Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / হাইকমান্ডের সকল নেতা গ্রেফতার হলেও যেভাবে আন্দোলন সফল করার কৌশল নিচ্ছে বিএনপি

হাইকমান্ডের সকল নেতা গ্রেফতার হলেও যেভাবে আন্দোলন সফল করার কৌশল নিচ্ছে বিএনপি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা কারাগারে রয়েছেন। গ্রেফতার আত”ঙ্কে কেন্দ্রীয় নেতারা আত্মগোপনে রয়েছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীদের অধিকাংশই বাড়ি ঘর ছাড়া। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, একতরফা দাবিতে কঠোর কর্মসূচি থেকে পিছপা না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। গ্রেফতার ও মামলার কারণে কিছুটা চাপে থাকলেও আন্দোলনের সাফল্যের ব্যাপারে আশাবাদী দলটি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার আগেই দাবি আদায় করতে চায়। সেভাবে নেওয়া হচ্ছে নানা প্রস্তুতি। অতীতের আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার ভিন্ন কৌশলে এগোচ্ছে।

এক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হলে বিকল্প আরেক নেতাকে নেতৃত্ব দিতে বলা হয়েছে। সিনিয়র নেতাদেরকে মাঠ পরিকল্পনায় রাখা হয়েছে। আর কর্মসূচি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছেন মধ্যম ও জেলা পর্যায়ের নেতারা। সব বিষয়ে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখতে হাইকমান্ডের নির্দেশনা রয়েছে। এমনকি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরও কর্মসূচির কথা জানানো হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত দলের শীর্ষ নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেপ্তার এড়াতে বলেছেন বলেও জানা গেছে। এ কারণে কেন্দ্রীয় নেতারা আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে একজন দায়িত্বশীল নেতাকে গ্রেফতার করা হলে অন্য নেতা সেই দায়িত্ব পালন করে মাঠের আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। এ বিষয়ে গত ২৮ অক্টোবর সাধারণ পরিষদে এক ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়; যাতে কর্মসূচি ঘোষণা ও বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা না হয়।

যুক্তরাজ্য থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আন্দোলন-কর্মসূচি তদারকি করছেন। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, পিছিয়ে যাওয়ার সময় নেই। নিপীড়ন-নির্যা”তন, মিথ্যা মামলা-হামলা, গ্রে’ফতার করে আন্দোলন থামানোর সুযোগ নেই। বিএনপির প্রতিটি কর্মী নেতার ভূমিকা পালন করে এ আন্দোলনে সফলতা আনবে।

তিনি আরও বলেন, সরকার পতনের একতরফা দাবিতে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আমরা অবিচল। যে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চলছে তা অব্যাহত থাকবে। দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে নস্যাৎ করা যাবে না।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপির নেতৃত্বাধীন অবরোধ কর্মসূচিতে ভীত থাকায় বর্তমান ক্ষমতাসীন মহল উদ্দেশ্যবোধ হারিয়ে ফেলেছে। সরকার ভাবছে গ্রেফতার, রিমান্ড, নির্যা”তন-নিপীড়ন আন্দোলনকে স্তিমিত করে দেবে। তবে বিএনপি দেশের বৃহত্তম ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল।

মানুষ এই দলের সাথে আছে। তাই আন্দোলন দমনে সরকারের কোনো কৌশলই সফল হবে না। বিএনপির নেতৃত্বকেও দুর্বল করা যাবে না। বিএনপি থেকে শেষ ব্যক্তি কারাগার থেকে বের হয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবেন। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পদত্যাগসহ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা বাস্তবায়নে জনগণ বদ্ধপরিকর। অচিরেই অবৈধ সরকারের পতন হবে।

গত ২৮ অক্টোবর ঢাকা গণসমাবেশে হাম”লা ও হ”ত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিএনপি পরের দিন সারাদেশে হরতাল পালন করে। এরপর ৩১ অক্টোবর থেকে টানা ৩ দিন অবরোধ শুরু করে দলটি। বৃহস্পতিবার তা শেষ হয়। আগামীকাল রোববার থেকে ওইদিন বিকেলে ফের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ১৫ নভেম্বরের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করা হবে বলেও তাদের কাছে তথ্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। সে কারণে তফসিল না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলতে পারে।

সঙ্গে ‘অসহযোগ’ নামে দেশব্যাপী অবরোধ-হরতালের মতো আরও কঠোর কর্মসূচিও দেওয়া হতে পারে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কর্মসূচি সফলে একটি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। সর্বশেষ হরতাল-অবরোধের ৪ দিনের কর্মসূচি রাজধানীসহ সারাদেশে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়।

একদিন যারা মাঠে নেমেছে, অন্যদিন তাদের অনেককেই নামানো হয়নি। আবার রাজধানী ঢাকায় এখনই সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে নামতে চাইছে না। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণকে ৩০টি জোনে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্তরা সমন্বয় করে মাঠে নামছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগরের একাধিক নেতা জানান, তাদের মূলত টার্গেট তফশিল ঠেকানো। তাই তফশিলের কয়েকদিন আগে রাজধানীতে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে নামতে চান। ঢাকাকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হতে পারে। এজন্য সব প্রস্তুতিও নেওয়া রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, বিএনপির চলমান আন্দোলন পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে। নেতাকর্মীরা এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে পারেন এমন ধারণা নিয়ে দুই মাস ধরে দলের ৮২টি সাংগঠনিক জেলা সফর করেছেন কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা। বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি তারা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাদের ফোন নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। যা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে রয়েছে।

একই অবস্থা তৃণমূলেরও। ঢাকা মহানগর উত্তর সদস্য সচিব, নরসিংদী জেলা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব, কুষ্টিয়া ও গাইবান্ধা জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, রংপুর মহানগর আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব, নড়াইল জেলা সাধারণ সম্পাদক, খুলনা জেলা আহ্বায়ক, বরিশাল মহানগর আহ্বায়ক, বরিশাল দক্ষিণ জেলা আহ্বায়ক ও আরও কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা ও তৃণমূল নেতারা।
অনেক নেতাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রতিদিনই চলছে গ্রেফতার অভিযান। ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যন্ত বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের অধিকাংশ নেতাকর্মী এখন গৃহহীন।

এমতাবস্থায় গ্রেফতার এড়াতে ও আন্দোলন সফল করতে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। কর্মসূচি সফল হলে সব স্তরের নেতাকর্মীদের জোরেশোরে মাঠে নামার জন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। হাইকমান্ড থেকে তৃণমূলের কাছে বার্তা দেওয়া হয়েছে কেউ গ্রেফতার হলে দায়িত্ব নিতে। নেতাকর্মীদের মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘নেতৃত্ব নিন, নেতৃত্ব দিন’ স্লোগান সম্বলিত বার্তা পাঠানো হচ্ছে।

জেলা পর্যায়ের কেউ গ্রেফতার হলে সঙ্গে সঙ্গেই তার স্থলে আরেকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক এজিএম শামসুল হককে ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব, নরসিংদী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাখাওয়াত হোসেন বকুলকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সালেহ চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব, কুষ্টিয়া জেলার সহসভাপতি কুতুব উদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকারকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব দিয়েছে।

দিনাজপুর জেলা সিনিয়র সহ-সভাপতি মোকাররম হোসেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, গাইবান্ধা জেলা যুগ্ম সম্পাদক মোঃ ইলিয়াস হোসেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, রংপুর মহানগর যুগ্ম আহবায়ক শহিদুল ইসলাম মিজু ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক ও মোঃ আব্দুস সালাম ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব, নড়াইল জেলা যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক কাজী সুলতানুজ্জামান সেলিম ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। বিএনপি ছাড়াও এর অঙ্গ সংগঠনের কেউ গ্রেফতার হলে অন্য কাউকে দায়িত্ব দিয়ে কর্মসূচি সফল করতে নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকমান্ড।

 

 

About bisso Jit

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *