গত বেশ কিছুদিন ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর অবশেষে আজ রোববার (২০ নভেম্বর) সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন ভারতীয় বাংলা ধারাবাহিক নাটকের তুমুল জনপ্রিয় অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। এর আগে গত একরাতেই ১০ বার হার্ট অ্যাটাকে করেন তিনি। তার মৃত্যুর খবরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন প্রেমিক সব্যসাচী চৌধুরী।
অল্প সময়ের জন্যই ঘর পাতিয়েছিল তাঁদের গল্পগুলো। কিন্তু এটি সমগ্র শহর এবং সমাজে একটি স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে। অনিশ্চয়তা ছিল। বেঁচে থাকার অনিশ্চয়তা। কিন্তু তার পরেও প্রতিটা মুহূর্ত ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা। অবশেষে প্রেমের ‘অসম্পূর্ণ গল্প’ রেখে চলে গেলেন ঐন্দ্রিলা।
এটি কোনো সিনেমার স্ক্রিপ্ট নয়। কোনো ‘অ্যাকশন’ নেই। কোনো কাটিং নেই। শুটিং শেষ করার কোনো তাড়া নেই। সম্ভবত ঐন্দ্রিলার তাড়া ছিল। কথাটা শুনে সব্যসাচীর ঠোঁটে শুধু একটা কথাই ভেসে এল- ‘অমর’। একটি সাক্ষাত্কারের ‘র্যাপিড ফায়ার’ পর্বে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, “ঐন্দ্রিলার কথা শুনলে আপনার মনে প্রথম কোন শব্দটি আসে?” সব্যসাচী একটা মুচকি হেসে উত্তর দিল, “আমার। “মানুষ যখন জীবন ছেড়ে চলে যায়, অনুভূতিও কি চলে যায়? হয়তো চলে যায়। হয়তো না। সময়ের সাথে সাথে ক্ষত সেরে যেতে পারে। হয়তো পড়া হবে না মুহূর্তগুলো বেঁচে থাকে। সব্যসাচী-ঐন্দ্রিলার প্রেম কাহিনির মুহূর্তগুলো যেমন থেকে যাবে। কারণ, সেই রূপকথার সঙ্গে বাস করেছেন আরো অনেকে।
সেই অপরূপ রূপকথার সূচনা ২০১৭ সালে। প্রথম দেখা হয়েছিল ঐন্দ্রিলার প্রথম সিরিয়াল ‘ঝুমুর’-এর সেটে। কিন্তু এটা দেখায় না যে তারা একে অপরের মনে ছিল। ঐন্দ্রিলা ‘প্রথম দেখায় প্রেম’-এ মোটেও বিশ্বাস করতেন না। তাহলে কীভাবে রূপকথার শুরু হয়েছিল? যখনই শুটিং থেকে বিরতি পেতেন ঐন্দ্রিলা তার বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন। সব্যসাচীও থাকতেন। এরপর আস্তে আস্তে ফোনে কথা বলা শুরু হয়। এখনো কেউ প্রেমের কথা স্বীকার করেনি। কিন্তু তার মনে আছে।অতঃপর পৃথিবীর যাবতীয় প্রেমকাহিনির মতো সব্যসাচী-ঐন্দ্রিলার কাহিনিও গড়িয়ে গিয়েছিল ঈপ্সিত পথে।
সব্যসাচী-ঐন্দ্রিলার প্রথম ‘ডেট’ হয়েছিল দক্ষিণ কলকাতার একটি ছাদের রেস্তোরাঁয়। কিন্তু তার পরবর্তী যাত্রা খুব মসৃণ ছিল না। প্রেমে পড়লে সবাই একে অপরকে অনেক প্রতিশ্রুতি দেয়। সারাক্ষণ পাশে থাকতে হয় না! কিন্তু কালের নিত্যনৈমিত্তিকতায়, ঐতিহ্যে সেই প্রতিশ্রুতি হারিয়ে যায়। কথার সাথে তাল মিলিয়ে চলা কঠিন। কিন্তু সব্যসাচী বুঝিয়ে দিলেন যে সেই কঠিন কাজটা চাইলেই সহজে করা যায়।
অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই সর্বদা ঐন্দ্রিলার পাশে ছায়ার মত ছিলেন সব্যসাচী। ভেবেছিলেন খুব শীঘ্রই সুস্থ হয়ে উঠলে ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে জীবনটাকে নতুন করে সাজাবেন তিনি। কিন্তু তা আর হলো না। এর আগেই না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন ঐন্দ্রিলা।