না/শকতার পুরনো বিভিন্ন মামলায় গত তিন মাসে রাজধানীতে বিএনপির তিন শতাধিক নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো মামলার বিচার হচ্ছে। এসব মামলায় বিএনপির অনেক ফ্রন্ট লাইনের নেতাও সাজা পাচ্ছেন। কয়েকটি মামলায় জামায়াতের নেতা-কর্মীদের সাজাও হয়েছে। চলতি মাসে ঢাকায় আড়াই শতাধিক নেতাকর্মীকে সাজা দেওয়া হয়েছে। গত সোমবার ঢাকা ও রংপুরে একই দিনে বিএনপির ১২২ নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে রংপুরের একটি মামলায় রংপুর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ উন নবী ডনসহ পাঁচজনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।
সম্প্রতি সাজাপ্রাপ্ত নেতাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. শাহজাহান, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আহসান হাবিব লিংকন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল আলীম, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাবেক সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনামুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রাজীব আহসান ও হাবিবুর রশীদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান প্রমুখ।
বিএনপি অভিযোগ করছে, আওয়ামী লীগ শাসনামলে পুরনো মামলায় এখন নির্বাচনকে সামনে রেখে নেতা-কর্মীদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা নির্বাচনের সময় বাইরে থাকতে না পারে। বিএনপি আরও অভিযোগ করে, যথাযথভাবে সাক্ষ্য গ্রহণ ও পর্যাপ্ত সাক্ষী না দিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত আদালতে বসে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।
বিএনপি নেতাকর্মীদের পক্ষে বিভিন্ন মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী জয়নুল আবেদীন মেজবা দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমরা মনে করি এই সাজাগুলো আনুষ্ঠানিক। সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আদালত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করে সাজা দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই, পর্যাপ্ত সাক্ষী নেই, সাজা দেওয়া হয় শুধুমাত্র পুলিশের সাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে; যা অবৈধ।
এই আইনজীবী বলেন, ১০-১২ বছর আগের মামলায় এতদিন সাক্ষী আসেনি। গত দুই-তিন মাসে মামলার তালিকা তৈরি করে সাক্ষী হাজির করা হচ্ছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা অবশ্য বলছেন, দীর্ঘদিনের মামলার কারণে দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে। উপযুক্ত প্রমাণ সহ রায় দেওয়া হয়। অনেকে খালাস পাচ্ছেন। আদালত স্বাধীন। তাদের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে না।
ঢাকা মহানগর পিপি আবদুল্লাহ আবু বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাগুলো করা হয় এবং আইনি প্রক্রিয়ায় মামলাগুলো সুষ্ঠুভাবে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। যেসব মামলায় সাক্ষীদের সাক্ষ্যে অপরাধ প্রমাণিত হয়, সেসব মামলায় আদালত সাজা দেন। অনেক নেতা-কর্মী খালাস পাচ্ছেন। সরকারের চাপ থাকলে কোনো আসামি খালাস পেত না। তাই বিএনপির অভিযোগ সঠিক নয়। আদালতের ওপর কোনো চাপ নেই।
তবে ঢাকার আদালতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ১০-১২ বছর আগের মামলায় বছরের পর বছর সাক্ষী হাজির না হলেও চলতি বছরের শুরু থেকেই হঠাৎ করে সাক্ষী হাজির হচ্ছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, রায়ের দিন আসামিরা উপস্থিত নেই। পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় পুলিশ যেকোনো সময় তাদের গ্রেপ্তার করতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
বিএনপি নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, এ পর্যন্ত কতজনের সাজা হয়েছে তা তিনি জানেন না। তবে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে গ্রেফতারের পাশাপাশি নেতাকর্মীদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।
অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, বিএনপির সামনের সারির নেতাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো নির্বাচনী সাজা হচ্ছে যাতে তারা আন্দোলন করতে না পারে এবং আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে। সরকার বিচার বিভাগকে ব্যবহার করছে। এভাবে চলতে থাকলে বিচার বিভাগ তার স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারবে না। তিনি বলেন, এসব মামলার অধিকাংশই ‘নিখোঁজ’।
বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের সাজা আগামী নির্বাচনে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। তিনি বলেন, যা শুনেছি, বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। সেসব মামলায় সাজা হলে বিচার বিভাগ দুর্বল হবে এবং প্রশ্নবিদ্ধ হবে।