সরকারের পদত্যাগের একতরফা দাবিতে চলমান আন্দোলনকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে যেতে চায় বিএনপি। আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে দুই ধাপে সফল কর্মসূচির পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘিরে এ কৌশল নেওয়া হয়েছে। কিংস পার্টিতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় দলটির নেতা-কর্মীদের আস্থা বেড়েছে। তাই তারা এখন রাজপথে আন্দোলনে মনোযোগী। বিএনপি এখন আন্দোলন সফল করতে শক্তিসম্পন্ন দলকে মাঠে নামানোর চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে তারা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কথা ভাবছেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনাও চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে শিগগিরই একসঙ্গে মাঠে নামতে পারেন তারা। এছাড়া নির্বাচন বর্জনকারী ইসলামপন্থী ও বামপন্থীসহ সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি দল ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে ইতোমধ্যে সম্মত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানিয়েছেন, সমমনা দল ও জোটের আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনও চায়। কিন্তু গণতন্ত্র মঞ্চের দুই শরিক দল জামায়াতের সঙ্গে ঐক্যে আপত্তি জানিয়েছে। তবে তারা এও বলেছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে বিবেচনা করা যেতে পারে। ইসলামী আন্দোলনসহ অন্তত ১২টি ইসলামী দলের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। সরকারের পদত্যাগ ইস্যুতেও মাঠে শক্ত কর্মসূচি চান তারা। এ ছাড়া ১১টি বাম রাজনৈতিক দলের নেতারা জানিয়েছেন, তারা আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করবেন। একতরফা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে এসব দল ইতোমধ্যে নানা কর্মসূচি পালন করছে। নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে, সেই পরিস্থিতি সব বর্জনকারী দলকে এক মঞ্চে আনতে পারে। এছাড়া পেশাজীবীরা আন্দোলনে নামতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড। এ বিষয়ে কথা হয় শিক্ষক, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে। এছাড়া রোববার থেকে জেলার নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক শুরু করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দু-একদিনের মধ্যে সব সাংগঠনিক জেলার সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক শেষ হবে। সেখানে হাইকমান্ড আন্দোলন সফল করতে নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।
জামায়াতে ইসলামী বহু বছর ধরে বিএনপির সঙ্গে জোটে ছিল। ২০ দলীয় জোট ভেঙে জামায়াত একাই আলাদা কর্মসূচি পালন করছে। এর মধ্যে কিছু বিষয় দুই পক্ষের সম্পর্কের অবনতি ঘটায়। তবে বেশ কিছুদিন ধরেই সরকারের পদত্যাগের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন না করলে একই কর্মসূচি পালন করে আসছে জামায়াত। দলের একাধিক নেতা জানান, পনের বছর ধরে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী খু/ন-গু/ম, হামলা-মামলা-গ্রেফতারের শিকার হয়েছেন। তবে জামায়াতের কর্মীরাও কম নি/র্যাতিত নয়। অনেক নেতা-কর্মী খু/ন-গু/ম, হামলা-মামলা ও গ্রেফতারের শিকার। এখন চূড়ান্ত আন্দোলন চলছে। এখনই সময় পেছন ফিরে না তাকিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা চলছে। উভয় পক্ষই ইতিবাচক। সামনে প্রতিফলিত হবে।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েব ডক্টর সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, দুই দলের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। হয়ে গেলে বাস্তবে দেখা যাবে।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকা জেলা সদরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের কর্মসূচি রয়েছে। এতে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া গু/ম, খু/ন, গু/ম এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার নেতাকর্মী ও নাগরিকদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।। এর মাধ্যমে তারা সরকারের নি/পীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি তুলে ধরতে চায়। বিএনপি ও জামায়াতের ওই দিনের কর্মসূচিকে একত্রিত করা নিয়েও চলছে আলোচনা। তবে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিএনপি নেতারা জানান, আন্দোলন চূড়ান্ত করতে দুই দফা পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। গত রোববার থেকে প্রথম ধাপের আন্দোলন শুরু হয়েছে। যা চলবে আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তফসিল অনুযায়ী আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বর। হরতাল-অবরোধ ছাড়াও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের ব্যানারে নানা কর্মসূচি পালন করবে দলটি। দ্বিতীয় ধাপের আন্দোলন ১৮ ডিসেম্বর শুরু হবে এবং চলবে ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন পর্যন্ত। এই পর্বের আন্দোলন হবে ‘ডু অর ডাই’ মিশন নিয়ে। এজন্য দলের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে মাঠে নামানোর কৌশল নেওয়া হয়েছে। ভোটের সাত থেকে ১০ দিন আগে চূড়ান্ত আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচি শুরু হবে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর নেতারা মনে করছেন, এ কারণে নির্বাচনে সং/ঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।