বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে একটা সময় অসংখ্য চিত্রনায়িকা ছিল। তবে অনেক চিত্রনায়িকা মাত্র কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করে হারিয়ে গেছেন। এমনকি কেউ কেউ একেবারে অভিনয় জগত থেকে বিদায় নিয়েছেন। এই সকল চিত্রনায়িকার কেউ দেশে থেকেন অবার কেউবা বিদেশে পারি দিয়েছেন। তবে তারা অভিনয় জগত থেকে হারিয়ে গেলেও তাদের কে নিয়ে প্রায় সময় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ পায়। এবার তেমনি কয়েকজন চিত্রনায়িকার সম্পর্কে তথ্য সংবাদ উঠে এসেছে যারা একটা সময় বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে জনপ্রিয়তার সঙ্গে সিনেমায় অভিননয় করেছেন।
এক ছবির নায়িকা জেবা
১৯৯৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হৃদয়ের আয়না’ ছবিটির কথা হয়তো অনেকেরই মনে নেই। ছবিটিতে তখনকার হিট নায়ক রিয়াজের বিপরীতে অভিনয় করেন নবাগত জেবা। মিষ্টি প্রেমের এ ছবিতে ‘হৃদয়’ চরিত্রে রিয়াজ এবং ‘আয়না’ চরিত্রে অভিনয় করে বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন জেবা। ওই এক ছবি করেই হারিয়ে যান এই সম্ভাবনাময়ী নায়িকা। আর কোনো ছবিতে দেখা যায়নি তাকে।
সব ছেড়ে সুইডেনে তামান্না
১৯৯৫ সালে আফজাল হোসেনের নির্দেশনায় স্টারশিপের একটি বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে কাজ করার মধ্য দিয়ে মিডিয়াতে অভিষেক ঘটে চিত্রনায়িকা তামান্নার। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র সাইফুল আজম কাশেম পরিচালিত ‘ত্যাজ্যপুত্র। এতে তার নায়ক ছিলেন বাপ্পারাজ। প্রথম ছবিতেই নজর কেড়েছিল তার অভিনয়। এরপর শহিদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ‘ভন্ড’ কুংফু হিরো রুবেলের বিপরীতে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান তামান্না। তার অভিনীত শেষ ছবি ২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘পাগল তোর জন্য রে’। এরপর হঠাৎই দেশ ছেড়ে, অভিনয় ছেড়ে সুইডেনে পাড়ি জমান নায়িকা। স্বামী নিয়ে স্থায়ীভাবে সেখানেই বসবাস করছেন।
সাফল্য ধরে রাখতে পারেননি রত্না
২০০২ সালে ক্লাস সেভেনে পড়া অবস্থায় ‘কেন ভালোবাসলাম’ ছবির মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে নাম লেখান রত্না। নায়ক ছিলেন ফেরদৌস। একই বছর কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘ইতিহাস’ ছবিতে কাজী মারুফের বিপরীতে অভিনয় করে সবার নজরে আসেন এই নায়িকা। প্রায় ৫০টির মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। ২০১৫ সালে হঠাৎই ধস নামে রত্নার ক্যারিয়ারে। সেই ধসেই হারিয়ে যান সম্ভাবনাময় এই নায়িকা। এরপর ছোট পর্দায় অভিনয় করে টিকে থাকতে চেয়েছিলেন। সেটাও পারেননি।
‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’ নেই রাভিনা
নায়ক রিয়াজের ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট ধরা হয় ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’ ছবিটিকে। ১৯৯৭ সালে মহম্মদ হান্নান পরিচালিত ব্লকবাস্টার এ ছবিটিতে রিয়াজের বিপরীতে অভিনয় করে নজর কেড়েছিলেন নবাগত রাভিনা। পরবর্তীতে রিয়াজের সঙ্গে আরও একটি ছবিতে তিনি অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু সেটি ফ্লপ হয়। এরপর আর অভিনয়ে দেখা মেলেনি রাভিনার। এই নায়িকা কোথায় আছেন, তাও কেউ জানে না।
শিমলার পরিচয় এখনো ‘ম্যাডাম ফুলি’
বাংলা চলচ্চিত্রের আরেক সম্ভাবনাময় নায়িকা ছিলেন শিমলা। যিনি অভিষেক ছবিতেই ‘ফুলি’ এবং ‘শিমলা’ নামের দুটি চরিত্রে অভিনয় করে জিতে নিয়েছিলেন ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’। পরিচালক শহিদুল ইসলাম খোকনের ১৯৯৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ওই ছবিতে শিমলার অভিনয় দেখে অনেক চলচ্চিত্র বোদ্ধাই তাকে নিয়ে নানা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আর আলো ছড়াতে পারেননি এ নায়িকা। বরং ছড়িয়েছেন সমালোচনা।
২০১৫ সালে ‘নিষিদ্ধ প্রেমের গল্প’ নামের একটি ছবিতে ১৫ বছরের এক বালকের নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করে সমালোচিত হন শিমলা। ছবিতে ওই বালকের সঙ্গে একাধিক যৌনদৃশ্যে দেখা গেছে তাকে। বিতর্কিত ওই ছবিটি এখনো মুক্তি পায়নি। ‘ম্যাডাম ফুলি’র পর আর কোনো ছবিতে সাফল্যও পাননি এই নায়িকা।
সব ছেড়ে প্রবাসী ইরিন জামান
অভিনেত্রী ইরিন জামান অভিনয় জগতে আসেন ১৯৯৯ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘অনন্ত ভালোবাসা’ছবির মাধ্যমে। নায়ক ছিলেন বর্তমান সুপারস্টার শাকিব খান। দুজনেরই প্রথম ছবি ছিল এটি। ওই ছবিতেই যা একটু নজর কেড়েছিলেন চিত্রনায়িকা মৌসুমীর ছোট বোন ইরিন জামান। এরপর বেশ কয়েকটি ছবিতে তাকে দেখা গেলেও সফলতা পাননি। প্রথম ছবির নায়ক শাকিব চলচ্চিত্রে রাজ করলেও হারিয়ে গেছেন ইরিন। স্বামী-সন্তান নিয়ে বর্তমানে তিনি বাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায়।
আলো ছড়িয়ে পৃথিবীই ছাড়েন অন্তরা
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে শিশুশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্র জগতে এসেছিলেন অন্তরা। ঐতিহাসিক ঘটনার ওপর নির্মিত ‘সিরাজউদ্দৌলা’ ছবিতে প্রবীর মিত্রের মেয়ের ভূমিকায় প্রথম অভিনয় করেন তিনি। বড় হয়ে ‘পাগল মন’ ছবিতে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেও ব্যাপক আলোচনায় আসেন অন্তরা। এরপর তিনি আরও বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন। ২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারি ম”স্তি”ষ্কে র’ক্ত’ক্ষ’র’ণ’জ’নি’ত কারণে হঠাৎ তার মৃ”ত্যু হয়। তবে অন্তরাকে শে’ষ করা হয় বলে দাবি করেন তার পরিবার। চোখের আড়াল হলেও মনের আড়াল হননি অন্তরা। আজও তিনি রয়ে গেছেন বহু দর্শকের অন্তরে।
মান্নার মৃ”ত্যু”তে হারিয়ে যান নায়িকা একা
অভিনয় দিয়ে একসময় বেশ সাড়া ফেলেছিলেন চিত্রনায়িকা একা। নামী পরিচালক কাজী হায়াতের ‘তেজী’ এবং ‘ধর’সহ বেশ কয়েকটি ছবিতে নায়ক মান্নার বিপরীতে তাকে দেখা গিয়েছিল। সে সময় এ জুটিকে বেশ গ্রহণ করেছিল দর্শক। কিন্তু নায়ক মান্না মারা যাওয়ার পর একাধিক নায়কের সঙ্গে জুটি বেঁধেও অভিনয় করলেও নিজেকে আর মেলে ধরতে পারেননি একা। দীর্ঘ দিন তিনি অভিনয় থেকে দূরে। ছোট-বড় কোনো পর্দাতেই তার দেখা নেই।
উল্লেখ্য, এই চিত্রনায়িকারা একটা সময় সিনেমার কাজ নিয়েই বেশি ব্যস্তা থাকতেন। তবে পারিবারিক কারণে বা ব্যক্তিগত কারণে অনেকে অভিনয় থেকে দূরে সরে গেছেন। অনেকে দেশের বাইরে গিয়ে তাদের সংসার জীবন নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। তবে এরপরও তাদের কে নিয়ে ভক্তদের মনে এখনো নানা রকম প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। ভক্তদের মনে এখনো প্রশ্ন দেখা দেয় তারা কি আর অভিনয়ে ফিরবেন না। তবে নানা কারণে তারা হয়তো আর অভিনয়ে ফিরতে পারবেন না। কিন্তু তাদের কাজের মাধ্যমে তারা ভক্তদের মনে রয়ে যাবেন।