Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / হঠাৎ শেখ হাসিনাকে নিয়ে পশ্চিমাদের উল্টো সুর

হঠাৎ শেখ হাসিনাকে নিয়ে পশ্চিমাদের উল্টো সুর

বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ‘গ্রহণযোগ্যতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ। কিন্তু সরকার বলছে, ওই দেশগুলো পরে নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ১২ জানুয়ারি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউসহ সব রাষ্ট্রদূত টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

তবে সেসব দেশের রাষ্ট্রদূত বা প্রতিনিধিরা ‘অভিনন্দন’ নিয়ে কিছু বলেননি। অবশেষে, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চলতি মাসের ১৮ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

তবে নির্বাচনের পরপরই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বেশ কয়েকটি দেশ বিবৃতি দিয়ে বলে যে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মানদণ্ড অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।

তাই সরকারকে যে ‘অভিনন্দন’ জানানো হচ্ছে, তাতে ঠিক কী বার্তা? যদিও অনেক বিশ্লেষক একে ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচারের অংশ’ হিসেবে দেখছেন।

সরকারকে অভিনন্দন জানানোর কারণে নির্বাচন নিয়ে দেশগুলোর পর্যবেক্ষণ বা অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হবে বলে তারা মনে করেন না। ফলস্বরূপ, নতুন মার্কিন ভিসা এবং শ্রম নীতি নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে, বিশ্লেষকরা বলছেন।

গত বছরের মাঝামাঝি থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচন নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন ছিল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

তারা সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রতিযোগিতামূলক জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু তাদের দাবি উপেক্ষা করে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোকে বাদ দিয়ে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের পরদিন চীন, রাশিয়া, ভারতসহ অনেক দেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে।

কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোকে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন অবস্থানে। তাদের অভিনন্দন জানানোর পরিবর্তে, তারা পৃথক বিবৃতিতে বলেছে যে ১২ তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন “অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মান অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হয়নি”।

নির্বাচনের ‘গ্রহণযোগ্যতা’ নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও পশ্চিমা দেশগুলো এখন বাংলাদেশের নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানাচ্ছে, এটাকে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের অংশ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বিবিসিকে বলেছেন, “আসলে এটা একটা আনুষ্ঠানিকতার অংশ, কূটনৈতিক শিষ্টাচারের অংশ।” আসলে কোনো দেশে নতুন সরকার গঠিত হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বা সে দেশের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা তাদের অভিনন্দন জানান।

কিন্তু এই অভিনন্দন মানে এই নয় যে, নির্বাচন নিয়ে দেশের আগের পর্যবেক্ষণ বা প্রতিক্রিয়া বদলেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মহসিন বলেন, এখানে দুটি ভিন্ন বিষয় রয়েছে। একটি হল তারা তাদের পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করে। অন্যটি হল তাদের নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।

আমেনা মহসিনের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির।

তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, অভিনন্দন জানানো হলেও নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে তারা যে প্রশ্ন তুলেছেন তা সবসময় অবস্থান থেকে পরিবর্তন নাও হতে পারে। বাংলাদেশে দুটি বিতর্কিত নির্বাচনের পরও ক্ষমতার মেয়াদ শেষ করতে পেরেছে আওয়ামী লীগ। দেশে-বিদেশে বৈধতার কোনো সংকট তখন তৈরি হয়নি। এর কারণ হলো নির্বাচনকে নৈতিক মান নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করা গেলেও সাংবিধানিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা যায় না।

পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, এমন গুঞ্জন ছিল যে কিছু দেশ হয়তো শেখ হাসিনার সরকারকে ‘স্বীকার’ করবে না।

১৮ জানুয়ারী মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারকে তার ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করেছিলেন, যখন যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল যে বাংলাদেশে নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য, অবাধ এবং স্বচ্ছ ছিল না, তার মানে কি যুক্তরাষ্ট্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চতুর্থ নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেবে না?

মিলার প্রশ্নটি নাকচ দিয়েছেন।

তবে তার আগে অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এখন বাংলাদেশ সরকারকে স/হিংসতার প্রতিবেদনগুলো বিশ্বাসযোগ্য ও স্বচ্ছভাবে তদন্ত করতে এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে উৎসাহিত করছি।

তাহলে নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিক্রিয়ার জানানোর উদ্দেশ্য কী?

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে তারা তাদের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ বা মতামত জানাতে পারেন। অনেক সময় স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রেখেও তারা এটা করে।

এর আগে ২০২২ সালের ২৪ মে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে।

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ‘বাধা’ যারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য ভিসা নীতি কার্যকর করা হবে বলে জানানো হয়েছিল।

এরপর দেশের নতুন শ্রমনীতি ঘিরে বাংলাদেশে উদ্বেগ বেড়ে যায়।

এখন নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানানোর পর সেই উদ্বেগ কি কেটে গেছে?

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ভয় পুরোপুরি কেটে গেছে বলে মনে করি না।

তবে নির্বাচন ‘গ্রহণযোগ্য’ না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কী ধরনের কঠোর পদক্ষেপ নেবে, বা আদৌ কোনো পদক্ষেপ নেবে তা বুঝতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে বলে মনে করেন তিনি।

About Babu

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *