“বাংলাদেশের গণতন্ত্র লাইফ সাপোর্টে”- ভারতের অফিসিয়াল সাংবাদ মাধ্যম পিটিআই পরিবেশিত প্রতিবেদন
”১৪ সালের বাংলাদেশের নির্বাচন ছিল বিতর্কিত” – ১০ বছর পরে ভারতের স্বীকারেক্তি।
আগামী বছরের নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের আগেই বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। দেশটির রাজনৈতিক ব্যবস্থা এখন রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ-একদল অলিগার্চ প্রচুর আর্থিক সুবিধা ভোগ করছে এবং তারা বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রাখার জন্য প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করেছে।
আসন্ন সাধারণ নির্বাচন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের জন্য রাজপথের বিরোধী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল থেকে ব্যাপক চাপ বাড়ছে। এ দাবিতে তারা একের পর এক বিশাল সমাবেশের মাধ্যমে রাস্তায় নেমেছে। তবে ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন করতে চায়।
২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে হাসিনা ক্ষমতায় আসেন। তবে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন দুটি বিতর্কে পরিপূর্ণ ছিলো। ২০১৪ সালের নির্বাচন বিরোধীরা বয়কট করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়াসহ প্রধান উদার গণতান্ত্রিক দেশগুলো একটি নতুন ভোটের আহ্বান জানিয়েছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিরোধীরা অংশগ্রহণ করলেও ক্ষমতাসীন দলের দ্বারা বিরোধীদের দমন এবং ব্যাপক ভোট কারচুপির অভিযোগে ভোটটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ঐ নির্বাচনের ৫০টি আসনের মধ্যে ৪৭টিতেই একাধিক অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে।
আগে বাংলাদেশে নির্বাচন উৎসবের মতো ছিল। কিন্তু এখন তরুণ প্রজন্ম বুঝতে পারছে, তাদের নেতা নির্বাচন করার মৌলিক অধিকারকে দমন করা হয়েছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন তাদের বাক স্বাধীনতা ও সমালোচনা করার অধিকারকে খর্ব করেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং সমালোচক ও বিরোধী ব্যক্তিদের জেলে পাঠানোর অভিযোগ করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ জনেরও বেশি লোক নিখোঁজ হয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে নিরাপত্তা বাহিনী ৬০০টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িত। ঢাকা সেনানিবাসে ’আয়নাঘর’ নামে একটি গোপন কারাগার খুঁজে পেয়েছে, যেখানে নিখোঁজ ব্যক্তিদের আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অভিজাত আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন এবং এর ছয়জন প্রাক্তন কর্মকর্তার পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টও মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দুই প্রাক্তন পুলিশ কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। নিউইয়র্ক টাইমস উল্লেখ করেছে, বিচার বিভাগের সাথে রাজনীতি কতটা জড়িয়ে পড়েছে তার প্রমাণ লক্ষ লক্ষ বিরোধী কর্মীকে প্রতিদিন আদালতে হাজিরা দিতে হয়। নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ১৯৮টি মামলা করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে, বর্তমান সরকারের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্কযুক্ত রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সিঙ্গাপুর এবং অন্যান্য জায়গায় বাড়ি কিনেছেন এবং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন বলে জানা গেছে।
ওয়ার্ল্ড জুরিস্ট প্রজেক্ট তার আইনের শাসন সূচকে ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে ১২৭ নম্বরে রেখেছে। ফ্রিডম হাউস দেশটিকে ‘আংশিকভাবে মুক্ত’ হিসাবে স্থান দিয়েছে, এবং সর্বশেষ ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম সূচকে বাংলাদেশকে ১৬৩ নম্বর স্থানে রাখা হয়েছে, যা আফগানিস্তান (১৫২) এবং স্বৈরাচারী কম্বোডিয়ার (১৪৭) চেয়ে নিচে।
দেশের অর্থনীতি এখনো টালমাটাল, বাড়ছে বেকারত্ব। সৌদি আরব, মিশর এবং ইরানের চেয়ে বৃহত্তর মুসলিম জনসংখ্যা সম্বলিত তারুণ্যে পূর্ণ একটি দেশের জন্য কার্যকর গণতন্ত্রই আশার আলো দেখাতে পারে। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভবত বাংলাদেশের স্বৈরাচারী শাসনের পথ অবরুদ্ধ করবে এবং বৃহত্তর জবাবদিহিতার পথ প্রশস্ত করবে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মানলে আগামী নির্বাচন বয়কট করতে পারে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। তারপরেও, তারা সম্ভবত দেশব্যাপী বিক্ষোভ অব্যাহত রাখবে।
পুলিশ, বিচার বিভাগ এবং রাষ্ট্রীয় আমলাদেরকে হাসিনার সমর্থক হিসেবে দেখা হয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য তাদের ভিসা নীতি পরিবর্তন করেছে যাতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কারসাজি করার দায়ে যুক্ত ব্যক্তিদের ওপর অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা এবং ভিসা নিষেধাজ্ঞার মতো কড়া ব্যবস্থা নিতে পারে।