ভারতের সিকিমের তিস্তা নদীতে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার রাতভর ভারী বৃষ্টির পর উত্তর সিকিমের লোনাদ হ্রদ উপচে পড়ে। এ কারণে অতিরিক্ত পানি তিস্তা নদীতে প্রবাহিত হওয়ায় পানির উচ্চতা হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তিস্তা নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করায় বন্যার আশঙ্কা বেড়েছে।
জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ড্যাম ভেঙে যাওয়ায় জলপাইগুড়ির তিস্তায় দুই কূল ছাপিয়ে বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সমতলে। বিপদ এড়াতে নদীর তীরবর্তী বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গ সেচ দফতর তিস্তার সংরক্ষিত ও অরক্ষিত উভয় তীরে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। পানির চাপ মোকাবেলায় বুধবার সকাল ৭টায় তিস্তার গজলডোবা ব্যারেজ থেকে বাংলাদেশে রেকর্ড পরিমাণ পানি ছেড়েছে ভারত। সকাল ৭টায় ২ লাখ ৪৮ হাজার ১২০ কিউসেক পানি ছেড়েছে ভারত। এরপর সকাল ৯টায় ছেড়ে আসা পানির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৫২ হাজার ৫৩৫ কিউসেক।
আগের সব রেকর্ড ভেঙে ভারত সকাল ১০টায় গজলডোবার সব গেট খুলে ঘণ্টায় ২ লাখ ৯১ হাজার ৪৮৭ কিউসেক পানি ছাড়তে শুরু করেছে। গত কয়েক বছরে বিশেষ করে এ বছর এ ধরনের পানি ছাড়ার ঘটনা নজিরবিহীন।
পশ্চিমবঙ্গ সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী কয়েক ঘণ্টায় যে পরিমাণ জল ছেড়ে দেওয়া হবে প্রায় একই রকম থাকবে। এ ঘটনার জেরে বুধবার বিকেল থেকে তিস্তা পাড়ের মানুষ ভয়াবহ বন্যার মুখে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সিকিমের চুংথাং হ্রদ উপচেপড়ায় তিস্তা নদীতে পানি বেড়েছে। গজলডোবা, দোমোহনী, মেখলিগঞ্জ ও ঘিশের মতো নিম্নাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এসব এলাকার লোকজনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
আকস্মিক বন্যার পরিপ্রেক্ষিতে সিকিম প্রশাসন বাসিন্দাদের জন্য উচ্চ সতর্কতা জারি করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা যায়, রাস্তাটি পানিতে ভেসে গেছে। নদীতে বন্যার মতো অবস্থা।
আকস্মিক বন্যায় প্লাবিত হয়েছে পাহাড়ি গ্রাম। পানির স্তর উঠে গেছে একটি দোতলা বাড়ি পর্যন্ত। তিস্তা নদীতে ডুবে গেছে সেনাবাহিনীর ৪১টি গাড়ি। নিখোঁজ সেনা সদস্যরা ভেসে গেছে নাকি খাদে পড়ে গেছে তা জানা যায়নি। এরই মধ্যে আবার ধস শুরু হয়েছে।
এএদিকে, সিকিমে, তিস্তা নদীতে আকস্মিক বন্যায় ২৩ সেনা সদস্য নিখোঁজ হয়েছেন। তাদের সন্ধানে ব্যাপক তল্লাশি চলছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড জানিয়েছে, লাচেন উপত্যকায় কিছু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চুংথাং বাঁধ থেকে পানি ছাড়ার ফলে হঠাৎ করে পানির স্তর ১৫ থেকে ২০ ফুট উঁচুতে প্লাবিত হয়।