জাপানি মা এরিকো নাকানো বলেন, তিন জাপানি শিশুর মধ্যে দুইজন তাদের মায়ের সাথে এবং একজন তাদের বাবার সাথে থাকবে।
বিচারপতি মামনুন রহমানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চের এ সংক্রান্ত আপিল আবেদন আংশিক মঞ্জুর করে দিলে তিন মেয়ের বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ে হতাশা প্রকাশ করেন জাপানি মা।
জাপানি মা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এতে অত্যন্ত হতাশ। আজকের রায়ের বিরুদ্ধে আমরা সুপ্রিমকোর্টে আপিল করব, শুধু শিশুদের মঙ্গলের জন্য। এটি পেরেন্টাল শিশু অপহরণ, এটি শিশু নির্যাতন। শুধু তাই নয়, এটি পারিবারিক নির্যাতন।’
রায়ে বলা হয়েছে, জাপানি নাগরিক এরিকো নাকানো তার প্রথম ও তৃতীয় কন্যাকে নিয়ে বাংলাদেশ বা যেকোনো দেশে থাকতে পারবেন। তবে বাবা তার সন্তানদের সাথে দেখা করার সুযোগ পাবেন। একইভাবে দ্বিতীয় কন্যা লায়লা লীনা থাকবেন ইমরান শরীফের সঙ্গে। তবে দ্বিতীয় কন্যা সন্তানকে দেখার সুযোগ পাবেন জাপানি মা।
মেয়েদের জন্য গত তিন বছর ধরে জাপানে চাকরি রেখে বাংলাদেশে থেকে এরিকো নাকানো বলেন, ‘আমি আমার চাকরি হারিয়েছি। আমি জাপানের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কাজ করতাম। কিন্তু আমি আমার চাকরি হারিয়েছি। শুধু আমার মেয়েদের জন্য। এমনকি আমার আয় দিয়ে জীবনযাপন করতাম। ইমরান কখনোই অধিকারের জায়গা থেকে মেয়েদের জন্য কোনো একটি পেনিও (অর্থ) দেয়নি। আমি মেয়েদের পড়াশোনা, আবাসন, খাদ্যসহ সব ব্যয়ভার বহন করতাম, আমার নিজের কথা ভুলে গিয়ে। আমি আমার জীবন নিয়ে চিন্তা করতাম না। কিন্তু, এটা কি বাংলাদেশে স্বাভাবিক? আপনাদেরও (সাংবাদিক) সন্তান আছে। আপনারা কি সন্তানের পড়াশোনার খরচ দেন না? নাকি সন্তানের মা দেন! কিন্তু ইমরান কোনো খরচই দিত না।’
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি এখানে তিন বছর ধরে কোনো কাজ ছাড়াই আছি। এগুলো কী! এটা বাংলাদেশ থেকে কী ধরনের ট্রিটমেন্ট (আতিথেয়তা/আচরণ)। আমি কাজ ভালোবাসি।’
উল্লেখ্য, নাকানো এরিকো এবং শরীফ ইমরান জাপানের আইন অনুযায়ী ১১ জুলাই, ২০০৮ তারিখে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা টোকিওতে থাকতে শুরু করেন। বিয়ের ১২ বছরে তাদের ঘরে তিনটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।
তারা হলেন- জেসমিন মালেকা (১১), লায়লা লীনা (১০) ও সানিয়া হেনা (৭)। তিনজনই টোকিওর চোফো সিটিতে আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসজেআই) ছাত্র ছিলেন। আর মা এরিকো পেশায় ডাক্তার।
২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরান বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন।
আদালতের রায়কে অমান্য করে জাপানি মা নাকানো এরিকোও গত বছরের ৩১ জানুয়ারি রাতে তার বড় মেয়ে জেসমিন মালেকাকে নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ ছাড়ার চেষ্টা করেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাদের ফিরিয়ে দেয় ইমিগ্রেশন পুলিশ। এ ঘটনার পর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মেজো মেয়ে লায়লাকে গুলশান থানা থেকে তার মাকে নিয়ে যেতে বলা হলে তিনি যেতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এক পর্যায়ে সে টেবিলের নিচে লুকিয়ে থাকে। মা তার বড় মেয়েকে নিয়ে থানা থেকে চলে যান।