আগামী ২০ সেপ্টেম্বর শেষ হতে চলেছে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ। বর্তমানে, কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীরা ভারতের মাটিতে টানা ৪৫ দিন অবস্থান করতে পারেন। শেখ হাসিনা গত ৫ অগাস্ট ভারতে প্রবেশ করেন, এবং এরপর থেকে বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকার হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের ৫৯৮ নেতা-কর্মীর পাসপোর্ট বাতিল করেছে। এতে হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্টও অন্তর্ভুক্ত ছিল, যার ফলে তার কাছে বর্তমানে কোনো কার্যকর পাসপোর্ট নেই।
এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে—২০ সেপ্টেম্বরের পর ভারত সরকার কী সিদ্ধান্ত নেবে? শেখ হাসিনার দেশে ফিরে বিচার বা প্রতিহিংসার শিকার হওয়ার শঙ্কার মাঝে ভারতের অবস্থান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলছে, যার মধ্যে খুন, অপহরণ, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত। ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিরা ভারত সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে বলছেন যাতে হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরানো হয়।
কিন্তু ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে থাকা অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি এমনভাবে গঠিত যে, কোনো ব্যক্তি ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র অপরাধীর বিচারের প্রেক্ষাপট ও আদালতের সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে কাজ হয়। হাসিনার মামলাগুলো নিয়ে বাংলাদেশে অনেক আইনজীবী ইতোমধ্যে মন্তব্য করেছেন, এসব মামলা স্থায়ী হতে পারবে না, এবং আদালতে সহজেই বাতিল হয়ে যাবে।
এক প্রশ্ন রয়ে গেছে, ভারত কি হাসিনাকে দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক আশ্রয় দেবে? এর পূর্বেও ভারত রাজনৈতিক কারণে নেপালের রাজা ত্রিভূবন, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট নাজিবুল্লাহ এবং দলাই লামাকে আশ্রয় দিয়েছে। এছাড়াও, শেখ হাসিনা অতীতে ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত ছয় বছর ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন।
ভারত সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। প্রধান উপদেষ্টা ইউনুসের সরকার থেকে বিষয়টি নিয়ে এখনও কোনও সরাসরি প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে কিছু সূত্র জানিয়েছে, কাতার সরকার হাসিনার নিরাপদ আশ্রয়ের বিষয়ে একটি সমঝোতা করার চেষ্টা করছে। শেখ হাসিনার কাতারের সঙ্গে ব্যক্তিগত সখ্যতা আছে, যা তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার পথ খুলে দিয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কূটনৈতিক ভিসার মেয়াদ পার হলেও ভারত সরকার চাইলে শেখ হাসিনা যতদিন ইচ্ছা, ততদিন আশ্রয় দিতে পারে। এটি পুরোপুরি ভারত সরকারের ওপর নির্ভর করে। যদিও বাংলাদেশ সরকার বিষয়টি নিয়ে ভবিষ্যতে আপত্তি তুলতে পারে, ভারত সরকার তৃতীয় কোনো দেশে হাসিনার আশ্রয়ের বিষয়টি নিয়ে দরজা খোলা রাখছে।
এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, শেখ হাসিনা কী ধরনের আশ্রয় পাবেন এবং ভারত কী সিদ্ধান্ত নেবে।