বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে পঞ্চম কৌশলগত সংলাপ আগামীকাল মঙ্গলবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সংলাপে অংশ নিতে একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে দুই দিনের সফরে ঢাকা আসছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতরের আন্ডার সেক্রেটারি ফিলিপ বার্টন। সংলাপে বন্দি বিনিময় ও পারস্পরিক আইনি সহায়তার (এমএলএ) ওপর জোর দেবে ঢাকার পক্ষ। অন্যদিকে লন্ডনে নির্বাচন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ওপর জোর থা/কবে। তারা বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চায়।
সংলাপে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এর মধ্যে রয়েছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, রো/হিঙ্গা সংকট, আগামী বছর দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সংলাপ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার নিরাপত্তা আইন, নারীর ক্ষমতায়ন, অভিবাসন, উচ্চশিক্ষা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ব্যবসায়িক পরিবেশ, শ্রম অধিকার ও পরিস্থিতি, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল(আইপিএস), ইউক্রেন সংকট, শান্তিরক্ষা কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা হবে। পাশাপাশি জবাবদিহিমূলক শাসন ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে সুশীল সমাজের স্থান, মতপ্রকাশ ও ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়টিও বৈঠকে আলোচনা হবে।
ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশন গতকাল রোববার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, এই কৌশলগত সংলাপ যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্কের ভিত্তিতে দুই দেশের মধ্যে একটি আধুনিক অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার অঙ্গীকার প্রতিফলিত করে। সংলাপে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও উন্নয়নমূলক অংশীদারিত্ব, রো/হিঙ্গা সংকট এবং অন্যান্য আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, এই সংলাপ দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা বাড়ানো এবং কপ২৮ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সহায়তা বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করবে। যুক্তরাজ্যের শক্তিশালী অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিনিয়োগের প্রস্তাব তুলে ধরবে। ঢাকা সফরকালে ব্রিটিশ আন্ডার সেক্রেটারি রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ, ব্যবসায়ী ও তরুণ নেতৃত্বেদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন। বর্তমান ভূমিকায় এটিই ফিলিপ বার্টনের প্রথম বাংলাদেশ সফর।
যুক্তরাজ্যের অগ্রাধিকার সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা নির্বাচন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ওপর গুরুত্ব দেবেন। বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাজ্য। এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ চাই যাতে সব দল অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত হয়। তারা এমন অবস্থান সরকারকে জানিয়ে আসছেন। এ ছাড়া তারা প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও অ/স্ত্র বিক্রি নিয়েও আলোচনা করবেন। তবে আগামী বছর প্রতিরক্ষা সংলাপে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।
এদিকে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বন্দি বিনিময় ও এমএলএ চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করতে চায় বাংলাদেশ। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে, দুই দেশের মধ্যে চতুর্থ কৌশলগত সংলাপে, বাংলাদেশ এবং যুক্তরাজ্য অপরাধীরা যাতে নিরাপদ না থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য একটি আইনি কাঠামো আনতে একটি চুক্তিতে সম্মত হয়। ঢাকা বিষয়টি এগিয়ে নেবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, কিছু অপরাধী অপরাধ করে যুক্তরাজ্যে থেকে বাংলাদেশে এসে। কিছু অপরাধী বাংলাদেশ থেকে অপরাধ করে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছে। দুই দেশেই অপরাধীদের শাস্তি ও বিচারের আওতায় আনার বিষয়ে দুই দেশ আগেই একমত হয়েছিল। এ বিষয়ে আর কোনো কাজ করা হয়নি। সংলাপে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।
অবৈধ অ/স্ত্র ও জাল টাকা রাখার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সাবেক কর্নেল শহীদ উদ্দিন খান বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। তাদের বাংলাদেশে পলাতক দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া একাত্তরে যু/দ্ধাপরাধের দায়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতের মৃ/ত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি চৌধুরী মঈনুদ্দিন যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন বলে বাংলাদেশের ধারণা। সেই সঙ্গে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিছু নাগরিক সেখানে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। বন্দী বিনিময় এবং বিধায়ককে আইনী কাঠামোর মধ্যে আনা হবে দোষী সাব্যস্ত অপরাধী এবং দু/র্বৃত্তদের বিচারের মুখোমুখি ফিরিয়ে আনার জন্য।