লোহিত সাগরসহ আশপাশের এলাকা যু/দ্ধক্ষেত্রে পরিণত হওয়ায় বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বাংলাদেশের পোশাক খাত থেকে বাদ দিয়ে ইউরোপ-আমেরিকাগামী পণ্যবাহী জাহাজের বিকল্প রুটের অতিরিক্ত ১৫ দিনের জন্য পোশাক কারখানার খরচ বাড়ছে। একই সঙ্গে ক্রেতা কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের পোশাক মালিকদের ওপর কন্টেইনারপ্রতি বর্ধিত ভাড়া ১ হাজার ৫০০ ডলার চাপানোর চেষ্টা করছে।
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে লোহিত সাগরে ইয়েমেনের ইরানপন্থী হুথি বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সরাসরি সং/ঘর্ষ চলছে। এরই অংশ হিসেবে হাউথিরা লোহিত সাগর দিয়ে চলাচলকারী ইহুদি মালিকানাধীন পণ্যবাহী জাহাজে হা/মলা চালাচ্ছে। একইভাবে হুথিদের আস্তানায় সমানতালে হামলা চালাচ্ছে মার্কিন-ইসরায়েলের যৌথ বাহিনী। এ অবস্থায় লোহিত সাগরসহ পুরো এলাকায় যু/দ্ধাবস্থার কারণে নিরাপত্তার স্বার্থে জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম সোহেল বলেন, যখনই কোনো জাহাজ এ বন্দরে আসে তখনই আমরা চেষ্টা করি দ্রুততম সময়ে এ সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ শেষ করতে, যাতে জাহাজের সময় বাঁচে। যাতে জাহাজ সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় পৌঁছাতে পারে। তারপরও সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশে নিরাপত্তা বিভাগ রয়েছে। তারা সেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরামের চেয়ারম্যান এসএস আবু তৈয়ব বলেন,
লোহিত সাগরের বর্তমান পরিস্থিতি পুরো ব্যবসার উপর; পুরো রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই সাথে আমরা সময়ের স্বল্পতায় ভুগছি। সময়ের সাথে সাথে আমাদের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সমস্যাগুলো আমাদের জন্য খুবই বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
এদিকে ইউরোপ ও আমেরিকাগামী পণ্যবাহী জাহাজগুলোকে সংঘাতপূর্ণ এলাকা এড়িয়ে বিকল্প রুট নিতে হবে। ফলে সাড়ে তিন হাজার নটিক্যাল মাইল অতিরিক্ত যাত্রার কারণে জাহাজগুলো তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে ১৫ থেকে ২০ দিন অতিরিক্ত সময় নিচ্ছে। ইতিমধ্যে, প্রতিটি নেতৃস্থানীয় শিপিং লাইন বাংলাদেশ থেকে কন্টেইনার ভাড়া ৮০০ থেকে ১,৫০০ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছে।
ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে এমএসসি বাংলাদেশ লিমিটেডের হেড অব অপারেশন মো. আজমির হোসেন চৌধুরী বলেন, বিকল্প রুট ব্যবহার করে একটি জাহাজের পুরো যাত্রা শেষ করতে জ্বালানি বাবদ অতিরিক্ত ২ মিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য অপারেটিং খরচ আছে। তাই খরচ মেটাতে জাহাজগুলো ক্রমাগত ভাড়া বাড়াচ্ছে।
জাহাজের ভাড়া ক্রমাগত বৃদ্ধির বিষয়ে জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেডের হেড অব অপারেশনস মুনতাসির রুবায়েত বলেন, এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। আমাদের গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা অবদানের মার্জিন বা রেট নেগোসিয়েশনের ক্ষেত্রে খুবই দুর্বল হয়ে পড়বে।
লোহিত সাগর এড়িয়ে ইউরোপ-আমেরিকা পৌঁছাতে বাড়তি সময় লাগে, বাংলাদেশের পোশাক খাতে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৪ হাজারের বেশি কারখানায় বছরে ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য উৎপাদন হয়। যার ৬৫ শতাংশ পাঠানো হয় ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে। এক্ষেত্রে পণ্য পরিবহনের জন্য লোহিত সাগরের সমুদ্রপথ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু লোহিত সাগরে যু/দ্ধ পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।
বৈশ্বিক বাজারের চারটি মৌসুমে কারখানা পর্যায়ে নকশা পরিকল্পনা থেকে শোরুমে পৌঁছাতে কমপক্ষে আড়াই মাস সময় লাগে। কিন্তু এখন ক্রেতা কোম্পানি যাত্রার লিড টাইম কমিয়ে ১৫ দিন করেছে। বর্তমানে তৈরি পোশাকের চালানের এক মাস সময়ও পাচ্ছেন না পোশাক মালিকরা।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী বলেন,
আসন্ন মরসুমে, আমরা ১৫ দিন আগে প্রতিযোগিতায় আসছি। এখন আমাদের ভ্রমণপথের জন্য লিড টাইম ১৫ দিন কমাতে কাজ করতে হবে। সেক্ষেত্রে আমরা পরের মৌসুমের জন্য কম ক্রয় অর্ডার পাচ্ছি।
শিপিং লাইনের তথ্য অনুসারে, লোহিত সাগরের মাধ্যমে শিপিং বর্তমানে ৬৪ শতাংশ কমেছে, বিকল্প রুট, আফ্রিকার কেপ অফ গুড হোপ রুটের মাধ্যমে শিপিং কমপক্ষে ১৬৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে প্রতি জাহাজে জ্বালানি তেলের ব্যবহার বেড়েছে দেড়শ’ মেট্রিক টনের বেশি।