পদ্মা নদীর উপর নির্মিত পদ্মা সেতু একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এটি বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু। সেতুটি মুন্সীগঞ্জের মাওয়া, লৌহজংকে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের সাথে সংযুক্ত করেছে। ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল উত্তর-পূর্ব অংশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। মূল সেতুটি নির্মাণ করেছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার এবং এর অ্যাপ্রোচ রোড ১২.১১৬ কিলোমিটার।
১০ বছর অপেক্ষার পর পূরণ হতে যাচ্ছে প্রেমিক যুগলের স্বপ্ন। অবশেষে তাদের প্রেম জীবনের শেষে বিয়ে করতে যাচ্ছেন তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে প্রেমে পড়েন গোপালগঞ্জের সানজিদা হোসেন ত্রিমা। দূরত্ব এবং নদীপথে কঠিন যাত্রার কারণে ঢাকার সাভারে হাসান মাহমুদের পরিবারের বাধার কারণে বিয়ে হয়নি। এ জন্য তিনি পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রত্যাশায় ১০ বছর ধরে অপেক্ষা করছেন। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্মিত হয়েছে সেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু। ২৫ জুন জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন করা হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এ কারণে পদ্মা সেতুর দুই পাড়ের মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এর মধ্য দিয়ে এই পাগল প্রেমিক যুগলের স্বপ্নও পূরণ হতে যাচ্ছে। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই জুটি। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন দম্পতি।
এই প্রেমিক যুগলের বিয়ের নিমন্ত্রণপত্রও পদ্মা সেতুর নকশায় হুবহু তৈরি করা হয়েছে। হাসান-ত্রিমার দুই পরিবার বিয়ের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। বর-কনের কাফেলা পদ্মা সেতু পার হয়ে কনের বাড়িতে যাবে। প্রেমিক হাসান মাহমুদ সাভার পৌরসভার বাসিন্দা। আর প্রেমিকা গোপালগঞ্জ সদরের বাসিন্দা। হাছান মাহমুদ শিল্পকলা একাডেমির জনসংযোগ কর্মকর্তা এবং সানজিদা হোসেন ত্রিমা একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান হবে সম্পূর্ণ স্থানীয় রীতি মেনে। গত ১৬ জুন হাছান মাহমুদের গায়েহলুদ সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়। ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন কনের বাড়ি যাবে বরের গাড়ি। আগামী ১ জুলাই সাভার পৌর কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে যেমন মানুষের নজর কেড়েছিল, তেমনি উদ্বোধনের দিনেও এই প্রেমিকের সিদ্ধান্ত মানুষের নজর কেড়েছে। তাদের স্বপ্নের সেতু নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এই দম্পতি। এমনকি তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে পাটুরিয়া দৌলতদিয়া পয়েন্টে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের অনুরোধ জানিয়েছেন। প্রেমিকা সানজিদা হোসেন ত্রিমা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে হাসান মাহমুদের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। একপর্যায়ে এই বন্ধুত্ব প্রেমে পরিণত হয়। তারপর আমরা বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিই। নদীপথে কঠিন যাত্রা ও দূরত্বের কারণে হাসানের পরিবার বিয়েতে বাধা দেয়। ফলস্বরূপ, এই দিনটির জন্য আমাদের ১০ বছর অপেক্ষা করতে হবে। পদ্মা সেতু হলে আমরা বিয়ে করব এমন সিদ্ধান্ত নেইনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের মনের আশা পূরণ করেছেন। আজ পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। তাই এই দিনটিকে স্মরণীয় ও আরাধ্য করতে আমরা উদ্বোধনী দিনেই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আমি তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। হাছান মাহমুদ বলেন, শুধু নদীপথে কষ্টকর যাত্রা ও দীর্ঘ দূরত্বের কারণে আমার পরিবারের সদস্যরা আমাদের বিয়েতে রাজি হননি। তাই এই দিনটির জন্য দীর্ঘ ১০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় আজ আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। সে কারণে পরিবারের মতামতে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। দেশবাসীর কাছে আবেদন আমাদের জন্যও দোয়া করবেন।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা না থাকলে পদ্মা সেতু নির্মাণে কমপক্ষে বিশ বছর সময় লেগে যেত এবং প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়াতো আরো ১৫ বিলিয়ন ডলার বেশি বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ার ইসলাম। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় প্রত্যয় ও দূরদর্শিতার কারণে দেশের সর্ববৃহৎ যোগাযোগ অবকাঠামোর নির্মাণকাজ সময়মতো এবং ব্যয় না বাড়িয়ে শেষ হয়েছে। শনিবার মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ার ইসলাম তার উদ্বোধনী বক্তব্যে এ কথা বলেন।