বিবাহ হল উদযাপন, আমরা সাধারণত জানি। নারী-পুরুষ একে অপরের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় চিরকালের জন্য। অনেক সময় সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়, যা বিবাহ বিচ্ছেদের দিকে নিয়ে যায়। দাম্পত্য বিচ্ছেদ মানে বিবাহ বিচ্ছেদ, যা আমাদের সমাজে ভালোভাবে নেওয়া হয় না। তাই পরিবারকে টিকিয়ে রাখতে অনেকেই নীরবে কষ্ট পান। কিন্তু পৃথিবীতে এমন কিছু দেশ আছে যাদের কাছে বিবাহ বিচ্ছেদ মানেই সুখ।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মৌরিতানিয়ায় এই অদ্ভুত অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়, অর্থাৎ ডিভোর্স পার্টি। ডিভোর্স মানেই তাদের জন্য সুখ। এদেশের নারীরা হাসিমুখে ডিভোর্স পেপারে সই করেন। বিবাহবিচ্ছেদ তাদের মনে দাগ কাটে না, অনুশোচনা তৈরি করে না। বিবাহবিচ্ছেদের সময়, কোন দুঃখ তাদের স্পর্শ করে না। একটি অনুষ্ঠানে বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণা করা হয় – আমি তালাকপ্রাপ্ত, আমি এখন অবিবাহিত, আমি একটি নতুন সম্পর্কের জন্য প্রস্তুত।
পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশে যুগ যুগ ধরে বিবাহবিচ্ছেদের এই অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। এ পার্টিতে নারীরা নাচ-গানের পার্টির পাশাপাশি বাহারি খাবারের আয়োজন করে। সবাই খুশি। বিচ্ছেদ যার হবে সেই নারী হাতে মেহেদী এবং নতুন পোশাকে নিজেকে সাজিয়ে নেন। মুসলিম দেশ হলেও এখানে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা সবচেয়ে বেশি।
মৌরিতানিয়ায়, সবাই সাধারণত ৪-৫ বার বিয়ে করে। কেউ কেউ ১০-১৫ বার বিয়ে করেন। মৌরিতানিয়ায় বিবাহবিচ্ছেদের উচ্চ হারের একটি কারণ হল মাতৃতান্ত্রিক পরিবার। মাতৃতান্ত্রিক পরিবার হওয়ায় এখানকার মহিলারা যে কাউকে তালাক দিয়ে নতুন সংসার শুরু করতে পারেন।
সমাজবিজ্ঞানী নাজওয়া আল কাত্তাব মৌরিতানিয়ায় নারীদের নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বলেন, এখানে বিবাহবিচ্ছেদ এত সাধারণ হওয়ার একটি কারণ হল মুররা তাদের পূর্বসূরিদের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে ‘মাতৃতান্ত্রিক প্রবণতা’ পেয়েছে। অন্যান্য মুসলিম দেশের তুলনায় এখানকার নারীরা অনেক বেশি স্বাধীন। এখানে বিবাহবিচ্ছেদের কারণে কাউকে ছোট করে দেখা হয় না। অন্যদিকে তালাকপ্রাপ্ত নারীদেরকে অভিজ্ঞ বলে বিবেচনা করা হয়। তাই সমাজে তালাকপ্রাপ্ত মেয়েদের চাহিদা বেশি।