তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মো. হাছান মাহমুদ বলেছেন, কবিতা মানুষকে পরিশীলিত করে, মানুষের মনের দরজা খুলে দেয়, মানুষকে করে তোলে অসাম্প্রদায়িক। আজ যখন সারা বিশ্বে সাম্প্রদায়িকতা, এটা শুধু বাংলাদেশে নয়, আপনি যদি আশেপাশের দেশগুলোর দিকে তাকান, যদি বিশ্বের দিকে তাকান, দেখবেন সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। শুক্রবার (২৯ জুলাই) বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে, স্বনন আবৃত্তি সংগঠন আয়োজিত কবি শ্যামসুন্দর সিকদারের কবিতার ধ্বনি শীর্ষক আবৃত্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম মহাসচিব ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে মহামারির পর ইউক্রেন সংকটের প্রভাবে ইউরোপ-আমেরিকায়ও বিদ্যুতের রেশনিং হচ্ছে। বিদ্যুতের দাবিতে জনগণকে গু// লি করে প্রাণনাশকারী বিএনপির ডাকা সমাবেশ থেকে হারিকেন থেকে বেরিয়ে আসা মলোটভ ক// কটেল নিয়ে মানুষ এখন উদ্বিগ্ন। আজ শুক্রবার বিকেলে বাংলা একাডেমিতে ‘স্বনন’ আয়োজিত আবৃত্তি অনুষ্ঠানের শুরুতে রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বিএনপির হারিকেন নিয়ে সমাবেশের ডাকের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন। আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম দশ গুণ বেড়েছে এবং তেলের দাম রেকর্ড ভেঙ্গেছে, ফলে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও বিদ্যুৎ উৎপাদনে হিমশিম খাচ্ছে, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য উন্নত দেশগুলোর পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, জ্বালানি সংকটের কারণে খোদ যুক্তরাষ্ট্রে মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের আহ্বান জানানো হয়েছে। বিদ্যুতের ঘাটতির আশঙ্কায় জাপান ও ফ্রান্সের মানুষের কাছে একই ধরনের আবেদন করা হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে জার্মানিতে কখনোই ব্ল্যাকআউট হয়নি। অনেক শহরে জল গরম করার জন্য সঞ্চয় এবং বিদ্যুতের জন্যও আহ্বান জানানো হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস ও সিডনিতে প্রতি দুই ঘণ্টায় লোডশেডিং হয়। আর ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় জ্বালানি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ভারত।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন দেশের মাত্র ৪০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার সুবিধা পায় এবং এখন ১০০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে এবং গত অর্থবছরে সরকার ৫৩ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। হাছান মাহমুদ বলেন, বিদ্যুৎ ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি হিসেবে ৬ মিলিয়ন ডলার। তিনি বলেন: যেসব দেশে বিদ্যুতের সরবরাহ এক সেকেন্ডের জন্যও বন্ধ হয় না সেখানে যখন বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা হয় এবং রেশন করা হয়, তখন বাংলাদেশেও বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার জন্য জনগণকে আহ্বান জানানো হয়েছে। আমাদের দেশ পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো দ্বীপ নয়। কিন্তু বিএনপির হারিকেন সমাবেশের ডাক দেওয়ায় মানুষ এখন শঙ্কিত তাদের হারিকেন থেকে মলোটভ ককটেল বেরিয়ে আসবে কি না। আর যারা কানসাটে বিদ্যুতের দাবিতে কৃষকদের গু// লি করে, তারিক রহমানের কোম্পানি বিদ্যুৎ না দিয়ে শুধু বিভিন্ন জায়গায় খুঁটি বসিয়েছে, তাই তাদের বিদ্যুতের কথা বলার কোনো নৈতিক অধিকার নেই।
সরকারের প্রতি বিএনপি মহাসচিবের ‘এটা চা খাওয়ার আমন্ত্রণ নয়, পদত্যাগ করুন’ এমন প্রশ্নের জবাবে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তার উদারতা দেখিয়েছেন এবং বিএনপির বৈঠকে বাধা না দিতে বলেছেন। মিছিল নিয়ে গণভবনে গেলে তিনি তাদের চা পরিবেশন করবেন। কিন্তু যে মির্জা ফখরুল সাহেব প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতা বোঝেন না, যে নেতা প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে অভদ্রভাবে সাড়া দেন, যে আমন্ত্রণের মর্যাদা বোঝেন না, তাকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রয়োজন মনে করি না। এরপর একাডেমি মিলনায়তনে কবি শ্যামসুন্দর সিকদারের কবিতা আবৃত্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী আবদুল করিম বলেন, কবিতার চর্চা বৃদ্ধি, যা মানুষের চিন্তা ও সৃজনশীলতাকে সমৃদ্ধ করেছে। শতাব্দী, জাতির আধ্যাত্মিক বিকাশের জন্য একটি অনন্য প্ল্যাটফর্ম। বিশেষ অতিথি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার আয়োজকদের প্রশংসা করে এ ধরনের আরও উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। চক্রেশ চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহাম্মদ নুরুল হুদা।
উল্লেখ্য, এই আয়োজনের প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, এই ব্যবস্থা প্রাকৃতিকভাবে করা গেলে আরো ভালো হতো। উন্নয়নের কারণে আমরা এসিতে সব অনুষ্ঠান করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। যা ২০ বছর আগে সম্ভব হতো না। আমরা বড়লোক হয়েছি, স্বীকার করি বা না করি। গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে কবিতা যে ভূমিকা রেখেছে তা অনস্বীকার্য। তিনি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কবিতা পাঠ ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।