কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দালাল দ্বারা পরিবেষ্টিত। অনেক প্রধানমন্ত্রীকে দেখেছি। দেখেছি ভারতের ৫ জন প্রধানমন্ত্রী। আমি সবসময় দেখা করতে পারতাম। আজ আমার বোন প্রধানমন্ত্রী অনেক ঘেরা। তিনি আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে বলেন, নৌকা পাইলে খালাস ভাববেন না। নৌকারও বৈঠা লাগবে। নৌকা পাইলে এক লাফে ক্ষমতায় যাবেন না। শেখ হাসিনাকে বলবো- দালালদের নিয়েন না, ঘুষখোরদের নমিনেশন দেবেন না। গায়ের জোর দিয়ে হয় না।
বঙ্গবন্ধু জোর করে স্বাধীনতা আনেননি। বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসায় ৭৫ লাখ মানুষ ঐক্যবদ্ধ। তাই আপনার কথায় সতর্ক থাকুন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘তলে তলে’ এসব কথা তার মুখে শোভা পায় না। রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংগীতশিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাসের কৃষক শ্রমিক জনতা লীগে যোগদান অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে কাদের সিদ্দিকী এসব কথা বলেন।
জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু ও আওয়ামী লীগ নেতা মতিয়া চৌধুরীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, কর্নেল তাহেরসহ তাদের কারণেই বঙ্গবন্ধুকে প্রাণ দিতে হয়েছে। আমার বোন শেখ হাসিনা এগুলো মেনে নিতে পারেন কিন্তু আমি কাদের সিদ্দিকী বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সন্তান হিসেবে একদিনের জন্যও মেনে নিতে পারি না।
তিনি বলেন, আমি মন্ত্রী-এমপি হওয়ার জন্য গামছার রাজনীতি করি না। আমি মানুষের জন্য কাজ করার জন্য, মানুষকে পাহারা দিতে গামছার দল করেছি। তাই হাসানুল হক ইনুরা যেখানে আছে আমি সেখানে মরলেও যাব না। জাসদ ও হাসানুল হক ইনুদের কারণে বঙ্গবন্ধুকে মরতে হয়েছে। জাসদ দুই ভাগে বিভক্ত ছিল তখন। একটা ছিল সশস্ত্র বাহিনী, অন্যটি ছিল রাজনৈতিক জাসদ। আ স ম রবরা রাজনৈতিক অংশে ছিলেন, রাজনীতি করেছেন- তাকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি ছিলেন বাংলাদেশে প্রথম রাজনৈতিক সন্তান। জাসদের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান নেতা ছিলেন কর্নেল তাহের, দ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলেন হাসানুল হক ইনু। যে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করার পর ট্যাংকে উঠে নেচেছিলেন। আমার বোন শেখ হাসিনা তাকে মানতে পারেন কিন্তু আমি কাদের সিদ্দিকী বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সন্তান হয়ে একদিনের জন্যও তাকে মানতে পারি না।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমি মতিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে কথা বললে কেউ কেউ বলে শেখ হাসিনা অসন্তুষ্ট হতে পারে। হাসিনা অসন্তুষ্ট হবে বলে আল্লাহর অসন্তুষ্টি আমি কখনোই মেনে নেব না। আমি কাউকে ভয় পাই না। তিনি আরও বলেন, আমি এসব বললে শেখ হাসিনা খুশি হন, কারণ না বললে এতোদিনে জাতিসংঘ পর্যন্ত চলে যেতো মতিয়া চৌধুরী। মুন্সীগঞ্জের নোয়া ও আলম লেলিনও পল্টনে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেন। তাই আমি একমত হতে পারছি না। তিনি বলেন, গামছার আদর্শ বঙ্গবন্ধু। শেখ হাসিনা তার রক্তের সন্তান, আমি তার রাজনৈতিক সন্তান।
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বাধীনতাকে প্রতিহত হতে দিতে পারি না। আমি তাদের (বিএনপি) ক্ষমতা দিতে পারি না। শেখ হাসিনাই একমাত্র স্বাধীনতার প্রতীক। আমরা কঠিন সময়ে পুলসেরাত পার হওয়ার মাঝখানে আছি। কেউ কেউ পশ্চিমাদের নিয়ে ভাবছে। মনে করছে তারা তাদের ক্ষমতায় বসাবে। না, ভাইয়েরা তারা না, ভোটাররা বসাবে মনে রেখেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘তলে তলে’ এসব কথা শোভা পায়। বঙ্গবন্ধুকন্যা তলে তলে কাজ করবেন এটা হয় না। পরে বলে এটা খায়। বঙ্গবন্ধু দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু আজকের সাধারণ সম্পাদক যিনি এত ত্যাগ স্বীকার করেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এমন কথা সাজে? ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবের যুগে এটা যায় না।
তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনে যাব। আমরা সবাই বঙ্গবন্ধুর লোক। নৌকার সঙ্গে জোট করলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো কার সঙ্গে। ধানের শীষও নির্বাচনে আসবে না। আসলেও করতে পারবে না। তারা স্বাধীনতা বিরোধীদের সভা। তিনি বলেন, বর্তমানে গান গেয়ে সংসদ নষ্ট করে ফেলেছে। এটি মানুষের ভাগ্যের কথা বলার জায়গা, গান গাওয়ার জায়গা নয়। ড. কামাল হোসেনকে বঙ্গবন্ধুর পরে নেতা মানতাম। তার জন্য আমি তার কাছে গিয়েছি। তিনি বিএনপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। আমি ইতিমধ্যে ক্ষমা চেয়েছি, কারণ সবাই এতে অসন্তুষ্ট। আমি নির্বাচন করব, আমি গামছা নিয়েই নির্বাচন করব।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সংগীতশিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাস, সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী প্রমুখ।