সড়ক দূর্ঘটনা বাংলাদেশের নিত্যেদিনের ঘটনায় পরিনত হয়েছে। প্রতিছিনই সড়কে ঝড়ে যাচ্ছে অসংখ্য প্রান। গাড়ি চালক এবং পথ যাত্রীদের অনিয়মের জের ধরে এই ঘটনার সৃষ্টি হচ্ছে। সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও জেলার দুরামারিতে রাস্তা পার হওয়ার সময় হানিফ পরিবহনের গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারায় সিয়াম। এই ঘটনায় সিয়ামের পরিবারকে কোনো প্রকার অভিযোগ দায়ের না করার শর্তে এক লাখ টাকা অনুদান দেওয়ার কথা জানায় হানিফ পরিবহন মালিক পক্ষ। তবে ক্ষতিপূরনের টাকা গ্রহন করেনি নিহ/তে/র পরিবার। এবং এই প্রসঙ্গে বেশ কিছু কথা জানালেন নি/হ/তের বাবা ফিরোজ।
ঠাকুরগাঁওয়ে হানিফ পরিবহনের ধাক্কায় সিয়াম ইসলাম (১৩) নামে এক স্কুলছাত্রের মৃ/ত্যু/র ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে এক লাখ টাকা দিতে চেয়েছিলো পরিবহন মালিক। তবে সেই টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে দুর্ঘটনায় নি/হ/ত কিশোরের পরিবার। সোমবার (১ নভেম্বর) এক লাখ টাকা পরিবারটিকে দেওয়ার ব্যর্থচেষ্টা শেষে সিয়ামের রুহের মাগফিরাত কামনায় স্থানীয় মসজিদের উন্নয়নে মসজিদ কমিটিকে ওই টাকা বুঝিয়ে দেন পরিবহন মালিকপক্ষ। এ সময় উপস্থিত থাকা মোটরশ্রমিক নেতা শাহাদত হোসেন বলেন, আমরা বেশ কয়েকবার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে অনুদানের এক লাখ টাকা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা কিছুতেই সেই টাকা নিতে রাজি হয়নি। অবশেষ উপায় না পেয়ে সেই টাকা সিয়ামের নামে স্থানীয় মসজিদের উন্নয়নে দান করে আসি।
সিয়ামের বাবা ফিরোজ বলেন, আমার বাচ্চার মৃ/ত্যু হয়েছে আল্লাহর ইচ্ছায়। কারো উপর কোনো অভিযোগ রেখে কি হবে। অভাবের সংসার হলেও কারো কাছে কখনো সাহায্য নেইনি। আমাদের একমাত্র সন্তানের বিনিময় এক কোটি টাকাতেও কম হয়ে যাবে। তাহলে অনুদানের এই টাকা আমি কেনো নিবো। তবে জনসমাগমপূর্ণ রাস্তায় গতি কম রেখে গাড়ি সাবধানে চালানোর জন্যে সরকারের দৃষ্টি গোচরের অনুরোধ জানান সিয়ামের মা সুরাইয়া ইউনুসা। তিনি বলেন, আমি চাইনা আর কোনো মায়ের কোল খালি হোক। আর কোনো মা যেনো আমার মতো না কাঁদে। তাই সরকার যেনো এদিকে একটু খেয়াল করে।
জানা যায়, গত ২৫ অক্টোবর ঠাকুরগাঁও জেলার দুরামারিতে রাস্তা পার হওয়ার সময় হানিফ পরিবহনের গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারায় সিয়াম। দুরামারি নামের ছোট্ট বাজারটিতে ফ্লাক্সি লোডের দোকান রয়েছে সিয়ামের বাবা ফিরোজ হাসানের। মাথায় ঋণের বোঝাসহ বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও একটি ছেলে নিয়ে চার সদস্যের অভাবের সংসার ছিলো তার। মেধাবী সন্তান সিয়ামকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন বুনতেন ফিরোজ। তাই ছেলেকে ভর্তি করিয়েছিলেন জেলার সেরা স্কুলে। কিন্তু একটি দুর্ঘটনায় ভেঙে যায় তার সব স্বপ্ন। এই ঘটনায় পরিবারসহ এলাকা জুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। সিয়ামের স্কুলের ছাত্ররা রাস্তায় নামতে চায় বিচারের দাবিতে। শহরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সুধি সমাজের উদ্যােগে মিমাংসার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। সিয়ামের পরিবারকে কোনো প্রকার অভিযোগ দায়ের না করার শর্তে এক লাখ টাকা অনুদান দিতে রাজি হয় হানিফ পরিবহন মালিক পক্ষ। সেই প্রস্তাব নিয়ে সিয়ামের পরিবারের কাছে টাকা নিয়ে উপস্থিত হলে মামলা না করার বিষয়ে লিখিত দেয় ফিরোজ। তবে সম্পূর্ণ টাকাই ফিরিয়ে দেন তিনি।
বাংলাদেশ সরকার সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে নিরলস ভাবে কাজ করছে। এবং অনিয়মকারীদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর শাস্তির বিধান রেখে আইন প্রনয়ন করেছে সরকার। ইতিমধ্যে এই আইন প্রনয়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে।