Saturday , November 23 2024
Breaking News
Home / International / হাজার বছরের পুরোনো ‘এলিয়েনের মমি’ নিয়ে যা বলল নাসা

হাজার বছরের পুরোনো ‘এলিয়েনের মমি’ নিয়ে যা বলল নাসা

অজ্ঞাত বহির্জাগতিক ঘটনার (ইউএএফ) ওপর বছরব্যাপী গবেষণার পর গতকাল বৃহস্পতিবার এ নিয়ে বহুল প্রত্যাশিত সংবাদ সম্মেলন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। ১ লাখ ডলার ব্যয়ে এ গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল এ অজ্ঞাত ঘটনাগুলোর ওপর আলোকপাত করা এবং এসব বোঝার জন্য বৈজ্ঞানিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা।

মূলত যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে দৃশ্যমান ‘অস্বাভাবিক কিছু ঘটনা’ (ইউএফও) প্রত্যক্ষদর্শীদের পক্ষ থেকে এলিয়েন বলে দাবি করার পরিপ্রেক্ষিতে এ সংবাদ সম্মেলন করার কথা ছিল। কিন্তু গত সপ্তাহে মেক্সিকোর কংগ্রেসে দুটি কথিত ‘অ–মানব’ মমি প্রদর্শনের পর নাসার সংবাদ সম্মেলনের মোড় ঘুরে যায়।

মেক্সিকোতে কাচের বাক্সে ওই দুটি মৃতদেহ প্রদর্শনের পর থেকে ইউএফও নিয়ে আগ্রহী সংগঠনগুলোর মধ্যে উৎসাহ বেড়ে যায়। বলা হচ্ছে, মমি করা নমুনা দুটি পেরুর কাসকো শহরে আবিষ্কৃত হয়েছে। নমুনা দুটি আনুমানিক এক হাজার বছরের পুরোনো।

সংবাদ সম্মেলনে নাসার ইউএএফ বিষয়ক গবেষণার প্রধান ডেভিড স্পের্জেল নমুনা দুটির বিষয়ে বলেন, তিনি নমুনা দুটি নিয়ে শুধু সামাজিক মাধ্যমের নানা প্রতিবেদন দেখেছেন এবং এগুলোর প্রকৃতি নিয়ে কোনো বিস্তারিত তথ্য তাঁর জানা নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা ওই নমুনাগুলোর প্রকৃতি নিয়ে কিছু জানি না।’

হাজার বছরের পুরোনো ‘এলিয়েনের মমি’ নিয়ে যা বলল নাসা
তথ্যভিত্তিক তদন্তের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি মেক্সিকো সরকারকে ওই দুটি নমুনা বৈশ্বিক বৈজ্ঞানিক কমিউনিটির কাছে সরবরাহ করতে আহ্বান করেন।

নাসার গবেষণার একজন সহকারী উপ–সহযোগী প্রশাসক ড্যান ইভানস অনুমান ও কুসংস্কার থেকে সরে এসে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আজ এখানে মূলত যা করতে এসেছি তা হলো অনুমান ও কুসংস্কারকে বিজ্ঞান ও বিবেকের দিকে ধাবিত করা। এটি কেবল তথ্যের ভিত্তিতে করা সম্ভব।’

মেক্সিকোর সংবাদমাধ্যম অনুসারে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর সাংবাদিক ও বিশিষ্ট ইউএফও গবেষক জেইমি মোউজান বলেন, নমুনা দুটি থেকে প্রাপ্ত ডিএনএর প্রায় এক–তৃতীয়াংশই ছিল অজ্ঞাত। এগুলো আমাদের ‘পার্থিব বিবর্তন’ কাঠামোর সঙ্গে খাপ খায় না।

মেক্সিকোর সরকারি কর্মকর্তা ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সামনে জেইমি জোর দিয়ে বলেন, ‘নমুনাগুলো পৃথিবীতে আমাদের বিবর্তনের ইতিহাসের অংশ নয়। নমুনাগুলো কোনো ধরনের ইউএফও ধ্বংসস্তূপ থেকে নয় বরং ডায়াটমের (শৈবাল শ্রেণির ফাইটোপ্লাঙ্কটন) খনি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ক্রমে এটি ফসিলে পরিণত হয়েছে।’

তবে জেইমির দেওয়া তথ্যের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ ২০১৫ সালে তিনি পেরু থেকে পাওয়া একটি নমুনাকে বহির্জগতের প্রাণী বা এলিয়েন বলে দাবি করেছিলেন। পরে পরীক্ষা করে জানা যায়, তা একটি শিশুর মমি।

সম্প্রতি এ আবিষ্কারের বিষয়ে জেইমি বলেন, মেক্সিকোর অটোনোমাস ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা এ নমুনাগুলো পরীক্ষা করেছেন। তাঁর দাবি, ডিএনএ সংগ্রহ করতে রেডিও কার্বন ডেটিং ব্যবহার করা হয়েছিল। এক্স–রেতে দেখা যায়, একটি নমুনায় ‘ডিম’ আছে।

এ তথ্য প্রকাশের পর মেক্সিকোর কংগ্রেস সদস্যের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কেউ কেউ উদ্বেগ প্রকাশ করে এ আবিষ্কার নিয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মন্তব্য করেন।

এদিকে ইউএফও নিয়ে কয়েকশ ঘটনার বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে নাসা বলছে, এসব ঘটনা বিশ্লেষণ করে তাঁরা ব্যাখ্যাতীত ঘটনাগুলোর পেছনে এলিয়েন থাকার কোনো প্রমাণ পাননি। তবে মহাবিশ্বের কোথাও এলিয়েন যে থাকতে পারে এটি তাঁরা উড়িয়ে দিচ্ছেন না।

এলিয়েন সম্পর্কে কোনো সত্য যদি থেকেও থাকে, নাসার এই দীর্ঘ প্রতীক্ষিত প্রতিবেদনে আসলে কোনো উপসংহার টানা হয়নি।

তবে নাসা বলছে, এসব ব্যাখ্যাতীত ঘটনায় তদন্তের জন্য আরও উন্নত প্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার করতে হবে।

নাসার প্রশাসক বিল নেলসন বলেন, ব্যাখ্যাতীত বহির্জাগতিক ঘটনাগুলো নিয়ে গবেষণায় নাসা শুধু নেতৃত্বই দিচ্ছে না, এ সংস্থা আরও বেশি স্বচ্ছতার সঙ্গে তথ্য–উপাত্ত শেয়ার করে।

৩৬ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদন মূলত কারিগরি এবং বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ। ফলে এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলেই মনে করা হচ্ছে।

About Rasel Khalifa

Check Also

বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয় সাংবাদিকের অভিযোগ, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া এবং সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন দাবি তোলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *