শুধু একই নামের কারণে বিপজ্জনক অপরাধী না হয়ে সাধারণ মানুষকে জেলে পাঠাচ্ছে পুলিশ। তারা অপরাধ না করেই বছরের পর বছর কারাগারে বন্দী। কেউ কেউ হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়ে মুক্তি পাচ্ছেন। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরাও শাস্তির আওতায় আসছে। তবে থেমে নেই এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি। এর কারণ, পুলিশ রিপোর্টেই অনুসন্ধান স্লিপে রহস্যজনক ত্রুটি প্রকাশ পেয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ পুলিশ বা বিপি ফরমে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও ছবি থাকলে ভুল হবে না।
সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা বলছেন, ব্রিটিশ আমল থেকে বাংলাদেশ পুলিশ বা বিপি ফরম ৭৭ সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। ওই ফর্মে পর্যাপ্ত তথ্য না থাকায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। আসামিদের নামের সঙ্গে বাবার নামের আংশিক মিল থাকায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়। ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিকে শনাক্ত করার পর পুলিশ তার স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা সংশ্লিষ্ট থানা থেকে এই ফর্ম অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহ করে। এরপর তাকে শনাক্ত করে গ্রেফতার বা আটক করা হয়। তবে, পুলিশ বলছে যে এই ফর্মটি 1943 সালের পুলিশ রেগুলেশনের 379 ধারার অধীনে ডিজাইন করা হয়েছে। যেখানে শুধুমাত্র অভিযুক্তের নাম, পিতার নাম এবং ঠিকানা রয়েছে। একই এলাকায় একই নামের একাধিক ব্যক্তি থাকলে তাদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে।
বিগত চার বছরে এমন নির্দোষ কারাদণ্ডের কারণ খোদ পুলিশি তদন্তেই উঠে এসেছে, ‘ব্রিটিশ আমলের তদন্ত স্লিপ’-এর কারণে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। তাই সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে ব্রিটিশ আমল থেকে ব্যবহৃত পুলিশের সার্চ স্লিপ পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে পুলিশের তদন্ত কমিটি।
অপরাধ না করে একই নামে ৫ বছরের জেল
সাহাবুদ্দিন বিহারী ওরফে আরমান নামে এক ব্যক্তিকে ২০০৫ সালে পল্লবী থানার একটি মাদক মামলায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা গ্রেপ্তার করে। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পেয়ে পলাতক হন। ২০১২ সালের ১ অক্টোবর আরমানকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য আদালতের নির্দেশ আসে ডিএমপিতে। ডিএমপি সদর দফতর আরমানের নাম ঠিকানাসহ একটি তদন্ত স্লিপ পাঠিয়ে তাকে গ্রেপ্তারের জন্য পল্লবী থানাকে নির্দেশ দেয়। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারি মিরপুরে আরমান নামে বেনারসিপল্লীর এক নিরীহ কারিগরকে গ্রেফতার করে পল্লবী থানা-পুলিশ। তার নাম ও বাবার নামের আংশিক মিল থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেপ্তারের পর তিনি পাঁচ বছর জেল খাটেন।
পরবর্তীতে তার মা বানু খাতুন ৭ জুলাই, ২০১৯ তারিখে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। তারপর নিরপরাধ ৪ বছর ১১ মাস ২২ দিন কারাভোগের পর ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি মুক্তি পান তিনি। হাইকোর্ট বিষয়টি তদন্তের জন্য পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেন। আরমানকে অবৈধভাবে আটকের ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
আরমানের ঘটনা তদন্তে পিবিআই পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খোরশেদ আলমের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ সদর দফতর। কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল করিম ও সদস্য পুলিশ পরিদর্শক মোঃ কবির হোসেন। ঘটনা তদন্ত করে কমিটি চলতি বছরের ৭ এপ্রিল সাত পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা ও অবহেলার অভিযোগে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে।