জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সাবেক অধিনায়ক ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মর্ত্তুজা। টাইগার দলের অধিনায়ক হিসেবে তিনি যে অবদান রেখে গেছেন, তা কখনও ভোলার নয়। ক্রিকেট প্রেমি কোটি ভক্তরা তাকে একজন খেলোয়াড় হিসেবেই ভালোবাসেন না, বরং তাকে তাদের একজন বলেই মনে করেন। বিশেষ করে, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অত্যন্ত বন্ধু প্রিয় একজন মানুষ। কেউ কোনো আবদার নিয়ে তা রাখার চেষ্টা করেন তিনি। সেই সুবাদে সম্প্রতি অভিযোগ পেয়ে গত শনিবার সকালে সাংসদ মাশরাফী বিন মর্ত্তুজা নড়াইল সদর হাসপাতালে ঝটিকা অভিযানে যান।
এ সময় তিনি হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে রোগীদের কাছ থেকে হাসপাতাল সম্পর্কে নানা অভিযোগ এবং অনিয়মের কথা জানতে পারেন। সোমবার (২০ ডিসেম্বর) হাসপাতালের একজন আয়া ওই রোগীর দাদিকে জুতাপেটা করে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার বাসগ্রামের মিনারুল মোল্লার ১৫ মাসের মেয়ে রোকাইয়া ডায়রিয়া জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। গত শনিবার সকালে নড়াইল-২ আসনের সাংসদ মাশরাফী বিন মর্ত্তুজা সদর হাসপাতালে ঝটিকা অভিযান চালান। হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে শুরু করে অফিস কক্ষ ঘুরে দেখেন। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গেলে রোকাইয়ার দাদি তাহমিনা খানম মাশরাফীকে কাছে পেয়ে হাসপাতালের নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতির কথা তুলে ধরেন।
রোকাইয়ার দাদি তাহমিনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘সোমবার দুপুরে হাসপাতালের এক আয়া ওয়ার্ডে আসলে তাকে বলি ভাত দাও। তখন ওই আয়া চিৎকার করে বলে তোর নাম নেই, তোরে ভাত দেওয়া যাবে না। তখন আমি বলি যে সমস্ত রোগী দুপুরের আগেই বাড়ি চলে গেছে তাদের একজনের খাবার দিলে কী হবে। তখন ওই আয়া বলেন যেমন কুকুর তেমন মুগুর। এ কথার প্রতিবাদ করলে সে আমার চুলের মুঠি ধরে পায়ের স্যান্ডেল দিয়ে মারছে।’
তিনি বলেন, এমপি মাশরাফী হাসপাতালে আসলে আমি তাকে বলেছিলাম হাসপাতালে ময়লা থাকে, ডাক্তাররা ঠিকমতো আসে না, সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। ওষুধ, খাবার দেয় না। এইসব কথা বলার জন্যি আমারে তারা জুতাপেটা করি।
ডায়রিয়া ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুরে ৬ শয্যার ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি ছিল ২৪ জন। সেখানে ১১ জনকে দুপুরের খাবার দেওয়া হয়। তারমধ্যে রোকাইয়ার পরিবারের কারও নাম ছিল না।
এর আগে সঠিক সময়ে কর্মস্থলে না আসায় হাসপাতালের ৮ জন চিকিৎসক এবং ২ জন প্যাথলজিস্টকে শোকজ করেন।
জানতে চাইলে সদর হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডা. আসাদ-উজ-জামান মুন্সী বলেন, চিকিৎসক-কর্মচারীদের সকাল ৮টায় হাসপাতালে আসার কথা। কিন্তু শনিবার সকাল ৯টার পরে আসার জন্য ৮ জন চিকিৎসক, ২ জন মেডিকেল প্যাথলজিস্টকে শোকজ করা হলেও সাংসদ মাশরাফী রোববার বিকেলে হাসপাতালে এসে শোকজপত্র প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেন।
তবে এরই মধ্যে ঐ হাসপাতালের দুর্নীতি নিয়ে মাশরাফির কাছে অভিযোগ করা সেই নারীকে মারধরের ঘটনায় গোটা এলাকাজুড়ে বেশ চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা প্রকাশ করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেছেন অনেকেই।