বাবা মা বৃদ্ধ হয়ে গেলে কিছু ছেলেমেয়েদের কাছে বোঝা হয়ে যায়। এসব ছেলে-মেয়েদের কারণে অনেক বৃদ্ধ বাবা-মায়ের জীবনের শেষ মূহুর্তে এসে কাটাতে হয় বৃদ্ধাশ্রমে কিংবা পথে ঘাটে। এমন ঘটনা নিত্য দিন ঘটেই চলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে সংবাদ মাধ্যমে বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে করা বিভিন্ন প্রতিবেদন দেশের মানুষে কাছে তুলে ধরেছেন সংবাদিকেরা। বর্তমান সময়ে যেখানে মানুষ তাদের নিজেদের মায়ের খোজ রাখে না, সেখানে এক যুবক ভিন্ন ধর্মের এক বৃদ্ধ নারীর সেবা দিয়ে যাচ্ছেন দীর্ঘ দিন যাবৎ।
সবার ওপর মানুষ সত্য, তাহার ওপর নাই এর যথার্থ উদাহরণ দিলেন বরিশালের যুবক রবিউল ইসলাম। ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে এই মুসলিম যুবক সাবেত্রী কর্মকার নামের এক অসহায় হিন্দু বৃদ্ধাকে মায়ের মতো লালন-পালন করছেন আট মাস ধরে। গু’রুতর অসুস্থ বৃদ্ধাকে তার বাড়িতে সেবা দেওয়ার পাশাপাশি তার আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজার জন্যও তিনি সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন।স্বার্থপরতার এই যুগে রবিউলের এমন নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দেখে হতবাক এলাকাবাসী।
৯০ বছর বয়সী পক্ষাঘাতগ্রস্ত অসহায় বৃদ্ধা সাবেত্রী কর্মকার। নি’ষ্ঠুরতার এই যুগে বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এই অসুস্থ বৃদ্ধাকে তার স্বজনদের কাছ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। তিনি তার পরিবারকে রক্ষা করার জন্য সারা জীবন অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।বয়সের কারণে শরীরে ক্লান্তি ও রোগের কারণে তাকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখেছে পরিবার।
বরিশালের গ্যাস্টারবাইন এলাকার বাসিন্দা রবিউল গত আট মাস ধরে এই বৃদ্ধাকে মায়ের মতো আগলে রেখেছেন। রাস্তা থেকে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে কয়েক মাস হাসপাতালে চিকিৎসার পর নিজ বাড়িতে আশ্রয় দেন রবিউল। এখন পরোপকারী রবিউল তার সেবা ও শুশ্রূষাসহ যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেন।
এদিকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা অনুযায়ী বৃদ্ধা সাবিত্রীর বাড়িতে কাউকে পাওয়া যায়নি। বিষয়টি জানতে পেরে জেলা প্রশাসক রবিউলের বাড়িতে যান।
রবিউল জানান, বিভিন্ন ধর্মের মানুষকে বাড়িতে আশ্রয় দেওয়ায় অনেকের সমালোচনা হলেও তিনি হাল ছাড়েননি। যতদিন বেঁচে আছি, নিজের মানুষ হিসেবে এই দায়িত্ব পালন করব।
বরিশালের জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন জানান, অসহায় বৃদ্ধা নারীকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি রবিউলকে এমন মানবিক কাজের জন্য পুরস্কৃত করা হবে। আমি আশা করি দেশের প্রতিটি মানুষ ধর্ম-বর্ণের উর্ধ্বে উঠে রবিউলের মতো মানবিক গুণাবলীতে সমৃদ্ধ হবে।
রবিউলের এমন উদার মানসিকতার প্রশংসা করেছেন দেশবাসী। এমন ভাবে সকল অসহায় মানুষ মানুষের পাশে দাড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন রবিউল। তিনি আরও বলেন, বৃদ্ধা নারী ভিন্ন ধর্মী হওয়ায় আমাকে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে তবে, আমি থেমে থাকিনি। ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে সবাই যেন সবার বিপদে এগিয়ে আসে এমন আশাব্যক্ত করেছেন রবিউল। সবার মধ্যে যেন মানবসেবার মন মানসিকতা গড়ে উঠে এমনই প্রত্যাশা রবিউলের।