয় জোটের বৈঠক ডেকেছেন। কিন্তু আমরা সেখানে যাচ্ছি না। এটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তিনি আরও বলেন, ১৪টি জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলের ভূমিকা কী? এখানে জোটের ভূমিকা কী? জোটের কোনো কাজ এখন আর দেখি না। সরকার ও তার মন্ত্রীরা যা খুশি তাই করছে। জোট থেকে শুধু আওয়ামী লীগের দিনগুলো পালিত হয়। এর আগে জোটের নেতাদের সঙ্গে সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এখন দেশ কীভাবে চলবে তা নিয়ে জোটের সঙ্গে কোনো আলোচনা নেই। তাই জোটের আর কোনো কাজ নেই। তাই জোটের বৈঠকে যাওয়ার দরকার নেই।
১৪ দলীয় জোটে আপনি আর নেই কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৪ দল এখন ডেড ইস্যু। এই জোট নিয়ে চালিয়ে থাকার কোনো মানে নেই। তবে আজকের বৈঠকে অন্য সব শরিক দলের নেতারা অংশ নেবেন। এরই মধ্যে প্রতিটি দলের শীর্ষ দুই নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বৈঠকে ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ দলের উপদেষ্টা পরিষদ ও সভাপতিমণ্ডলীর একাধিক নেতা উপস্থিত থাকবেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, আমি ও সাধারণ সম্পাদক আমাদের দলে অংশ নেব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বৈঠকে অনেক বিষয়ে আলোচনা হবে। সমসাময়িক পরিস্থিতি, রাজনীতি সব নিয়েই কথা বলব। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শিরীন আক্তার বলেন, ১৪ দল একটি আদর্শিক জোট। এই জোট একটি আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত। সাম্প্র”দায়িক সমস্যা, জ/”ঙ্গিবাদ, স ”ন্ত্রাস, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সব নিয়েই আলোচনা হবে। আগামী দিনে ১৪ দলীয় জোটের কার্যক্রম আরও জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
তিনি বলেন, “আমাদের বৈঠকটি বেশ কিছু কারণে জরুরি হয়ে পড়েছে। সেখানে সব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, আমাদের দলের দুজন সদস্যকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা ১৪ দলের অঙ্গীকার নিয়ে কথা বলব যাতে আমরা এ থেকে সরে না যাই। এছাড়া মানুষের সমস্যা যেমন দ্রব্যমূল্য, দুর্নীতি, সুশাসন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কথা বলব।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া গনমাধ্যমকে বলেন, আমাদের দলের দুই সদস্যকে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমরা দুজনেই যাব। বৈঠকের কোনো এজেন্ডা সম্পর্কে তিনি জানেন না বলে জানান। কিন্তু আমরা বসলে অনেক বিষয়ে কথা হবে।বাংলাদেশ গণআজাদী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এসকে সিকদার বলেন, আমরা দীর্ঘদিন পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেব। জোটকে শক্তিশালী করার বিষয়ে আলোচনা হবে।
প্রসঙ্গত, ১৪ দলীয় জোট সরকার গঠনের বিভিন্ন তফসিল অনুযায়ী বেশ কিছু অঙ্গীকারনামা ছিল। আলোচ্য বিষয় হিসেবে, অঙ্গীকারনামা সহ জোট সরকারকে আরো কিভাবে শক্তিশালী করা যায়, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা জোরদার করা হবে জানান ১৪ দলীয় জোট নেতারা। সামনের নির্বাচনে জোট সরকারের সাথে পুনরায় কোন বাধা বিঘ্নতা আসবে কিনা, সেটি আলোচনার মাধ্যমে জানা যাবে। এছাড়াও ১৪ দলীয় জোট সরকারের অন্তর্ভুক্ত দলের তফসিল অনুযায়ী সব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
খবর যুগান্তরের