বাংলাদেশে একটা সময়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা ছিল বড় ধরনের একটি চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে দেশে একটা সময় তৈরী হয়েছিল নানা ধরনের অস্থিতিকর পরিস্থিতি। সম্প্রতি সেই সব নিয়েই কথা বলছিলেন দেশের বর্তমান আইজিপি বেনজির আহমেদ।সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বেনজীর আহমেদ বলেন,আমাদের মনে রাখতে হবে জঙ্গিদের হুমকি শেষ হয়নি। বৈশ্বিক সন্ত্রাস বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। এটা অন্যায় হবে যদি আমাদের মধ্যে কেউ আত্মতুষ্ট হয়. এদেশের ১৬ কোটি মানুষকে সচেতন হতে হবে। যাতে সন্ত্রাস মাথা না তুলতে পারে।
ডাঃ বেনজীর আহমেদ বলেন, আমাদের দেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়, তারা রক্তপাত পছন্দ করে না, নৃশংস হত্যাকাণ্ড পছন্দ করে না। আমাদের দেশে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী মূল্যবোধ সুফি সাধকদের দ্বারা প্রচার ও প্রসারিত। ফলে আমাদের দেশে ইসলাম-প্রভাবিত মূল্যবোধ খুবই শান্তিবাদী। এজন্য জঙ্গিবাদ প্রিয় মাতৃভূমিকে বারবার ক্ষতবিক্ষত করার চেষ্টা করেও সফল হয়নি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটা ছিল আমাদের আইন-শৃঙ্খলা, জাতীয় নিরাপত্তা, ঐক্য এবং বিশেষ মুহূর্তের বিশেষ প্রয়োজনের অগ্রযাত্রা। এই দেশ বারবার সন্ত্রাসের কবলে পড়েছে। বারবার শান্তিপূর্ণ মানুষ তাদের প্রতিহত করেছে। আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেছি যে এই সন্ত্রাস বাইরে থেকে এসেছে। আমাদের দেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়, তারা রক্তপাত পছন্দ করে না, নৃশংস হত্যাকাণ্ড পছন্দ করে না।
পুলিশ প্রধান বলেন, ষাটের দশকের শেষ দিকে কমিউনিস্ট আন্দোলন দেখেছি। সে সময় পশ্চিমবঙ্গে নকশালবাদী আন্দোলনের কারণে মার্কসবাদী কমিউনিস্টরা অস্ত্র হাতে নেয় এবং এই মার্কসবাদী আন্দোলন স্বাধীনতার পর বিলুপ্ত হয়ে যায়। তালেবানরা যখন যুদ্ধ করছিল, তখন বাংলাদেশ থেকে অনেক লোক সেখানে গিয়েছিল। তারা ফিরে আসে এবং হুজি গঠন করে। কেউ কেউ নিরীহ মানুষকে হ’ত্যা’র’ চেষ্টা করে। তাও প্রতিহত করা হয়।
তখন দেখলাম জেএমবি, বাংলা ভাই, আবদুর রহমান হাজির। তার পেছনে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। যা খুবই দুঃখজনক। এই সময়ে আমাদের দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ছিল অযাচিত রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা। এ ধরনের ঘটনা আমরা আগে দেখিনি। এটাও সাধারণ মানুষ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঠেকাতে সক্ষম।
পুলিশ প্রধান বলেন, ২০১৬ সালে আল কায়েদা ও আইএস দ্বারা অনুপ্রাণিত কিছু দেশীয় সন্ত্রাসী আবারও বাংলাদেশকে আহত করার চেষ্টা করেছিল। সেটাও সাধারণ মানুষ ও সরকারের নেতৃত্বের কাছে পরাজিত হয়। এই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা সহজ ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতিই এই লড়াইয়ের মূল চালিকাশক্তি।
বেনজীর আহমেদ বলেন, আমরা জানি ইসলাম শান্তির ধর্ম। সাধারণ মানুষ যখন খুন হয়, তখন বুঝতে হবে কারা তাদের প্ররোচনায় এসব করছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আইএস ও আল-কায়েদার বিস্তার সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলেছে। এই সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো একটি নির্দিষ্ট ধর্মের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। যারা সদস্য হয়ে নিরীহ মুসলমানদের হত্যা করছে তারা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে কাজ করছে। এ কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের শান্তিপ্রিয় ধর্মকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। সরকার এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ATU প্রতিষ্ঠা করেছে। যার কারণে দেশে বর্তমানে সাত থেকে আশিটি ইউনিট লড়াই করছে।
তিনি বলেন, কয়েক বছর আগেও সাপ্তাহিক ভিত্তিতে দেশে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ছিল। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এখানকার দূতাবাসগুলোকে পারিবারিক মিশন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সরকারের নীতি ও জনগণের সহযোগিতায় আমরা বিপজ্জনক পরিবেশ থেকে আবারও জঙ্গিবাদকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছি।
প্রসঙ্গত, ড. বেনজির আহমেদ বেশ কিছু বছর ধরেই পালন করছেন পুলিশের আইজির দায়িত্ব।তবে শোনা গেছে খুব শীঘ্রই মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে তার। তার জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক।