কেউ বলছেন হারুন অর রশীদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন, কেউ বলছেন জনতার হাতে মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আবার কেউ কেউ দাবি করছেন, তিনি ঢাকার বাইরে কোনো এক স্থানে আত্মগোপন করে আছেন। তবে আসলে তাঁর অবস্থান নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও সাবেক গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশীদ এখন পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে সাধারণ মানুষ তাঁর গ্রেপ্তারের দাবি তুলেছেন এবং তাঁকে ‘হ্যান্ডকাফ’ পরা অবস্থায় দেখতে চান। ৩৮টি হত্যা মামলায় অভিযুক্ত এই পুলিশ কর্মকর্তাকে ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে চলছে তুমুল আলোচনা।
৫ আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এর পর থেকে দেশজুড়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের করা হয়। সবচেয়ে বেশি মামলা পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে। জানা গেছে, ডিএমপির থানাগুলোতে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ১৩৪টি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের বিরুদ্ধে ৩৮টি হত্যা মামলা রয়েছে, যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।
কিন্তু এতগুলো মামলা থাকার পরও কেন হারুন গ্রেপ্তার হচ্ছেন না, তা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ ও প্রশাসন থেকেও এখনো হারুনের অবস্থান নিয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
হারুন কোথায় আছেন?
বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, হারুন অর রশীদ বর্তমানে দেশে আছেন এবং তিনি জীবিত। সরকার পতনের পর পালানোর চেষ্টা করেছিলেন, তবে সফল হননি। ৫ আগস্টের পর তাঁকে একবার মারধরের শিকার হতে হয় এবং গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ডিএমপি পুলিশের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে হারুনের ছবি দেখা গেছে, যেখানে তিনি অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ছিলেন। তবে তাঁর বর্তমান অবস্থান নিয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই।
আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, ৬ আগস্ট হারুন সাংবাদিকদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন যে তিনি দেশে আছেন এবং বিদেশে পালানোর চেষ্টা করেননি। ৭ আগস্টের পর থেকে তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
আলোচিত ছবি এবং মারধর
৮ আগস্ট সামাজিক মাধ্যমে একটি হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা ব্যক্তির ছবি ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই মনে করেছিলেন এটি হারুনের ছবি, তবে পরে জানা যায় সেটি তাঁর নয়। তবে ৮ থেকে ১০ আগস্টের মধ্যে তাঁকে মারধর করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সমালোচনা ও বিতর্কিত ফোন রেকর্ড
ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন এবং আন্দোলন প্রত্যাহারে জোর করার অভিযোগে হারুনকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। এছাড়া, তাঁর দুটি ফোন রেকর্ড ফাঁস হয়, যেখানে তিনি স্বীকার করেছেন যে তাঁরা সরকারের আদেশ মেনে চলেন।
৫ আগস্ট সরকার পতনের সময় তিনি পুলিশের সদরদপ্তর থেকে পালিয়ে রিকশায় করে বেরিয়ে যান বলে গুঞ্জন রয়েছে। তাঁর পালানোর চেষ্টা ব্যর্থ হলেও তিনি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।