Monday , December 30 2024
Breaking News
Home / Countrywide / হতাশ হয়ে ৫০০ মোটরসাইকেল চুরি করল যুবক

হতাশ হয়ে ৫০০ মোটরসাইকেল চুরি করল যুবক

কথায় আছে লোভে পাপ পাপে মৃত্যু আর এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে এক যুবকের সাথে।  সম্প্রতি 500 মোটরসাইকেল চুরির দায়ে একটি চক্র কে আটক করে পুলিশ।  চুরির কারণ এক যুবক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করে পুলিশের কাছে।  যে ঘটনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। সংবাদ সূত্রে জানা যায়, বড়লোক হওয়ার নেশায় সে পালিয়ে এক ধনী ব্যবসায়ীর মেয়েকে বিয়ে করে। কিন্তু মেয়ের বাবা-মা মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলে হতাশ হয়ে পড়েন ওই যুবক। বড় মানুষ হওয়ার নেশা তখনও শেষ হয়নি। আর এ কারণেই শেষ পর্যন্ত গাড়ি চোর চক্রে যোগ দেন তিনি।

 পাঁচ শতাধিক মোটরসাইকেল চুরি করে এই চক্রের পাঁচ সদস্য পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ এ তথ্য জানান।

ডিবি প্রধান বলেন, যারা চুরি করে এবং যারা চুরির মালামাল কিনে ব্যবহার করে তারা উভয়েই সমান অপরাধী। কেউ চুরির মালামাল পেলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।

পুলিশ সংবাদ সম্মেলনে জানায়, এই চক্রটি ঢাকা থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে মুন্সীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ, দোহারসহ আশেপাশের এলাকায় বিক্রি করত। তারা কম দামে তিন থেকে চার লাখ টাকার মোটরসাইকেল বিক্রি করে।

সোমবার রাজধানীর শনিরখড়া ও ধলপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে চোর চক্রের মূল হোতাসহ পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবির ওয়ারী বিভাগ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- নূর মোহাম্মদ (২৬), সজল (১৮), মনির (২২), আকাশ (২২) ও রবিন (২৩)। এসময় তাদের কাছ থেকে ১৩টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে একটি পিলসার, একটি অ্যাপাচি আরটিএআর এবং 11টি সুজুকি জিক্সার।

যখনই চুরি হয় তখন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পরামর্শ দেন ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, জিডি কপি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় পৌঁছালে চুরি যাওয়া গাড়িসহ সবকিছু উদ্ধার করা সহজ হয়ে যায়।

হারুন বলেন, গ্রেফতার চক্র এমন চাবি ব্যবহার করে যে কোনো মোটরসাইকেল স্টার্ট দিতে পারে। কিন্তু তারা Suzuki Gixxer গাড়ি বেশি চুরি করতে পারে। ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয় রয়েছে বিভিন্ন চোর চক্র। এ বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশ কাজ করছে বলে জানান তিনি।

পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃত সজল, মনির ও আকাশের মূল কাজ ছিল দোহার ও আশপাশের এলাকা থেকে চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রির জন্য ক্রেতা খুঁজে বের করা। তারা প্রতিটি চোরাই মোটরসাইকেল ৪০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করত। নূর মোহাম্মদ ৪০ শতাংশ, রবিন ৩০ শতাংশ এবং বাকি টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেন। গ্রেফতারকৃত আসামিরা জানান, তারা এ পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক মোটরসাইকেল চুরি করেছে। তারা ২০১৫ সাল থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে আসছে।

ডিএমপির ওয়ারী ও গেন্ডারিয়া থানার দুটি চুরির মামলার তদন্তকালে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় চোর চক্রকে আটক করেছে গোয়েন্দা (ওয়ারী) বিভাগ।

পরিকল্পনা এবং কাজের বিভাগ:

পুলিশ জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানায়, তারা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় মোটরসাইকেল চুরি করে আসছিল। এই চক্রের মূল হোতা নূর মোহাম্মদ প্রথমে জুরাইন এলাকার একটি কাঠের দোকানে ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতেন। পরে একদিন হাসনাবাদ স্ট্রিটের চায়ের দোকানে রবিনের সাথে দেখা হয়। দুজন মিলে পরিকল্পনা করে কিভাবে দ্রুত বড় হওয়া যায়।

নূর মোহাম্মদ রবিনকে বলে যে তার কাছে ধার দেওয়ার জন্য করাত আছে, যা দিয়ে মোটরসাইকেলের চাবি পাতলা করে ‘মাস্টার কী’ তৈরি করা যেতে পারে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী রবিনের জিক্সার মোটরসাইকেলের চাবি বালি দিয়ে ঘষে পাতলা করা হয়। পরে মোটরসাইকেল চালানো শুরু করলে তারা মোটরসাইকেলটি চুরি করে। এরপর থেকে ওই দুই বন্ধু দীর্ঘদিন ধরে এই চাবিকে ‘মাস্টার কী’ হিসেবে ব্যবহার করে মোটরসাইকেল চুরি করে আসছিল।

চুরি যাওয়া মোটরসাইকেল বিক্রি করার জন্য তারা সজলকে দোহায় তাদের গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয়। তারা ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকা থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে নিরাপদ সড়ক হিসেবে পোস্তগোলা ব্রিজ হয়ে মাওয়া রোডের শ্রীনগর বাইপাস হয়ে মেঘুলা বাজার, দোহার যাওয়ার পথ হিসেবে ব্যবহার করে।

অন্যদিকে বাবুবাজার সেতুটি কেরানীগঞ্জ, জয়পাড়া ও দোহার এলাকায় যাওয়ার পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সজল ও মনির চোরাই মোটরসাইকেল ভারতীয় বর্ডার ক্রস গাড়ি হিসেবে দোহারের বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করে আসছিল।

সজলের ভাষ্যমতে, সে নিজেই বড়লোক হওয়ার নেশায় পড়ে দোহার মেঘুলা বাজারের এক ধনী বেকারি ব্যবসায়ীর মেয়েকে বিয়ে করে। কিন্তু মেয়েটির বাবা-মা তাদের মেয়ের সঙ্গে সজলের সম্পর্ক ছিন্ন করলে সজল হতাশ হয়ে পড়েন। ধর্মান্ধ হওয়ার নেশায় সজলও আসামি নূর মোহাম্মদ-রবিন্দের চক্রে যোগ দেয়।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় গ্রেপ্তার হওয়া নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে চারটি, রবিনের বিরুদ্ধে তিনটি এবং তিনজনের বিরুদ্ধে একটি করে মামলা রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন, মিডিয়ার মুখপাত্র ফারুক হোসেন, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার তারিকুর রহমান, মিডিয়ার এডিসি হাফিজ আল আসাদ, এসি আবু তালেব ও টিম লিডার মাহফুজুর রহমান।

এ ঘটনায় চক্রের ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ।  তবে তাদের ধারণা ওই পাঁচ জনের সাথে আরো অনেক ব্যক্তি জড়িত রয়েছে।  জিজ্ঞাসাবাদে স্পষ্ট হবে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা।

About Nasimul Islam

Check Also

কোন সাহসে হাসিনার গ্রাফিতি মোছে, প্রশ্ন উমামা ফাতেমার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাশে মেট্রোরেলের পিলারে আঁকা ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যঙ্গাত্মক গ্রাফিতি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *