বেগম জিয়ার চিকিৎসার দাবিতে বর্তমান সময়ে বেশ সরব রয়েছে বিএনপি দলের নেতাকর্মীরা। সম্প্রতি তার শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হয়েছে। অবশ্যে তিনি দীর্ঘ দিন ধরেই শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন জরুরি ভিত্তিতে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার প্রয়োজন। তবে এই বিষয়ে সরকার কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এরই সূত্র ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বর্তমান সরকার এবং বেগম জিয়ার প্রসঙ্গে তুলে বেশ কিছু কথা জানালেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, আমরা গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে পথ চলতে চাই। সেই পথে চলতে গিয়ে যখন বাধাপ্রাপ্ত হব, তখন আর নিয়মের তোয়াক্কা করব না। আরও বলেন, আজ কর্মসূচি করার বিষয়ে প্রশাসনের কাছে অনুমতি চাইছি, সেই দিন হয়তো অনুমতিও চাইতে নাও পারি। প্রশাসন যদি জনগণের মুখোমুখি হতে চায় সেই চ্যালেঞ্জ অবশ্যই মোকাবিলা করতে হবে। কারণ, আমরা পাকিস্তানের সুদক্ষ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে নওগাঁয় সমাবেশের অনুমতি না পেয়ে মঙ্গলবার স্থানীয় একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন। এ সময় আরও ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহসাংগঠনিক সম্পাদক ওবায়দুর রহমান চন্দনসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। সরকারের সমালোচনা করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সম্প্রতি এই সরকারের একজন পদত্যাগী প্রতিমন্ত্রীকে কানাডা গ্রহণ করেনি। কোথাও তার জায়গা হয়নি। সরকারকে বলব, যেহেতু পালাতেও পারবেন না, দেশেই থাকতে হবে তাহলে জনগণের সঙ্গে আপস করেন। দেশের মানুষের অধিকার ফেরত দেন, ক্ষমতায় থাকেন বা নাই থাকেন শান্তিতে থাকার ব্যবস্থা করেন। দেশে অশান্তি সৃষ্টি করলে ফলাফল ভালো হবে না। আমাদের অবস্থা খারাপ হওয়ার কিছু নাই। গত ১২ বছর ধরেই তো খারাপ অবস্থায় আছি। মৃ/ত্যু/ই যেখানে অবধারিত, সেখানে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
দলের অবস্থান তুলে ধরে গয়েশ্বর বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, বিদেশে তার চিকিৎসা চাই। আমরা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই, যে নির্বাচনে দেশের জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। দেশের মালিক জনগণ, আমরা জনগণের মালিকানা ফেরত চাই। কোনো ব্যক্তি দেশের মালিক নয়, অতএব ব্যক্তির ইচ্ছায় অনুযায়ী দেশ চলতে পারে না। গত ২২ ডিসেম্বর থেকে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন জেলায় জনস্রোত নামিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করে আসছে বিএনপি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রথমে মঙ্গলবার দুপুর ২টায় নওগাঁ শহরের নওজোয়ান মাঠে সমাবেশ কথা ছিল বিএনপির। কিন্তু একই সময়ে একই স্থানে জেলা যুবলীগও কর্মসূচি ঘোষণা করে। এরপর জেলা বিএনপি শহরের এ-টিম মাঠে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানেও জেলা ছাত্রলীগ কর্মসূচি ঘোষণা দেয়। পরে নওগাঁ শহরে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে।
এ প্রসঙ্গে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এ সবের অর্থ কী, দেশবাসী সবাই বুঝে। দেশে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও মতের মানুষের বাক্স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই-তা আবারও প্রমাণ করল আওয়ামী লীগ সরকার। আরও বলেন, আমাদের নেতা জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। আমাদের নেতা গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়া ৯ বছর রাজপথে আপসহীন সংগ্রাম করে স্বৈরাচার মুক্ত করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে সিসিইউতে জীবনমৃ/ত্যু/র সন্ধিক্ষণে, গণতন্ত্রের প্রশ্নে এখনো তিনি আপসহীন। আমাদের নেতা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে থেকে ফ্যা/সি/বাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। এই লড়াইয়েই দেশের জনগণ বিজয়ী হবেই হবে। খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবি জানিয়ে গয়েশ্বর বলেন, দেশের ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ মানুষ খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসা চায়। এ দাবিটা দয়া বা মায়ার বিষয় নয়। এটা খালেদা জিয়ার নাগরিক অধিকার। আমরা খালেদা জিয়ার অধিকার ফিরিয়ে দিতে সরকারকে বাধ্য করব।
শুধু বিএনপি নেতাকর্মীরাই নয়। বেগম জিয়ার চিকিৎসার জন্য দেশর বিভিন্ন শ্রেনীর বিভিন্ন পেশার মানুষ সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে। এমনকি বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের কূটনৈতিকরাও বেগম জিয়ার পক্ষ নিয়ে সরকারের কাছে বিশেষ আহ্বান জানিয়েছে তার চিকিৎসার জন্য। অবশ্যে সরকার এখনও নিজ সিদ্ধান্তেই অটুট রয়েছে।