আবার, নগদ ডলারের মূল্য হঠাৎ বেড়েছে। ফলে ডলার লেনদেনে নজরদারি জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। উচ্চ দামে ডলার লেনদেনের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে সাত মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করেছে। আরও ১০ জন মানি চেঞ্জারের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বাংলাদেশ ব্যাংক দাম বাড়ানোর অভিযান অব্যাহত রেখেছে। মানি চেঞ্জারদের ডলার লেনদেন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
ব্যাংকগুলোও কাঙ্খিত পরিমাণ ডলার পাচ্ছে না। এ সুযোগে খোলা বাজারে এখন প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১৭-১১৮ টাকা দরে। কিন্তু ব্যাংক ও মানি চেঞ্জারদের জন্য প্রতি ডলারের নির্ধারিত মূল্য ১১৩ টাকার মধ্যে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশান-১ ও ২ নম্বরের সাতটি মানি চেঞ্জারে গিয়ে দেখা যায়, ডলার কেনাবেচা বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লোকজন মনিটরিং করছেন বলে মানি চেঞ্জাররা জানিয়েছেন। তারাও আসছেন ক্রেতার সাজে। নির্ধারিত মূল্যে ডলার বিক্রি না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, তার দাম কোথাও মিলছে না ডলারের সঙ্গে। এ জন্য তারা ব্যবসা থেকে সরে বসেছেন। মানি চেঞ্জারদের আশা, বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে ব্যাংকগুলো তাদের নির্ধারিত মূল্যে নগদ ডলার দেবে। তারপর পরিস্থিতি কেটে যাবে।
বিভিন্ন ব্যাংক ও মানি চেঞ্জারের কর্মকর্তারা বলছেন, গত জুলাই ও আগস্টে ডলার কেনার ব্যাপক চাহিদা ছিল। এ সময় অনেকেই বিদেশ ভ্রমণে গেছেন। অনেকেই শিক্ষার জন্য বিদেশে গেছেন। তাদের প্রায় সবাই নগদ ডলার সঙ্গে নিয়ে গেছে। এতে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে খোলা বাজারে প্রতি ডলারের দাম বেড়েছে ১১৭-১১৮ টাকা। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত হার অনুযায়ী নগদ প্রতি ডলারের দাম ১১৩ টাকার মধ্যে থাকার কথা।
গুলশান-২ এর ট্রাস্ট মানি চেঞ্জারের সেলসম্যান মো. দিদার বলেন, বিক্রির জন্য নির্ধারিত দামে ডলার কেনা যায় না। এ কারণে ডলার বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংক নির্ধারিত মূল্যে ডলার দিলে আমরা ১১২ টাকায় বিক্রি করতে পারি। কিন্তু কেউ কম দামে ডলার দিচ্ছে না।
মো: দিদার আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত মূল্যে ডলার ক্রয়-বিক্রয় করলে প্রতি ডলারে দেড় টাকা লাভ হয়। আমরা যদি দিনে ৫০০০ ডলার বিক্রি করি তবে আমরা ভাল মুনাফা পাই। কিন্তু নির্ধারিত মূল্যে ডলার না পাওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না।
একই তথ্য জানিয়েছেন গুলশান-২ এর স্ট্যান্ডার্ড ফরেন এক্সচেঞ্জের কর্মীরা। একই চিত্র দেখা গেছে গুলশান-১ এলাকায় একাধিক মানি চেঞ্জারের মধ্যে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় ডলার তদারকি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নগদ ডলার দেশে হাতে হাতে আসে, আর বিদেশে চলে যায়। নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন। কিন্তু ব্যাংকগুলোর কাছে এখনো নগদ ডলারের ভালো মজুদ রয়েছে। চাহিদা আগের তুলনায় কিছুটা বেশি। দাম এত বাড়ার কোনো কারণ নেই।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট শেষে ব্যাংকগুলোর কাছে নগদ মজুদ রয়েছে ৩২ মিলিয়ন ডলার, যা জুনে ছিল ৩৬ মিলিয়ন ডলার। গত বছর ব্যাংকের কাছে নগদ ডলারের রিজার্ভ 9 মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। সে সময় প্রতি ডলারের দাম উঠেছিল ১২২ টাকা।