বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংঘটিত গণহত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে শুরু হয়েছে। এই ট্রাইবুনাল মূলত যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, এবং শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার করে। কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনে এবার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের অনেক নেতা-কর্মীই নিজেদের তৈরি করা এই আইনের ফাঁদে জড়িয়ে পড়ছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল গঠিত হয় ২০১০ সালের ২৫ মার্চ, যখন আওয়ামী লীগ সরকার এটি নির্বাচনী ইশতেহারের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হলেও এটিকে বিরোধী দল দমন ও নিশ্চিহ্ন করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। জামায়াতের নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা, যিনি এই ট্রাইবুনালের প্রথম শিকার, তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১০ সালে গ্রেপ্তার ও বিচার শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত তরুণ প্রজন্মের চাপ ও আন্দোলনের মুখে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ২০১৩ সালে।
পরে যুদ্ধাপরাধের মামলায় আরও জামায়াত নেতাদের, যেমন মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, আলী আহসান মোজাহিদ, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মতিউর রহমান নিজামী, এবং মীর কাশেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। আওয়ামী লীগ তখন এই বিচারকে ন্যায়বিচার হিসেবে দেখালেও, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করতে পারেনি।
বর্তমান পরিস্থিতি এক ভিন্ন চিত্র ফুটিয়ে তুলছে। ছাত্র আন্দোলনের সময় সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালানোর অভিযোগে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের অনেক নেতার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা দায়ের হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালেই এই বিচার চলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, হাসিনার তৈরি আইনেই আওয়ামী লীগ নেতারা নিজেরাই বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন।
আইন বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ বলছে, ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইন মূলত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছিল। এই আইনের কোনো সংস্কার না করেই ছাত্র আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হওয়ায় এটি আইনগত বিতর্ক তৈরি করতে পারে।
একজন সিনিয়র আইনজীবী মন্তব্য করেছেন, “যদি এই বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ না হয়, তবে এটি বিরোধী দলের দাবি অনুযায়ী প্রতিহিংসার উদাহরণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। হাসিনার সরকার যে ট্রাইবুনাল তৈরি করেছিল, সেই একই ট্রাইবুনাল তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
এখন দেখার বিষয়, আওয়ামী লীগ তাদের তৈরি আইনের অধীনে কেমন আচরণ পায়। এটি কি তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হবে, নাকি ট্রাইবুনাল স্বচ্ছ বিচার নিশ্চিত করতে পারবে? পরিস্থিতি বলছে, হাসিনা সরকারের জন্য এটি রাজনৈতিক প্রতিশোধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া বা ন্যায়বিচারের মাপকাঠি নির্ধারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হতে চলেছে।