হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ঢাকা মহানগর কমিটি গঠন করা হয়েছে। নতুন কমিটির সভাপতি হিসেবে মনোনীত হয়েছেন মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন মাওলানা মামুনুল হক। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর জামিয়া মাদানিয়া বারিধারায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত খাস কমিটির বৈঠকে এই কমিটি গঠন করা হয়।
এই বৈঠকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপিত জাতীয় পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটিতে কোনো আলেমকে না রাখায় বিস্ময় প্রকাশ করে হেফাজত। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এই বৈষম্যমূলক কমিটি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা শায়খ সাজিদুর রহমান, নায়েবে আমির আব্দুল হামীদ পীর সাহেব মধুপুর, আল্লামা জসিম উদ্দীন, আল্লামা সালাহ উদ্দীন নানুপুরী, আল্লামা আব্দুল আওয়াল, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী, ড. আহমাদ আব্দুল কাদের, মাওলানা আইয়ুব বাবুনগরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
বৈঠকে নেতারা বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে নতুন জাতীয় পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটিতে আলেম সমাজের কোনো প্রতিনিধি না থাকার বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। অতীতে, স্বৈরাচারী শাসনকালে ওলামায়ে কেরাম জাতীয় পাঠ্যপুস্তকের অসংগতি ও বিতর্কিত বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তবে বর্তমানে এই নতুন বাংলাদেশেও পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটিতে আলেমদের বাদ দিয়ে বিতর্কিত পথ অবলম্বন করা হয়েছে। আলেমবিহীন এই বৈষম্যমূলক কমিটি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ প্রত্যাখ্যান করছে।
হেফাজত নেতারা আরও বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার উপরে ভারতের প্রভাব বিস্তারের ষড়যন্ত্র অতীতে হয়েছিল, যেখানে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে ভারতের অনুগত হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেই সময়ে দেশের আলেম সমাজ জনগণকে সচেতন করেছিল এবং উচ্চকণ্ঠে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। তারা বলেন, এখনো পাঠ্যপুস্তকে কিছু ইসলামবিরোধী বিষয় রয়েছে, যা আলেমদের মাধ্যমে সংশোধন করা অপরিহার্য। এ জন্য জাতীয় পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটিতে বিজ্ঞ আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করে এটি পুনর্গঠনের দাবি জানায় হেফাজত।
নেতারা উল্লেখ করেন, গত জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারের পতনে আলেম সমাজ ও মাদ্রাসা ছাত্রদের অবদান অনস্বীকার্য। এই অবদানের মাধ্যমেই নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। সুতরাং, এই নতুন বাংলাদেশে কোনো প্রকার বৈষম্য এবং বঞ্চনা মেনে নেওয়া হবে না। হেফাজত নেতারা রাষ্ট্রের পুনর্গঠনের কাজে আলেমদের ভূমিকা প্রত্যাশা করে এবং সরকারের প্রতি সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, আলেম সমাজকে বঞ্চিত করলে তার ফল ভালো হবে না।
বৈঠকে মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিবকে সভাপতি এবং মাওলানা মামুনুল হককে সাধারণ সম্পাদক করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ঢাকা মহানগর কমিটি পুনর্বহাল করা হয়। পরবর্তী সময়ে প্রয়োজন অনুসারে এই কমিটিতে সংযোজন-বিয়োজন করা হবে বলেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।