হিজড়া হাবিব’: পুলিশের অঘোষিত মহা ক্ষমতাধর এক নীতিনির্ধারক!
ডিআইজি পদে থাকতেই হাবিব নিজেকে আইজির চেয়েও বেশী শক্তিশালী হিসাবে জাহির করত! বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে সম্ভবত এর চেয়ে বেশি ক্ষমতা খাটানো, দল পাকানো, এবং দুর্নীতিতে নিমজ্জিত অফিসার দ্বিতীয়টি পাওয়া কঠিন। হাবিবুর রহমান, বর্তমানে অতিরিক্ত আইজিপি। গুম-খুনের সরকারের সকল ধরণের সার্ভিস দেয়ার বিনিময়ে তিনি লাভ করেছেন বিপিএম(বার), পিপিএম(বার)। বাড়ি গোপালগঞ্জ হওয়ার সুবাদে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যেমন ঘনিষ্ট ও বিশ্বস্ত, তেমনি অনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং আর্থিক লেনদেনের যোগ্যতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালেরও খুব কাছের, ফলে ডিপার্টমেন্টে অস্বাভাবিক ক্ষমতা খাটিয়ে চলছে, তিনি বাংলাদেশ পুলিশে যোগদানকারী ১৭তম বিসিএসের অফিসার।
ছাত্র হিসেবে ব্যাক-বেঞ্চার হাবিব তার প্রথম চাকুরী জীবন শুরু করেন বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)-তে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী হিসাবে। পরিচালক মোহাম্মদ বশির উদ্দিনের অধীনে পিএ হিসাবে কাজ করতো। বশিরউদ্দিনের কাছেই হাবিবের দু’নম্বরীর হাতেখড়ি। ১৩তম বিসিএস পরবর্তী ব্যাচগুলিতে নানা রকম জালজালিয়াতি শুরু হয়, এবং সাথে কমিশনের অফিসারদের সাথে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীরাও জড়িত। পরীক্ষার খাতা পাল্টানো, প্রশ্ন ফাঁস, ফেলকে পাশ করানো ইত্যাদি নানা রকম দু’নম্বরী কারবার চলে। হাবিব ১৯৯৮ সালে পিএসসির একজন মেম্বার সিরাজউদ্দিনের সহায়তায় ১৭তম বিসিএস পরীক্ষায় খাতার টপশিট বদল করে নিজে এবং তার সহযোগি একদল বাতেন, মফিজ, হাফিজ, আনোয়ার, খন্দকার মহিদউদ্দিন, শেখ নাজমুল, সার্জেন্ট মিজানসহ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়ে ফল প্রকাশ করতে সমর্থ হন। পিএসসির একজন কর্মকর্তার মতে এই সংখ্যা ৩০ এর কম নয়। চাকরিতে যোগদানের পরে পুলিশ অফিসারদের ট্রেনিং চলাকালে সেই পিএসসি মেম্বার টাকা তুলতে সারদা ট্রেনিং সেন্টারে পর্যন্ত গিয়েছিলেন। শুরুতেই ফল জালিয়াতির এই ম্যানেজমেন্টের কারণে উপরোক্ত কর্মকর্তাগণ হাবিবকে চাকরির প্রথম থেকে বিসিএস ১৭ ব্যাচে পুলিশের নেতা হিসেবে মান্য করেন। পরবর্তীতে হাবিব নিজের পায়ের তলা শক্ত হলে তার প্রাক্তন বস বসিরউদ্দিনের পিছে লাগেন, এবং ঘোট পাকিয়ে তাকে কষ্টদায়ক স্থানে পোস্টিং করান, এমনকি তাকে দীর্ঘদিন পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করে রাখে, সর্বশেষে চাকরিচ্যুতি ঘটে বশিরের, অভিযোগ দুর্নীতির।
২০০০ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে হাবিব পুলিশে চাকুরিজীবন শুরু ডিএমপিতে সহকারি কমিশনার হিসেবে। এরপরে ভোলা জেলার লালমোহন সার্কেলে পোস্টিং থাকাকালে তিনি এবং শেখ নাজমুল আলম তৎকালীন এমপি ও আওয়ামীলীগের মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের দলদাস হিসেবে কাজ করতেন। বিএনপি নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের নানা অজুহাতে হয়রানি ও মিথ্যা মামলায় আটকে দিতেন। রাজনৈতিক মামলার আসামিদের নানা অজুহাতে রিমান্ডে এনে নিজেই মারধর করতেন হাবিব। ২০০১ সালে আওয়ামী সরকারের শেষ বছরে তার অত্যাচারের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। ঐসময় তার সার্কেল অফিসে একজন বিএনপির কর্মীকে পিটিয়ে তিনি হত্যা করেন। ২০০২ সালে তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলার দায়ের হয়। তিনি বিচারপতি শামসুদ্দিন (কালা মানিক)-এর সহায়তায় উক্ত মামলা থেকে নিজেকে খালাস করিয়ে নেন। এই পিরিয়ডে তিনি বিচারপতি ওবায়দুল হক শাহীন, শিক্ষা সচিব এন আই খান, সিনিয়র সহকারী সচিব পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদ হোসেন, সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর পিএস এবং মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, বাকশাল আমলের সাবেক এসপি মাহবুবসহ ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র’এর ঘনিষ্ট আমলাদের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপন করেন।
২০০২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত হাবিব বৃহত্তর ফরিদপুর এবং বৃহত্তর বরিশাল জেলার পুলিশ অফিসারদের সংগঠিত করে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে নীল নকশা তৈরি করেন। এ সময় তিনি ডেপুটি কমিশনার (রমনা) আতিকুল ইসলাম এবং সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, সহকারী কমিশনার(রমনা) মইনুল ইসলাম-এর সহায়তায় রমনা অঞ্চলে গোপনে বিএনপি বিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতেন। তারা গোপনে বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামানকে সহযোগিতা করতেন এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্যাদি সরবরাহ করতেন। এসব কাজে তাদের সহযোগী হিসেবে সেসময়কার ডিএমপির এসি-ডিবি মনিরুজ্জামান বেল্টু, আসাদুজ্জামান এবং মাহবুব আলম কাজ করতেন। এছাড়াও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় ব্যাচমেট আনোয়ার হোসেন, হাফিজ আক্তার এবং ১৫ বিসিএসের ওয়াই এম বেলালুর রহমানের সহায়তায় তৎকালীন জোটসরকারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল নোমানের সমর্থকদের মধ্যে শত্রুতামূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সচেষ্ট ছিলেন এবং এক পক্ষের সুবিধা নিতেন। হাবিবের গুরু একেএম শহিদুল হক সে সময় চট্টগ্রামের এসপি থাকায় চট্টগ্রামের স্থানীয় রাজনীতিতে গোপনে আওয়ামী লীগের মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতেন।
রাজশাহী রেঞ্জ অফিসে সংযুক্ত থাকা অবস্থায় তার সাথে রাজশাহী মেট্রো পুলিশের এসি মফিজ উদ্দিন এবং রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলামের গোপন আঁতাত হয়। ১৭ ব্যাচের মফিজ, আমিনুল এবং আবু কালাম সিদ্দিক তাকে রাজশাহী রেঞ্জের বিভিন্ন গোপনীয় তথ্য সরবরাহ করতেন। ১২তম ব্যাচের বর্তমান এডিশনাল আইজি কামরুল হাসান, র্যা ব প্রধান খুরশিদ হোসেন, রেলওয়ে পুলিশ প্রধান দিদার আহমদ, এপিবিএন প্রধান হাসানুল হায়দার, রিভার পুলিশ প্রধান শফিকুল ইসলাম তার সাথে যোগসাজসে বিএনপি জোটসরকারের সময়ে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন জেলায় সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্টে বিভিন্ন অন্তর্ঘাতমুলক কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তথা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্টদের সহযোগিতা করতেন। এর পাশাপাশি তিনি সাসপেন্ড থাকা অবস্থায় ভারতীয় দূতাবাসের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের পছন্দের সনাতন ধর্মীয় অফিসার পিবিআই প্রধান ১২ ব্যাচের বনজ কুমার মজুমদার, ১৫ ব্যাচের দেবদাস ভট্টাচার্য ও কৃষ্ণপদ রায়, ১৮ ব্যাচের বাসুদেব বনিক, পরিতোষ ঘোষ, এবং জয়দেব ভদ্র, ২০ ব্যাচের শ্যামল কুমার নাথ ও বিপ্লব বিজয় তালুকদার, ২১ ব্যাচের শ্যামল কুমার মুখার্জি, প্রবীর কুমার, জয়দেব চৌধুরী সহ সমমনা অফিসারের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন। আওয়ামী লীগের পরিচালিত সিআরআই গ্রুপে ডিআইজি মাবুদ এবং ডিআইজি শামসুদ্দোহা এর কাছে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিরোধী স্পর্শকাতর তথ্য সরবরাহ করতেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি হেডকোয়ার্টার পদে বসে হাবিব পুলিশ কমিশনার একেএম শহীদুল হকের সহযোগিতায় অসৎ উপায়ে চাকরি পাওয়ার কারণে বিএনপির আমলে চাকরিচ্যুত ২০ ব্যাচের মোল্লা নজরুল ইসলাম, আনিসুর রহমান, বিপ্লব বিজয় তালুকদার, হারুনুর রশিদ, এহসানুল্লাহ, সাইফুল ইসলাম, ফয়সাল মাহমুদ, সৈয়দ নুরুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান, এবং একুশ ব্যাচের মারুফ হোসেন সরদার, আসম মাহাতাব উদ্দিন, সাজ্জাদুর রহমান, আনোয়ার হোসেন, আহমারউজ্জামান, বিপ্লব কুমার সরকার, ২২তম ব্যাচের আলিমুজ্জামান, হাসানুজ্জামান, লিটন কুমার সাহা, এস এম মেহেদী হাসান, জায়েদুল আলম, নুরুন্নবী, সঞ্জিত কুমার রায়, ডঃ কামরুজ্জামানুজ্জামান এবং ২৪ ব্যাচের প্রলয় কুমার জোয়ারদারকে ভালো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পদায়ন করে এদেরকে হাতে নেন।
Check Also
মারা যায়নি আবু সাঈদ, আছেন ফ্রান্সে রনির এমন মন্তব্যে নিয়ে যা জানা গেল
সম্প্রতি টিকটকে পটুয়াখালী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনির একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়। …