আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সহধর্মিনী ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মদিন। আর এই উপলক্ষ্যে দেশে তার স্মৃতীচারণ করছেন সর্বস্তরের মানুষেরাই। এ দিকে তাকে নিয়ে কথা বলেছেন তার সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের আদর্শে চলার জন্য দেশের নারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমার মা কখনো না বলেনি। কিছু ফুরিয়ে গেলে বলতেন, শেষ হয়ে গেছে, আনতে হবে। তিনি যখন যে অবস্থায় ছিলেন সেই অবস্থায় হাঁটতেন এবং আমাদেরকেও একই পথে চলতে শিখিয়েছিলেন।’
সোমবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে কার্যত যোগদানকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। (৮ আগস্ট) সকাল।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার বাবার জীবনে আমার মায়ের অবদান অনেক বেশি। রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমার মা সবসময় বাবার পাশে থেকেছেন। মা ছিলেন বাবার ছায়াসঙ্গী। তিনি আমার বাবার আদর্শকে মূর্ত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার মা নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক প্রয়োজনে, চিকিৎসার জন্য বিনা দ্বিধায় নিজের টাকা খরচ করতেন। অনেক সময় অনেক নেতাকে সাহায্য করতে গিয়ে নিজের গহনা বিক্রি করে সেই টাকা পরিশোধ করতেন।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমার বাবা কখনো এই-ওটা চেয়ে আমাকে বিরক্ত করেননি। জেল থেকে বাবা যখন বলতেন, তুমি কিভাবে চালাও আমি বুঝি না। বলতেন, এটা নিয়ে ভাবতে হবে না। এটা আমার উপর ছেড়ে দিন. আমি দেখব কিন্তু সে সব দায়িত্ব নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মা জানতেন, আমার বাবা এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সব সময় কাজ করে যাচ্ছেন। এই উপলব্ধি থেকেই তিনি সবসময় তাকে পাশে থেকে অনুপ্রাণিত করেছেন। স্ত্রী হিসেবে তিনি কিছুই দাবি করেননি; বরং আব্বা যখন কোনো কিছুর প্রয়োজন হতো, তখন তিনি তা দেখতেন।
তিনি বলেন, ‘পরিবারের সবকিছু নিয়ম মেনেই করতে হতো। মাসিক বাজার কেমন হবে তার হিসাব লিখে দিতেন মা। আমার মায়ের খাতাও আছে। সেখানে গৃহস্থালির খরচের বিবরণ সুন্দরভাবে লেখা আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এই স্বাধীনতা অর্জনে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আমার মায়ের দেওয়া সিদ্ধান্তই সবচেয়ে বেশি সহায়ক হয়েছে। আওয়ামী লীগ ৬ দফা ছেড়ে ৮ দফায় গেলে এদেশের মানুষের মুক্তি কখনোই আসত না। ৭ মার্চের ভাষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আমার মায়ের মতামতও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “১৯৭৪ সালে আমার বাবা খাদ্য সচিবকে একটি গুদামে কত চাল আছে তা জানতে চেয়েছিলেন। তারপর নগদ টাকা দিয়ে চাল কেনা হয়েছিল। কিন্তু আমেরিকা সেই চাল আসতে দেয়নি। জাহাজ বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ভিক্ষ। ৭৪ মানবসৃষ্ট বলা আবশ্যক।
“আমার মা রাষ্ট্র পরিচালনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে দেখাশোনা করতেন এবং বাবাকে পরামর্শ দিতেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, “আমার মায়ের শুধু সংগ্রাম নয়, প্রতিটি ক্ষেত্রেই দূরদৃষ্টি ছিল।”
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মায়ের মতো জীবনসঙ্গী পেয়ে আমার বাবা খুবই ভাগ্যবান। আমি আমার দাদা-দাদীকেও ধন্যবাদ জানাতে চাই, যদিও আমার বাবা বড় ছেলে, তারা পরিবারের জন্য তার কাছ থেকে বেশি কিছু আশা করেননি। আর এর কারণেই বাবার পক্ষে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘আমার মা ১৫ আগস্টও তার জীবন ভিক্ষা করেননি। তিনি তার জীবনও দিয়েছিলেন। সবাই আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশের নারী সমাজ এই আদর্শ গ্রহণ করুক। জীবন শুধুমাত্র চাহিদা এবং বিলাসিতা সম্পর্কে নয়। আপনি যদি একটি আদর্শ অনুসরণ করেন তবে আপনি মানুষের জন্য অনেক অবদান রাখতে পারেন। আমি চাই আপনারা এই আদর্শ নিয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করুন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। মনে করিয়ে দিলেন শৈশবের কথা।
১৯৩০ সালের আজকের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট পরিবারের সবার সাথে নিহত হন তিনি নিজেও।এর বেশ কিছু বছর পরেই দেশের হাল ধরনের তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।