সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় উঠে আসা খুলনার রহিমা বেগমকে পুলিশের একটি দল অবশেষে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। রহিমা বেগম নিজেকে আত্মগোপনে রেখেছিলেন। ফরিদপুরের একটি বাড়ি থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উদ্ধার করে পুলিশ। জানা গিয়েছে যে, জমি সংক্রান্ত বিষয়ে বিরোধের কারণে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে চেয়েছিলেন তিনি, যার কারণে তিনি কাউকে কিছু না জনিয়ে আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন। ২৮ দিন আত্মগোপনে থাকা কালীন তিনি কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করেননি।
এরপর শনিবার রাত সোয়া ১১টার দিকে ফরিদপুরের বোয়ালমারী ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম জানান, শনিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে রহিমা বেগমকে উদ্ধার করে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এরপর রাত ২টার দিকে তাকে দৌলতপুর থানায় নিয়ে আসা হয়।
এরপর জনমনে প্রশ্ন জাগে, রহিমা খাতুন কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে কীভাবে গেলেন, এতদিন কোথায় ছিলেন? বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা। এ বিষয়ে কথা বলেছেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন।
তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারে রহিমা বেগম ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে রয়েছে। অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে তারা বিষয়টি নিশ্চিত হন। এরপর বেলা সোয়া ১১টার দিকে দৌলতপুর জোনের এডিসি আবদুর রহমান ও দৌলতপুর থানার ওসি মো. নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ওই বাড়িতে পৌঁছায়।
পুলিশ দেখে, রহিমা ওই বাড়িতে বসে দুই মহিলার সঙ্গে কথা বলছে। সেখানে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তিনি কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি। তবে ওই বাড়ির বাসিন্দারা জিজ্ঞাসাবাদে জানান, রহিমা বেশ কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রাম ও মোকসেদপুরে ছিলেন বলে জানান। এরপর ১৭ আগস্ট বোয়ালমারীতে কুদ্দুসের বাসায় যান। তখন তার কাছে একটি ব্যাগে ২ প্যাকেট বিস্কুট, কিছু কাগজপত্র এবং কিছু কাপড় ছিল।
জানা যায়, কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে থাকা রহিমা কয়েক বছর আগে খুলনার সোনালী জুটমিলে কাজ করতেন। তখন রহিমা বেগমের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। পরে তিনি বাউলমারীতে চলে যান। কিছুদিন আগে রহিমার ছেলে একবার কুদ্দুসের বাসায় বেড়াতে যান।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার জানান, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে রহিমা বেগমকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার না করায় তাকে ট্র্যাক করা সম্ভব হয়নি। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে উদ্ধার করা হয়।
রহিমা অপহরণ মামলার তদন্ত দৌলতপুর থানা থেকে পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়েছে। এরপরও খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ মামলার ছায়া তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। পিবিআই তদন্ত করবে কিভাবে রহিমা বেগম নিখোঁজ হলেন এবং কোথায় ছিলেন? তবে কুদ্দুসের ছেলে আলামিন, কুদ্দুসের স্ত্রী ও ভাইয়ের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে বলে জানান মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন।
রহিমা বেগম কি সত্যিই অপহৃত হয়েছিলেন, নাকি তিনি নিজেই উদ্দেশ্যগত কারনে নিজেকে আত্মগোপনে রেখেছিলেন। এমন প্রশ্ন করা হলে উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং এই প্রশ্নের উত্তর তদন্তসাপেক্ষে জানা গেলে তারপর আমরা দিতে পারবো। অতএব এ বিষয়ে এখন কিছু বলা যাচ্ছে না।