Thursday , September 19 2024
Breaking News
Home / Countrywide / হঠাৎ কেন ভিন্ন কথা বলছেন খুলনার সেই আলোচিত তরুণী

হঠাৎ কেন ভিন্ন কথা বলছেন খুলনার সেই আলোচিত তরুণী

গুরুতর ধ”/র্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত তরুণী কেন ভিন্ন সুরে কথা বললেন? তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরীক্ষা করা হয়, ধ”/র্ষণের অভিযোগে জবানবন্দিও দেন তিনি। পরদিন হাসপাতাল থেকে ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ১০-১২ জনের একটি দল জোর করে তাকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। তারপর যখন সে জনসমক্ষে আসে- তখন তিনি বলেন যে ধ”/র্ষণের অভিযোগ সত্য নয়, এমনকি তাকে অপহরণও করা হয়নি। খুলনার তরুণীটির সাথে আসলে কী হয়েছিল? কী হতে পারত, আর কী হলো?

গত শনিবার থেকে খুলনার এই তরুণীকে নিয়ে কথা হচ্ছে। ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গাজী এজাজ আহমেদের বিরুদ্ধে ধ”/র্ষণ ও অপহরণের অভিযোগ ছিল তার। ওই তরুণী জানান, বিয়ের প্রতিশ্রুতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই এজাজ তার সঙ্গে বারবার মেলামেশা করেছেন এজাজ। বিয়ের জন্য চাপ দিলে গত শনিবার রাতে তাকে তার ব্যক্তিগত অফিসে ডেকে নিয়ে পুনরায় ধ”/র্ষণ করে।

এজাজের ব্যক্তিগত কার্যালয়ের পরের দৃশ্যে ওই তরুণীকে দেখা যায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) । শনিবার বেলা ১১টার দিকে তাকে ওসিসিতে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরের দিন তাকে এবং তার মাকে অপহরণ করা হয়।

সে সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার একটি প্রতিনিধিদল। সংস্থাটির খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মোমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, ধর্ষণের খবর শুনে তরুণীকে সহায়তা করতে তারা হাসপাতালে গিয়েছিলেন। তরুণীকে জোর করে গাড়িতে ওঠাতে দেখে ছবি তুলতে গেলে রুদাঘরা ইউপি চেয়ারম্যান তৌহিদুজ্জামান কয়েকজনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছেন। তিনি ধর্ষণে অভিযুক্ত এজাজের চাচাতো ভাই। সে সময় মানবাধিকার সংস্থার সদস্যদেরও মারধর করা হয়েছে।

ধ”র্ষণের অভিযোগের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনার নাটকীয় মোড় দেখা যায়। রোববার বেলা সোয়া ১১টায় ওই তরুণীকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সোনাডাঙ্গা থানায় হাজির করা হয়। তাকে ধ”র্ষণ করা হয়নি দাবি করে সে সময় সাংবাদিকদের বলেন, তাকে অপহরণও করা হয়নি। যশোরের কেশবপুরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। এরপর পুলিশ খবর দিলে থানায় এসেছেন। এরপরই তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ। আমি কখন, কোথায়, কীভাবে গেলাম জানি না।’

কেন তাকে হাসপাতালে নেয়া হলো- সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বলে জানান। অতিরিক্ত প্রশ্ন করলে তিনি ‘পাগল’ হয়ে যাবেন।

যে তরুণীকে নিয়ে এত ঘটনা, তার বছর ২৪ বয়স। এই বয়সে বিশ্বাস ও ভালোবাসায় পৃথিবীকে জাদু করে তারুণ্য। অথচ এই তরুণীর পায়ের নিচে অবিশ্বাসের কী পিচ্ছিল দেয়াল গড়ে উঠল! প্রথমে তিনি বললেন, ভালোবেসেছিলেন- বিনিময়ে বিশ্বাসঘাতকতা আর ধর্ষণ-অপহরণের মতো ক্লেদাক্ত বিষতীর পেলেন। তারপর যখন বললেন তিনি ধর্ষণ বা অপহরণের শিকার নন, তখন বিশ্বাস শব্দটিই কি প্রহসনের অট্ট হাসি হাসল না? হয়ত সমুখের জনতা বিরক্ত হলেন, কেউ কেউ ভাবলেন- ক্ষমতার খেলায় এ দেশে কতজনের কত সম্ভ্রম, কত প্রেম, কত সত্য চাপা পড়ে গুমরে কাঁদে! এ আর নতুন কী? কিন্তু ঘটনার ঘনঘটায় ভুলে বা অ-ভুলে কত কত মানুষের ভেতরের মানুষটি যে ধীরলয়ে ঝরে পড়ে এ দেশে, জনতার ভিড়ে দাঁড়িয়ে হাহাকার আর আত্ম-প্রবঞ্চনায় বারবার মরে যাওয়ার তালিকায় যোগ দেয় কতজন, কেউ কি তা লক্ষ্য করে?

অন্যায়ের উপর নীরব থাকলে মানুষ ভিতরে ভিতরে মা”রা যায়। মানুষ তখনই নীরব থাকে যখন সে আত্মপ্রতারণার পাপে সততা ও প্রতিবাদের সাহস হারিয়ে ফেলে। এবং আইনের শাসন শিথিল হলে আর এই পথে তখনই ধাবিত হওয়া সহজ,

মেয়েটির মাইক্রো বায়োলজিক্যাল রিপোর্ট পেতে এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন সময় লাগবে। ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ফলাফল পেতে এক বা দুই মাস সময় লাগতে পারে। এদিকে, ওই তরুণী এখনো (মঙ্গলবার সকাল ১০টা) ধ”/র্ষণ বা অপহরণের অভিযোগে কোনো মামলা করেননি।

অনেকেই বলছেন, ক্ষমতাবানদের চাপে পরাজিত হয়েছেন খুলনার এই মেয়ে। তাকে ভয় দেখিয়ে বা প্রলোভন দিয়ে ম্যানেজ করা হয়েছে। তাই এখন মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। প্রশাসনের উচিত নিরপেক্ষ তদন্ত করা। মেয়েটিকে নিরাপদ হেফাজতে রাখা এবং কাউন্সেলিং করা।তাকে মানসিকভাবে স্থির হতে সাহায্য করে বক্তব্য নেওয়া।

ভয়ে চুপ হয়ে যাওয়া বা প্রলোভনের দ্বারা পরিচালিত হওয়া এই দেশে অস্বাভাবিক নয়। এতে করে বারবার মানসিকভাবে মা”রা যাওয়া মানুষের ভিড় বাড়ছে। দেশ আত্মহননের হিসাব রাখছে। কিন্তু আত্মপ্রবঞ্চনা, ভয় ও সাহসের অভাবে যারা মানসিকভাবে মা”রা গেছে তাদের পরিসংখ্যান কেউ রাখে না। এই পদ্ধতিগত ভাইরাস নিয়ে কেউ কথা বলে না।

ওই তরুণী জানান, তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। হয়তো কেউ তার মনের খোঁজও করেনি। কিন্তু যে প্রশ্নটি এখনো শিথিল হয়নি তা হলো ওই তরুণী কি আসলেই নির্যা’তনের শিকার হননি? তার বিশ্বাস ও ভালোবাসা কি কেউ চূর্ণ করেনি? বুকে আগুন জ্বালিয়ে সব বিদ্বেষ গিলে ফেলতে তাকে সত্যিই কেউ বাধ্য করেনি?

About bisso Jit

Check Also

‘আমি তোমাকে ছাড়বো না, শেখ হাসিনা কাউকে ছাড়ে না’: মুখ খুললেন সোহেল তাজ

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ দায়িত্ব নেওয়ার পাঁচ মাস পর ২০০৯ সালে পদত্যাগ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *