Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / হঠাৎ আন্দোলন নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নিল বিএনপি, জানা গেল কারণ

হঠাৎ আন্দোলন নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নিল বিএনপি, জানা গেল কারণ

চলমান আন্দোলন জোরদার করতে চায় বিএনপি। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আন্দোলনের তীব্রতা বাড়াতে রাজপথে আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীদের একযোগে সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে দলটি।

নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে ইতোমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের এলাকায় যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকমান্ড। মামলা-হামলা-গ্রেফতারের জন্য সব সাংগঠনিক বিভাগে আইনজীবী, চিকিৎসক ও নেতাদের সমন্বয়ে সেল গঠন করা হয়েছে।

জামায়াতে ইসলামী ও যুগপৎ আন্দোলন নিয়ে সমমনা রাজনৈতিক জোট ও দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে আলোচনা শুরু হয়েছে। আন্দোলন সফল করতে করণীয় নিয়ে বৈঠক করছেন নেতারা। বুধবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার রাতেও বৈঠক করেন সিনিয়র নেতারা। উভয় সভা ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন কৌশল নির্ধারণ করা হয়। উভয় বৈঠকের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে চতুর্থ দফায় রোববার সকাল ৬টা থেকে আবারও শুরু হচ্ছে দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি। যা শেষ হবে মঙ্গলবার সকাল ৬টায়। এরপর একদিন বিরতি দিয়ে আবারও একই কর্মসূচি দেওয়ার কথা রয়েছে। যা একটানা হতে পারে।

নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা জানাতে বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করেন নির্বাচন কমিশনাররা। পরে বঙ্গভবনের সামনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, যে কোনো মূল্যে নির্ধারিত সময়েই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে। শিগগিরই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।

বিএনপি নেতারা জানান, নির্বাচন কমিশন সূত্রে তারা জানতে পেরেছেন, ১৪ বা ১৬ নভেম্বরের মধ্যে যে কোনো সময় নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করতে পারে। আন্দোলনের তীব্রতা কবে বাড়বে তার ওপর এই তফসিল ঘোষণা নির্ভর করবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার ও বৃহস্পতিবার রাতে উভয় বৈঠকে চলমান আন্দোলনের কৌশল বিশ্লেষণ করেন দলের নীতিনির্ধারকরা। তাদের বিশ্লেষণে জানা যায়, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সরকার পরিকল্পিত ‘ক্র্যাকডাউন’ চলছে। এ অবস্থায় অবরোধ কর্মসূচির মাধ্যমে ঢাকাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করাই ছিল দলের মূল লক্ষ্য। তারা সেখানে নিজেদের সফল মনে করে। দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা জানান, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ঢাকাসহ সারাদেশের নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার এড়াতে বাড়ি-ঘর ছেড়েছেন। দলের মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির তিন সদস্যসহ কেন্দ্রীয় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

নেতারা মনে করেন, সরকার একপক্ষের আন্দোলনে সফল না হলে নির্বাচনের আগে গ্রেপ্তার নেতাদের মুক্তি হতে পারবেন না। বরং বিভিন্ন মামলায় একের পর এক জেলে যেতে হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ সব নেতাকর্মীকে।

সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের পদত্যাগসহ একতরফা দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত থাকলে ক্ষমতাসীন সরকারের ওপর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও গণতান্ত্রিক বিশ্বের চাপ বাড়বে বলে মনে করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। ফলে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন সরকারের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে। আওয়ামী লীগ চিরকাল ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন দেখে। নেতাকর্মীদের হা/মলা, মাম/লা, গ্রেফতার ও নি/র্যাতন করে তারা চিরকাল ক্ষমতায় থাকবে বলে মনে করেছিল। কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম হলো স্বৈরাচারীরা যে অ/স্ত্র দিয়ে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রিয় জনগণকে আক্রমণ করে তাদেরই লক্ষ্য। সরকারের আশা জনগণের পূরণ হবে না। জনগণের আন্দোলন সফল হবে।

সূত্র জানায়, বিশেষ করে ঢাকা মহানগর বিএনপির হাইকমান্ড বিশেষ কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে। ইতিমধ্যেই আন্দোলন জোরদার করতে মহানগরের উত্তর ও দক্ষিণকে বিভিন্ন জোনে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি জোনে কেন্দ্রীয় ও মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

তবে এসব জোনে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন সংসদীয় এলাকার সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের (কেন্দ্রীয় নেতা) নিজ নিজ এলাকার নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন জোরদার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম অঞ্চলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, তাকে ঢাকা মহানগরীর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করতে বলা হয়েছে। আজ থেকে নিজ সংসদীয় এলাকায় আন্দোলনে নামবেন তিনি।

একই কথা বলেছেন রাজশাহী অঞ্চলের সাবেক এক সংসদ সদস্যও। তিনি বলেন, নির্বাচনী এলাকায় আন্দোলন জোরদার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী নি/হতদের স্মরণে সারাদেশের মসজিদে দোয়া ও মিলাদ কর্মসূচি পালন করেছে। আজ তাদের কোনো কর্মসূচি নেই। অবরোধ কর্মসূচি গতকাল থেকে শুরু হওয়া অবরোধ কর্মসূচি সফল হয়েছে এবং তৃণমূলকে নানা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

হরতাল শেষে টানা ৩ দিন দেশব্যাপী অবরোধ করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। পরবর্তীতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্বে পৃথকভাবে ৪৮ ঘণ্টার একই কর্মসূচি পালন করা হয়। ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের তৃতীয় ধাপ শুক্রবার সকাল ৬টায় শেষ হয়।

রোববার থেকে শুরু হওয়া অবরোধ কর্মসূচি সম্পর্কে রুহুল কবির রিজভী বলেন, সকাল ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি শুরু হবে। গণতন্ত্র, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে বিশ্বাসী বাংলাদেশের গণতন্ত্রপন্থী জনগণ এই অবরোধ কর্মসূচিকে সফল করবে। সারা বাংলাদেশের সড়ক-মহাসড়কসহ সব জায়গায় এটি প্রদর্শিত হবে। সরকারের সকল জুলুম-নি/র্যাতন-নি/পীড়ন প্রতিহত করে তারা রাজপথে থাকবে।

গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপিসহ একযোগে আন্দোলনে রাজনৈতিক দল ও জোট অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও একই কর্মসূচি পালন করবে।

দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম বলেন, “সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে তাদের পক্ষে ক্ষমতায় আসা সম্ভব নয়। গণতন্ত্রপন্থী দেশপ্রেমিকরা সরকারের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে। তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিরোধী দলের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছে। জনগণের ন্যায্য দাবি মেনে নিতে হবে। পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। অন্যথায় যে কোনো পরিস্থিতির জন্য সরকার দায়ী থাকবে।’

About Babu

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *