বাংলাদেশের একসময়ের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা কাজী মারুফ। দেশের সনামধন্য পরিচালক কাজী হায়াৎ এর ছেলে তিনি। তার দুর্দান্ত অভিনয় দেখে দর্শক মনোমুগ্ধ হয়েছিল এবং সেই সথে দেখা গিয়েছিল তার ইতিহাস সিনেমাটি দেখে তার প্রতি মানুষের ভালোলাগা কাজ করতে শুরু করেছিল।
কাজী মারুফ এখন দেশে আসেন খুবই কম। অথচ একটা সময় গেছে এফডিসি চষে বেড়িয়েছেন তিনি। শুটিংয়ের জন্য এফডিসির এ ফ্লোর ও ফ্লোর সাভার-গাজীপুর ঘুরেছেন তিনি। সেই মারুফ আজ শুটিং করছেন না। তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। কিন্তু মারুফ ইন্ডাস্ট্রিতে না থাকলেও তাকে নিয়ে ভক্তদের আগ্রহ একটুও কমেনি। সম্প্রতি তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘ফিল্ম ফ্যাক্টরি ইন নিউইয়র্ক’ থেকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী এই নায়ক যখন লাইভে আসেন, তখন তার সাড়ে তিন হাজার ভক্ত জানতে চান তিনি কেমন আছেন? তাদের প্রশ্নের জবাবে কাজী মারুফ বলেন, আমি ভালো আছি।
তারকাখ্যাতি রেখে দেশ ছাড়লেন কেন কাজী মারুফ? এই প্রশ্নটি হয়তো অনেকের মনেই বিভ্রান্ত হয়েছে। সোমবার ৩৮ মিনিটের ওই লাইভে কাজী মারুফ দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কারণ জানান। মারুফ বলেন, ‘বাংলাদেশের সিনেমা তৈরি হচ্ছিল না। খুব একটা কাজ ছিল না। কিন্তু কিছু একটা করতে তো হবে। তা ছাড়া, আমাদের চলচ্চিত্র “ছিন্নমূল” ১৪ ফেব্রুয়ারি (২০১৬) মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। এভাবেই টার্গেট করলাম। কিন্তু একটি বড় প্রোডাকশন হাউস ছবিটি মুক্তি দিতে দেয়নি। আমার বাবা পরিচালক ছিলেন। তারা আমার বাবাকে বলেছে আমরা মুক্তি না দিলে কিভাবে মুক্তি দেবে। আমার বাবার মতো লোকদের এই কথা শুনতে হয়েছে। সেদিন বাবা বাসায় এসে বললেন, এই বয়সে যুদ্ধ করব? আমিও চাই না তুমি তাদের সাথে যুদ্ধ কর। আমেরিকা যাও। এসব কারণে আমি বাংলাদেশ ছেড়েছি।
শুধু কাজের অভাব আর চলচ্চিত্রের রাজনীতির কারণেই দেশ ছেড়েছেন এমটি না। পারিবারিক কারণে তিনি চলে গেছেন। মারুফ বলেন, “একবার আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে আমার মেয়েকে এমনভাবে স্যালাইনের সিরিঞ্জ দিয়ে ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছিল যে আমি দেখতে পাইনি। সেই দৃশ্য দেখে আমি চুপ হয়ে গেলাম। তখন আমি চোখ বন্ধ করেছিলাম।সেদিন সে সিদ্ধান্ত নেয় এক সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র চলে যাবে।
হঠাৎ করেই কাজী মারুফ তার ক্যরিয়ারের ভাল স্ত্রী রাইসা ও মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে মার্কিন মুলুকে চলে গিয়েছিলেন এবং এখোনো সেখানেই অবস্থান করছেন। তার সেখানে ব্যবসা করছেন। ‘গ্রিন কার্ড’ নামে একটি সিনেমাও নির্মাণ করেছেন। শিগগিরই তিনি এটি মুক্তি দেবেন। দুঃখ নিয়ে দেশ ছেড়ে গেলেও মারুফ জানান, দেশের জন্য, বিশেষ করে বাবা ও মায়ের জন্য তার খারাপ লাগে। কয়েক মাস আগে কাজী হায়াত অসুস্থ হলে দেশে আসেন মারুফ। মারুফ তার বাবার ছবি ‘ইতিহাস’-এর জন্য ২০০২ সালে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। পরবর্তীতে ‘অন্ধকার’, ‘ক্যাপ্টেন মারুফ’, ‘রাস্তার ছেলে’, ‘দেরহক্ষী’সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় সিনেমায় কাজ করেন।